ইংরেজী মাদ্রাসায় চাকরি থেকে বঞ্চিত মুসলিমরা ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ পিএসসির বিরুদ্ধে

Spread the love

ইংরাজি মাদ্রাসায় চাকরি থেকে বঞ্চিত মুসলিমরা
ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ পিএসসির বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যে চালু হয়েছে বারটি ইংরেজি মাধ্যম হাই মাদ্রাসা। যেগুলিকে মডেল মাদ্রাসা বলা হচ্ছে। ৬১৪ টি এডেড মাদ্রাসার মত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংখ্যালঘু মর্যাদাপ্রাপ্ত। সেই সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মুসলিম ছেলে মেয়েরা। এমনি অভিযোগে তোলপাড় রাজ্যজুড়ে। এই 12 টি মাদ্রাসার ভূগোল বিষয় শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা জায়গা পায়নি মুসলিম প্রার্থীরা। একইরকমভাবে ইংরেজি, অংক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলিম ছেলে-মেয়েদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন। পুরো ঘটনার কথা জানতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ধর্মীয় বৈষম্য তৈরি করার।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও, মডেল মাদ্রাসা গুলিতে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন কে না দিয়ে, তুলে দেয়া হয়েছিল পাবলিক সার্ভিস কমিশন কে।যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিজস্ব সংস্থা রয়েছে, সেখানে কেন বাইরে সংস্থা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বজায় রাখেনি বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে বারোটি মডেল হাই মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরাজি, অংক, আরবি, ভূগোল বিষয় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রতিটি বিষয়ই ১২ টি করে শূন্য পদ ছিল। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে, যোগ্যতা মানের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছিল, চাকরিপ্রার্থীদের ইসলামিক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক। বিষয় ভিত্তিক নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা দেখে প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি ইসলামিক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক এই শর্তটি বিবেচনা করে দেখেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। গত ২৪ জুলাই ভূগোলের যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে, সেই তালিকায় একজনও মুসলিম প্রার্থীর নাম নেই। অথচ ৪৬ জনকে ইন্টারভিউ ডাকা হলে, তারমধ্যে ১৬ জন ছিল মুসলিম চাকরিপ্রার্থী। যাদের সমস্ত যোগ্যতা মান ছিল। তার পরেও চূড়ান্ত তালিকায় একজনও মুসলিম চাকরিপ্রার্থীর জায়গা হয়নি। পাবলিক সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, এরা সকলেই নন সিলেক্টেড। সমস্ত যোগ্যতা মান থাকা সত্ত্বেও কিভাবে নন সিলেক্টেড হল, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। ভূগোলের চূড়ান্ত তালিকায় ১০০ শতাংশ অমুসলিম চাকরিপ্রার্থী জায়গা পেলেও, ইংরেজি ও অংকে কয়েকজন মুসলিম চাকরি প্রার্থীর নাম পাওয়া গিয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ইংরাজিতে ১২ জনের মধ্যে ৫ জন মুসলিম প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। অংকের চূড়ান্ত তালিকায় মুসলিম রয়েছে মাত্র তিনজন। অথচ প্রতি বিষয়ে সমস্ত যোগ্যতা মান নিয়ে একাধিক মুসলিম প্রার্থী ইন্টারভিউতে অংশ নিয়েছিলেন। তার পরেও চূড়ান্ত তালিকায় মুসলিম প্রার্থীদের নাম না দেখে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। দাবি উঠেছে চূড়ান্ত তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের ইসলামিক জ্ঞান কতটা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হোক।
ধর্মীয়গত বৈষম্যের ক্ষেত্রে অভিযোগ আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে আরবি বিষয়কে ঘিরে। আরবি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের তালিকা এখনও পিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।অথচ আজ থেকে এগারো মাস আগে আরবি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ নেয় পিএসসি। ১২ আসনের জন্য ১২ জনকেই ইন্টারভিউ তে ডাকা হয়েছিল। সাধারণ হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেকেরই চাকরি হওয়ার কথা। আশ্চর্য হলেও সত্যি, এই বিষয়ে এখনো অফিশিয়ালি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যখন, অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে। তালিকায় থাকা সকলে চাকরিতে যুক্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আরবি বিষয়ে কেন ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না, তা জানতে আসরে নামেন চাকরিপ্রার্থীরা। তারপরই চক্ষুচড়কগাছ তাদের। চাকরিপ্রার্থীরা জানতে পারেন গত ১৭ জুলাই মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তা আবিদ হোসেন বীরভূমের শেখ নুরুল ইসলাম নামে এক চাকরি প্রার্থী কে নিয়োগের জন্য চিঠি করেছেন। ১২ জনের মধ্যে ঐ একজনকেই নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে আরবী শিক্ষক হিসাবে। অথচ, পিএসসির তরফে অফিশিয়াল কোন তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এটা কিভাবে সম্ভব? চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, তাহলে কি আরবি বিষয়ে কোনো অমুসলিম চাকরিপ্রার্থী ছিল না বলেই, আমরা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে পিএসসির কাছে। ইন্টারভিউ দেওয়া আরবি বিষয়ে চাকরিপ্রার্থী মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা গভীর চক্রান্তের শিকার হয়েছি। এর সঙ্গে রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারিকরা ও জড়িত।’চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, আরবি বিষয়ে অমুসলিম প্রার্থী না থাকার কারণেই কি বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। নাকি মডেল মাদ্রাসায় আরবি পড়ানো হবে না? যদিও এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর পিএসসির তরফে পাওয়া যায়নি। মুখ খুলতে নারাজ সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.