নিউজ ডেস্ক :- ডাঃ কাফিল খান এক পরিচিত নাম । গোটা দেশে উনার সেবার কাজ আজ সবার জানা এ রকম এক ডাক্তারকে আজোও জেলবন্দি। নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন বিরোধী বিক্ষোভে সামিল হওয়ার অপরাধে ডা. কাফিল খান ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। আলিগড় আদালত তাকে ১০ ফেব্রুয়ারি জামিন মঞ্জুর করেছিল কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ ১৩ই ফেব্রুয়ারি শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাফিল খানের বিরুদ্ধে ৪০ বছরের পুরানো জাতীয় সুরক্ষা আইন ১৯৮০ জারি করেছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মথুরা জেলে আছেন।
ডা. কাফিল খান করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১৯শে মার্চ চিঠি লিখেছিলেন-
“স্যার, বি আর ডি অক্সিজেন ট্র্যাজেডির পরে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে ১০৩ টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমার ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় পেয়েছি, আমি অনুভব করি যে এই করোনা কমাতে আমি কিছুটা সাহায্য করতে পারি।”
কিন্তু তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। চলতি বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেন যে করোনা সংক্রমণের কারণে জেল বন্দিদের প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে। এই আদেশানুসারে উত্তর প্রদেশ সরকার ১৭৯৬৩ জন কয়েদিকে মুক্তি দিলেও সেই তালিকায় কাফিল খানের নাম নেই। এতটাই ভয়ানক অপরাধী কাফিল খান?
মথুরা জেল থেকে ডা. কাফিল খান চিঠি লিখেছেন-
“আমি জানি না কেন আমাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? আমি জানি না আমি কখন আমার সন্তানদের, আমার স্ত্রী, আমার মা এবং আমার ভাই এবং বোনকে দেখতে পাব? আমি আবার চিকিৎসক হিসাবে আমার দায়িত্বগুলি সম্পাদন করব এবং আমার ভাইদের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কবে লড়াই করব তা আমি জানি না।” চিঠির ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছে জেলবন্দি একজন সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণা। সকাল ৫টা থেকে ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পরে ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত-তিনি লিখেছিলেন, “৫৩৪ জন বন্দীর জন্য তৈরি কারাগারে আমাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০-১৫২ জন এক ব্যারাকে আটকে রাখা ১৬০০ জন লোক রয়েছে। “এখানে মাত্র ৪-৬ টি টয়লেট রয়েছে।”
ডালিয়া প্রাতরাশের পরে তিনি ব্যারাকে গিয়ে কিছুটা মিনিট হাঁটেন এবং তারপরে ফ্যাটা (কম্বল ও বিছানার সাহায্যে তৈরি বিছানা) নেওয়ার আগে কিছুক্ষণ হাঁটেন। তিনি লিখেছেন-
“আমরা একে অপরের খুব কাছে ঘুমাই তাই সামাজিক দূরত্ব ভুলে যাই; লক্ষ লক্ষ মাছি ঘেরা থাকে আমাদের। আপনাকে এগুলি দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এমনকি যদি আপনি ৫-১০ মিনিটের মধ্যে থামেন, তারা আপনার শরীরে বিশ্রাম নেবে।……. করোনা ভাইরাসের কারণে কেউ বাইরে থেকেও আমার সাথে দেখা করতে পারে না। অন্যথায় তারা আমার কাছে ফল, ভালো খাবার নিয়ে আসত। মাত্র একটি সংযুক্ত টয়লেট, ১২৫-১৫০ জন বন্দি, তাদের ঘাম এবং প্রস্রাবের গন্ধ বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে অসহনীয় উত্তাপের সাথে মিশে এখানে জীবনকে নরক করে তুলেছে: প্রকৃতপক্ষে একটি জীবন্ত নরক।……..আমি পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু শ্বাসরোধের কারণে মনোযোগ দিতে পারছি না। মাগরিবের নামাজ পড়ার পরে আমি দীর্ঘকাল একটি উপন্যাস নিয়ে বসে থাকি, কমপক্ষে কিছুটা পড়ার চেষ্টা করি। তবে সব বৃথা। এতটাই দমবন্ধ যে আমি ব্যাখ্যা করতে পারবো না। পুরো ব্যারাকটিকে দেখে মনে হচ্ছে যে মাছের বাজারে কাশি, হাঁচি, কুঁচকানো, প্রস্রাব হওয়া বা ঘাম হওয়া সব ধরণের গন্ধ রয়েছে। কিছু লোক লড়াই করে, কেউ নিজেরাই স্ক্র্যাচ করে। পুরো রাত বসে বসে অপেক্ষা করি, কখন সকাল হবে?”
এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন কবে মুক্তি পাবেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. কাফিল খান?