বাগদায় বিজেপির এর C.A.A ক্যাম্প পাল্টা তৃণমলের নিঃশর্ত নাগরিকের দাবীতে ক্যাম্প ,উঠে আসছে অনেক প্রশ্ন –
-ওয়েব ডেস্ক :- গত ২৪ জুলাই বাগদায় বিজেপি তরফে সিএএ নিয়ে একটি শিবিরের আয়োজন করা হয়, যা মাতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য নাগরিকত্ব আবেদন সহজ করার উদ্দেশ্যে।
– টিএমসি এই শিবিরের বিরোধিতা করে, দাবি করে যে ভোটার কার্ডধারীরা ইতিমধ্যেই নাগরিক, তাই সিএএ আবেদনের প্রয়োজন নেই।
– বিজেপি এবং টিএমসি-র মধ্যে এই বিষয়ে তীব্র বিতর্ক রয়েছে, যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তুলেছে।
– কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের মাতুয়াদের দেওয়া আইডেন্টিটি কার্ড পুণেতে গ্রেপ্তারের সময় মহারাষ্ট্র পুলিশ গ্রহণ করেনি, যা টিএমসি বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
– এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সিএএ-র বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ প্রকাশ করে, যা সংবেদনশীল এবং বিতর্কিত বিষয়।
### বিজেপি এবং টিএমসি-র দৃষ্টিকোণ
বিজেপি দাবি করে যে সিএএ শিবির মাতুয়া প্রবাসীদের নাগরিকত্ব লাভে সহায়তা করবে, যা বাগদায় বড় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। অন্যদিকে, টিএমসি এই শিবিরকে “রাজনৈতিক চাল” বলে অভিহিত করেছে, দাবি করে যে এটি সাধারণ মানুষকে ভুল ধারণা দিচ্ছে।
### শান্তনু ঠাকুর এবং মাতুয়া সম্প্রদায়
টিএমসি একটি পোস্টে উল্লেখ করেছে যে শান্তনু ঠাকুর মাতুয়াদের আইডেন্টিটি কার্ড দিয়েছিলেন, কিন্তু পুণেতে এই কার্ড মহারাষ্ট্র পুলিশ গ্রহণ করেনি, যা বিজেপির সিএএ নীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
### উপসংহার
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দৃশ্যে সিএএ-র বিষয়ে বিজেপি এবং টিএমসি-র মধ্যে গভীর বিভাজন প্রকাশ করে। এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, যেখানে উভয় পক্ষের দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করা প্রয়োজন।
—
### বিস্তারিত রিপোর্ট: বাগদায় সিএএ শিবির এবং রাজনৈতিক বিতর্ক
#### পরিচিতি
গত ২৪ জুলাই, ২০২৫ সালে, বাগদা চোয়াটিয়া বাজারে বিজেপি তরফে একটি শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল, যা সিএএ (Citizenship Amendment Act) নিয়ে অনলাইনে আবেদন করার জন্য ছিল। এই শিবিরটি বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি বিরোধী দলনেতা সৌরভ গোয়ালি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। শিবিরটি মূলত মাতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য, যারা বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী হিসেবে ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব লাভে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি তীব্র বিতর্কের কারণ হয়েছে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) বিজেপির এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে।
#### শিবিরের বিস্তারিত
শিবিরটি বাগদার সাগরপাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে মাতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা বেশি অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিজেপি তরফে দাবি করা হয়েছে যে শিবিরে “খুবই বড় অংশগ্রহণ” ছিল, এবং লোকেরা সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভে আগ্রহী। নির্দিষ্ট আবেদনকারীদের উদাহরণ হিসেবে, বিজয় বিশ্বাস (ঢাকা থেকে ২০১১ সালে বাংলায় এসেছেন), সুধীর পান্ডে (২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে মাইগ্রেট, ভোটার আইডি বা আধার কার্ড নেই), এবং আমল কৃষ্ণ পান্ডে (১৯৮৬ সালে ফরিদপুর থেকে এসেছেন, আধার এবং ভোটার আইডি আছে তবু সিএএ-তে আবেদন করেছেন) উল্লেখযোগ্য।
সৌরভ গোয়ালি বলেছেন, “আমরা বিশেষ শিবিরের ব্যবস্থা করছি যাতে সাধারণ মানুষ সিএএ-তে আবেদন করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী তাদের দৃষ্টিকোণ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু এটি আইন হয়ে গেছে। তাই লোকেরা আবেদন করছে, এবং আমরা তাদের সহায়তা করছি।”
#### টিএমসি-র বিরোধিতা
টিএমসি এই শিবিরের বিরোধিতা করে একটি পাল্টা শিবিরের আয়োজন করেছিল, যা বিজেপির শিবির থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে ছিল। টিএমসি নেতা প্রসেনজিত ঘোষ এই শিবিরকে “রাজনৈতিক চাল” এবং “চোখের ধুলো” বলে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করেছে যে ভোটার কার্ডধারী ব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই ভারতের নাগরিক, তাই সিএএ-তে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। টিএমসি আরও দাবি করেছে যে বিজেপি সাধারণ মানুষকে সিএএ এবং এনআরসি (National Register of Citizens) নিয়ে ভুল ধারণা দিচ্ছে।
বাগদা পশ্চিম ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি নিউটন বালা অভিযোগ করেছেন, “বিজেপি সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সিএএ-তে আবেদন করাচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি যাতে তাঁরা আবেদন না করেন। দেখা যাচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষ চলছে আর এখানে সিএএ-তে আবেদন করাচ্ছে। এটা একটা হাস্যকর বিষয়।”
#### শান্তনু ঠাকুর এবং মাতুয়া সম্প্রদায়
টিএমসি অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে একটি পোস্ট করা হয়েছিল, যেখানে এই শিবিরকে “সার্কাস” বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর মাতুয়া সম্প্রদায়ের হাতে “আইডেন্টিটি কার্ড” তুলে দিয়েছিলেন। তবে, পুণেতে এই সম্প্রদায়ের কিছু সদস্যকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এবং মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজিপি বিজেপি প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত কার্ডকে গ্রহণ করেননি। এই ঘটনাকে টিএমসি বিজেপির সিএএ নীতির বৈধতা এবং সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ব্যবহার করেছে।
#### রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সিএএ (Citizenship Amendment Act) ২০১৯ সালে ভারতীয় সংসদে পাশ হয়েছিল, যা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখের আগে ভারতে প্রবেশকারী হিন্দু, সিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি বা খ্রিস্টান অবৈধ মাইগ্র্যান্টদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্বের পথ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে মাতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য, এই আইনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-র বিরোধিতা করেছেন, দাবি করে যে এটি বিভাজক এবং পশ্চিমবঙ্গের সকল বাসিন্দা ইতিমধ্যেই নাগরিক।
#### তুলনামূলক বিশ্লেষণ
নিচের তালিকায় বিজেপি এবং টিএমসি-র দৃষ্টিকোণের তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:
| **ক্ষেত্র** | **বিজেপি-র দৃষ্টিকোণ** | **টিএমসি-র দৃষ্টিকোণ** |
|—————————|————————————————————-|————————————————————-|
| শিবিরের উদ্দেশ্য | মাতুয়া প্রবাসীদের নাগরিকত্ব লাভে সহায়তা করা | শিবিরটি রাজনৈতিক চাল, সাধারণ মানুষকে ভুল ধারণা দেওয়া |
| অংশগ্রহণ | বড় অংশগ্রহণ, লোকেরা আগ্রহী | ভোটার কার্ডধারীরা ইতিমধ্যেই নাগরিক, আবেদনের প্রয়োজন নেই |
| শান্তনু ঠাকুরের কার্ড | নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি | পুণেতে গ্রেপ্তার, কার্ড মহারাষ্ট্র পুলিশ গ্রহণ করেনি |
#### উপসংহার
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দৃশ্যে সিএএ-র বিষয়ে বিজেপি এবং টিএমসি-র মধ্যে গভীর বিভাজন প্রকাশ করে। বিজেপি সিএএ-কে মাতুয়া সম্প্রদায়ের মতো প্রবাসীদের জন্য একটি সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করছে, যখন টিএমসি দাবি করছে যে এই আইনটি বিভাজক এবং অপ্রয়োজনীয়। শান্তনু ঠাকুরের আইডেন্টিটি কার্ডের ঘটনা এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, যেখানে উভয় পক্ষের দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করা প্রয়োজন।
