কারবালা ওয়াকফ সম্পত্তির উপর বেআইনী নির্মাণ
তায়েদুুুল ইসলাম :- রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতই মুর্শিদাবাদ জেলাতেও ওয়াকফ সম্পত্তি এখনও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়। সব সরকারের আমলেই কোথাও না কোথাও ওয়াকফ সম্পত্তি জবর দখল হয়েছে। কখনো ব্যক্তিগত ভোগ দখলের জন্য হয়েছে। কখনো হয়েছে সরকারি কাজের জন্য। ওয়াকফ সম্পত্তি এ ভাবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সব সময়ই এই বেআইনি কাজ হয়েছে সরকারি দলের মুসলিম নেতাদের একাংশের সাথে প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশের ফলে। এ ভাবেই বহরমপুর কারবালা ওয়াকফ সম্পত্তির বেশিরভাগ জায়গা জবর দখল হয়েছে। এই ওয়াকফ সম্পত্তির ইসি নং ১২৩৭৭ । নবাবী আমলের ওয়াকফ সম্পত্তি। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী মোট সম্পত্তি ছিল ২৮২ বিঘা। বর্তমানে হয়তো ৫০/৬০ বিঘা ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি সবটাই জবর দখল হয়ে গেছে। যেটুকু আছে সেটাও জবর দখলের কাজ চলছে। এবার জবর দখলের কাজটি করছে বর্তমান কমিটির একাংশ। এই জবর দখলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন ব্যক্তি এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার জন্য জনমত গঠনের কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই এসডিপিআই সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছে। খবর পৌঁছিয়েছে ওয়াকফ বোর্ডের রাজ্য দপ্তরে। ওয়াকফ বোর্ডের সিইও গত ২০/৭/২০ তারিখ মেমো নং ৭৬০ ( ২ )/(৪) চিঠিতে জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার জন্য। নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ আছে। CS রেকর্ড অনুযায়ী ঐ সম্পত্তি শিবডাঙ্গা বদরপুর মৌজায়। খতিয়ান নং ৩৭৭। দাগ নং ৪৮, ৫০,৭৮,৮৬,১৩২,১৩৪,২০৪,২০৫,২১৩,২২০,২৩৩। মোতোয়াল্লি কমিটির সভাপতি বা মোতোয়াল্লি মৌলভী আব্দুল হান্নান। কিন্তু RS রেকর্ডে ষড়যন্ত্র করে এই সম্পত্তিকে দেখানো হয় খাস জমি হিসেবে অর্থাৎ এই জমি চলে যায় খাস খতিয়ানে বা ১ নং খতিয়ানে। এই ওয়াকফ এস্টেটের মধ্যে একটি মসজিদ এবং একটি ঐতিহাসিক কবরস্থান আছে। ২০০৭ সালে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের সিইও ১৬/৪/২০০৭ তারিখে মুর্শিদাবাদ জেলার ডিএল আ্যান্ড এলআরও কে মেমো নং ৩৫৭০ চিঠিতে ঐ সম্পত্তির আরএস রেকর্ড সংশোধন করার জন্য নির্দেশ দেন।
তিন বছর পর মুর্শিদাবাদ জেলার ডিএল আ্যান্ড এলআরও ১২/৮/২০১০ তারিখ মেমো নং ৩৮৫৮/x-৪০/১০ চিঠিতে land record and survey department এর ডাইরেকটরকে অনুরোধ করেন আরএস রেকর্ড অনুযায়ী জমির রেকর্ড খাস খতিয়ান সংশোধন করার অনুমতি চেয়ে। এই অনুমতি চাওয়ার দু বছরের মধ্যে ল্যান্ড রেকর্ড অ্যান্ড সার্ভে ডিপারটমেন্ট এর ডাইরেকটর এর পক্ষ থেকে কোন উত্তর না আসায় ২০১২ সালে কারবালা ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি কমিটির সভাপতি সাইয়েদ নূরে খোদা ৭/৬/১২ তারিখে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এর কাছে আবেদন করেন কারবালা ওয়াকফ এস্টেটের আরএস রেকর্ড খাস খতিয়ান সংশোধন করে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী কারবালা ওয়াকফ এস্টেটের নামে সংশোধন করা এবং এলার রেকর্ড এ তোলার জন্য। এখনো পর্যন্ত সে সংশোধন আর হয়নি। অর্থাৎ কারবালা ওয়াকফ এস্টেট বা কারবালা কবরস্থান কাগজে কলমে খাস সম্প্রত্তি।
অন্য দিকে , ২০০৫ সালে বামফ্রন্ট পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ এই কবরস্থানের জমি জবর দখল করে বেআইনি ১২৮ খানা দোকান ঘর নির্মাণ করে। ফলে জেলা জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ বহরমপুর (সদর) মহকুমা শাসকের দপ্তরে একটি মিমাংসা সভা হয়। এই সভায় বহরমপুর (সদর) মহকুমা শাসক প্রভাস বিশ্বাস সহ মোট ৩৩ জন উপস্থিত ছিলেন। তার মধ্যে ছিলেন বহরমপুর সদর এসডিএলএলআরও আহমেদ আলি, ডেপুটি পুলিশ সুপার এবং ডি অ্যান্ড টি সাহাবুর হোসেন, বহরমপুর থানার আই সি প্রদ্যুৎ ব্যানার্জি, বহরমপুর ব্লকের বিডিও নিমাই হালদার। এ ছাড়া মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৯ জন এবং অমুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৯ জন। এসডিও নিজেই সভা পরিচালনা করেন। সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রথমটি হল To solve the problem permanently, demarcation of wakf property is required and it will be started from 20.03.2006 with the supervision of BLLRO, Berhampore. The I/c, Berhampore police station will provide security during demarcation. The boundary of existing kabarsthan will be identified and demarcated as per field situation,not as per scheduled of land/ records. সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে। অথচ সেই প্রাচীর ভেঙে বেআইনি দোকান ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সমাজ, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠনগুলো নির্বিকার। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদে মরছে।