মারা গেলেন অসমের প্রথম মুসলিম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী
নিউজ ডেক্স: অসমের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দা আনোয়ারা তৈমুরের সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জীবনাবসান হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিনি রাজ্যের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। পারিবারিক সূত্রে খবর, অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের কাছে ছিলেন সৈয়দ আনোয়ারা তৈমুর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ছেলের বিদেশের বাড়িতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে অসমে শোকের ছায়া নেমে আসে।
১৯৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দা আনোয়ারা। তিনি তখন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য। ২০১১ সালে কংগ্রেস তাঁকে টিকিট দিতে অস্বীকার করায়, দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন AIUDF-তে যোগ দেন।
যোগেন্দ্রনাথ হাজরিকার মন্ত্রিসভার পতনের পর ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে অসমে চালু হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। কয়েক মাস রাষ্ট্রপতি শাসনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দিশে কংগ্রেস(ই) দলের নেত্রী সৈয়দা আনোয়ারা তৈমুরকে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮১-র ৩০ জুন তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন।
চার বার ভোটে জিতে (১৯৭২, ১৯৭৮, ১৯৮৩ ও ১৯৯১) একজন বিধায়ক হিসেবে বিধানসভায় গিয়েছেন তৈমুর। এর মধ্যে দু-বার মন্ত্রীও হন। এ ছাড়া ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত হয়েছেন। আনোয়ারা সে সময় রাজ্য সরকারের বেশ কয়েক’টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠা সহকারে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত অসমের গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) মন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ১৯৭২ সালে শরৎচন্দ্র সিংহের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন আনোয়ারা। এদিন এক ট্যুইটবার্তায় অসমের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেন, ‘অসমের উন্নয়নে সৈয়দা আনোয়ারা তৈমুরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’
অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এদিন এক শোকবার্তায়, সৈয়দা আনোয়ারাকে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে উল্লেখ করেন।
আনোয়ারা তৈমুরের জন্ম ১৯৩০ সালে। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে দেবীচরণ বরুয়া মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। গত চার বছর ধরে ছেলের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। এদিন অস্ট্রেলিয়াতেই তিনি প্রয়াত হন।
দু-বছর আগে অসম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়ে রাজ্যের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাম। সেসময় অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের কাছে ছিলেন। আনোয়ারার প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আমার নাম তালিকায় নেই জেনে খারাপ লাগছে। অসমে ফিরে এনআরসিতে নাম তোলার চেষ্টা করব।’এনআরসি কর্তৃপক্ষের সাফাই ছিল, আনোয়ারার বংশ পরিচয় তারা পায়নি। শুধু আনোয়ারা নন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের ভাগনের নামও নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা থেকে সেসময় বাদ পড়ে।