চিরাচরিত নিয়মে বাংলায় একুশের ভোটেও হিন্দুত্বকে অস্ত্র করে এগোবে বিজেপি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজেপির চিরাচরিত নিয়মে সারা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্বকে অস্ত্র করে এগোবে বিজেপি, এমনটাই ইঙ্গিত জেপি নাড্ডার। বুধবারই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছিলেন গেরুয়া শিবিরকে রুখতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। সেই সুরেই যেন সুর মেলালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও। রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিন লকডাউন করে মুখ্যমন্ত্রী আদতে তাঁর হিন্দুবিরোধী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন বলেই তোপ দাগলেন তিনি। তিনি হিন্দু বিরোধী, তোষণের রাজনীতি করেন, রাম মন্দিরের ভূমি পূজোর দিন লকডাউন করেন অথচ বকরা ঈদের দিন লকডাউন করেন না, তিনি বরাবর সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যস্ত। বারে বারে একথা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন জেপি নাড্ডা।
সাংগঠনিক সভা শেষমেষ পরিণত হয়েছে নির্বাচনী সভায়। বাংলাজুড়ে পদ্ম ফুটবে বলেও ভারচুয়াল সভামঞ্চে মন্তব্য আশাবাদী নাড্ডার। কয়েকদিন পূর্বে বিজেপির রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন তৃণমূল সরকার ৩০ শতাংশ মানুষের জন্য কাজ করছে আর আমরা ১০০ শতাংশ মানুষের জন্য কাজ করব। সেখানেও বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্য তোষণের রাজনীতির খোঁচা দেওয়া হয়েছে। কার্যত এদিন জেপি নাড্ডার মন্তব্য বিজেপি নেতাদের তৃণমূল সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু তোষণের ও হিন্দু বিরোধী মনোভাবের অভিযোগে সিলমোহর।
নাড্ডা আরো বলেন “বিশ্বভারতীতে যা চলছে, তাতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মাও কেঁদে উঠবে। বাংলার সরকার হিন্দুবিরোধী, বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ক্ষমা করবে না।”
বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটির বৈঠকে মমতা সরকারকে ছুড়ে ফেলে দিতে আহ্বান জানায় দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। নাড্ডা বলেন, “২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে গত লোকসভার ৪০ শতাংশ ভোট ৫০ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাড়িতে বসিয়ে দেবে বাংলার জণগন।” বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্বকে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নাড্ডার বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, যারা বাংলা ভাষাকেই ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেয় না, রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরির কিনারা করতে পারে না, তারা বাংলাকে কী করে বুঝবে? তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভক্তিই, দেশভক্তি সমস্তটাই এদের লোক দেখানো।”
তবে জেপি নাড্ডা যাই বলুক বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা যে একেবারে তলানিতে তা দেশবাসী ঠারে ঠারে বুঝতে পারছে। আর তৃণমূল সরকার যে কতটা সংখ্যালঘু তোষণ করছে তার উল্লেখযোগ্য তালিকা এখনো বুঝতেই পারেনি রাজ্যের মুসলিমরা। বিজেপি নেতাদের ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য রাজ্যের শান্তি ও সম্প্রীতি চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে। করোনা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দেশের সার্বিক দূরাবস্থা উপেক্ষা করে বিজেপির শুধুমাত্র হিন্দুত্বকেই অস্ত্র করে নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছা রবীন্দ্র নজরুলের এই সম্প্রীতির বাংলায় কতটা ফসল তুলতে পারবে তা ভবিষ্যত বলবে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।