কলকাতায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের বাধা দেওয়ার
অভিযোগ,ক্ষোভ একাধিক সংগঠনের
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা:
কলকাতায় আন এডেড মাদ্রাসা শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠলো।
মঙ্গলবার ওয়েস্ট বেঙ্গল রিকগনাইজড্ আন-এডেড্ মাদ্রাসা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের
রাজ্য সম্পাদক পলাশ রম এক ভিডিও বার্তায় বলেন,বেঙ্গল আর্মির অনুমতিক্রমে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আজ ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ এর অনুমতি পাই। আমরা লালবাজার ও করপোরেশনকে সহযোগিতার আবেদন করি।
এক বিবৃতিতে মাদ্রাসা শিক্ষকরা বলছেন,
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত ২৩৫ টি আন-এডেড মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষিকা তাদের অনধিক ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী দীর্ঘ নয় বছর থেকে মিড-ডে-মিল সহ সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা দীর্ঘ ৯ বছর ন্যূনতম সাম্মানিক না পেয়ে পুনরায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়। বিগত দিনে তারা একাধিকবার আবেদন-নিবেদন সরকারের নিকট করে আসছেন। বিগত দিনে মন্ত্রী তথা মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম সহ একাধিক মন্ত্রী-আমলা তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ তারা অস্বীকার করায় পুনরায় মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষিকারা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।’
সংগঠনটি বলছে,
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, তারা যখন প্রেসক্লাবের উপর দিয়ে গান্ধী মূর্তির পাদদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন সেই সময় পুলিশ বাহিনী তাদের পথ আটকে দিয়ে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করেন। উপস্থিত পুলিশ প্রশাসন শিক্ষক সংগঠনের কোন আবেদন-নিবেদনে কোন কর্ণপাত করেনি বলেও অভিযোগ। আন এডেড মাদ্রাসা শিক্ষকদের লালবাজারে আনা হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।
পি এফ আই এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি তে এই ঘটনার নিন্দা করে জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের উচিত মানবিক দৃষ্টিতে দেখা পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি মত কাজ করা।
এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পুলিশের আচরণে আমরা দুঃখ পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দশ হাজার মাদ্রাসা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন আন এডেড মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষিকারা বেতনের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়েও পুলিশের বাধা পাচ্ছে। পুলিশ যেভাবে মাদ্রাসা শিক্ষকদের আন্দোলনে বাধা দিয়েছে তাতে আমরা হতাশ হয়েছি। তাহলে কি মাদ্রাসা শিক্ষকরা সারাজীবন বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন?’
সিপিএম নেতা প্রাক্তন সাংসদ মুহাম্মদ সেলিমও এই ঘটনার নিন্দা করেন।
অন্যদিকে জমিয়তে আহলে হাদিসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার বলেন,মুখ্যমন্ত্রী কেন-ই বা মাদ্রাসা দেওয়ার ঘোষণা দিলেন আবার কেন-ই বা তাদের দাবি মানছেন না? লোকে জানছে মাদ্রাসা দেওয়া হচ্ছে অথচ ৯ বছর বেতন পাচ্ছে না!’
লেখক মুহাম্মদ নুরুদ্দিন, অধ্যাপক আব্দুল মতিন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম সহ বহু বিশিষ্টজন মাদ্রাসা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন।
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন,’গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিক্ষুব্ধ নাগরিক তাদের দাবি সনদ নিয়ে রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করবে, অবস্থান করবে ও সমাবেশ করবে। অবশ্যই, অন্যের অধিকার অক্ষুন্ন রেখে। এটাই গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
পশ্চিমবঙ্গের বিশাল সংখ্যক অমুসলিম জনগণ মনে করেন, মমতা সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নাকি অতিরিক্ত দূর্বল। মাত্রাতিরিক্ত তোষণ করেন। কিন্তু গত আট দশ বছর মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি আন্দোলন এই সরকার কঠোর হাতে গুড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রী। কিন্তু গত দশ বছরে কোনো মুসলিম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার প্রয়োজন বোধ করেননি। যে জুজু বামেদের সঙ্গে মুসলিমদের থাকতে বাধ্য করেছিল, একই জুজু এখনো সক্রিয়।
আমরা আজও মনে করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সারথী। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মুসলিমদের প্রতি তার সরকারের অতিরিক্ত কঠোরতা মুসলিম জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের সঙ্গে অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা করছি।”