ওয়েব ডেস্ক . কলকাতা :- রাজ্যের মন্ত্রী ও জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর আহবানে মঙ্গলবার রাজভবনের কোয়াটারে মুর্শিদাবাদে এনআইএ কর্তৃক মুসলিম যুবকদের মিথ্যা তকমা দিয়ে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বিভিন্ন মুসলিম নেতাদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা শেষে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয় অত্যন্ত অনুতাপ দুঃখ ও বেদনার বিষয়, একটি সাম্প্রদায়িক দল পশ্চিম বাংলার চিরায়ত মানববন্ধনকে, সম্প্রীতি ও জাতীয় সংহতিকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করার ঘৃণ্য চক্রান্ত চালাচ্ছে। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেদের তল্পিবাহক মিডিয়াকে ব্যবহার করে রাজ্যের পরিবেশকে উত্তরোত্তর দূষিত করছে। সম্প্রতি ডোমকলে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে এনআইএ যে পদ্ধতিতে কার্যকলাপ চালিয়েছে তা দেখে ভ্রম হতে পারে যে ডোমকলে বোধহয় কোন যুদ্ধ হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে ১২-১৩টি সশস্ত্র বাহিনীর কনভয় নিয়ে গ্রামে ঢুকে নিরীহ মানুষদের ধরপাকড় করেছেন। পরে তাদের দিল্লি বা অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন।
গণমাধ্যমের একটি অংশ একটিবারের জন্যও সত্য মিথ্যা যাচাই না করে, পরিস্থিতি যথাযথ মূল্যায়ন না করে, মুসলমান সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার এ খেলায় মেতে ছিল। যা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে আমরা মনে করি। ওই দশজন গ্রেপ্তারকৃত যুবকের আদৌ কি অপরাধ, এবং কি তার তথ্য-প্রমাণ সে বিষয়ে এনআইএ মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আমরা যতদূর জেনেছি, ওরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত নয়। গ্রামবাসীরা সকলের সামনেই বুকঠুকে কথাগুলি বলা কওয়া করছেন। মুসলিম সমাজের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য, ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য কেন্দ্র সরকার এনআইএকে ব্যবহার করছে বলে প্রতীয়মান হয়।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে অদ্যকার বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট গুণীজনদের আলোচনা সভার মাধ্যমে আমরা গ্রেফতারকৃত যুবকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। পশ্চিমবাংলায় কেউ যেন মনে না করেন যে যা হচ্ছে মুসলমানদের উপর দিয়ে হচ্ছে আমরা নিরাপদ এই ধারনা কিন্তু ভুল হবে। পশ্চিম বাংলার আপামর জনতার কাছে আমাদের আবেদন শত শত বছরের ঐক্য সংহতি সম্প্রীতি বন্ধনকে আমরা যেন অটুট রাখতে পারি সে বিষয়ে সকলকে সজাগ হতে হবে। অশুভ শক্তির কাছে মাথা নত না করে যার যতটুকু সাধ্য মেলবন্ধনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
গত কয়েকদিন ধরে জলঙ্গীর বিএসএফ ক্যাম্পে সাধারণ মানুষকে এনআইএ তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমরা বুঝতে পারছি না এনআইএ কি করতে চায় জনগণকে ক্ষিপ্ত করে তাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত পদক্ষেপ দেশের জন্য মঙ্গল জনক নয়। ডোমকল কুচিয়ামোড়া মসজিদের কামাল শেখ অত্যান্ত নিরীহ মানুষ তাকে ডেকে আড়াই ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। রানীনগর হাই স্কুলের ভোকেশনাল শিক্ষক আব্দুল মাতিন সাহেবকে জেরা করা হয়েছে। আমরা চাই দিল্লির ক্ষমতাসীন সরকার ও শাসক দল সম্প্রদায়িক তাস খেলে মে ভয়ঙ্কর খেলা খেলছে তা বন্ধ করুক। এমন পরিবেশে গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে দেশবাসী সমৃদ্ধ হবে দেশের অখন্ডতা অটুট থাকবে, জাতীয় সংহতি ঐক্য ও সুদূঢ় থাকবে।
উত্তর ২৪ পরগনা বাদুড়িয়া থানা থেকে জঙ্গি তকমা দিয়ে ধৃত কলেজ ছাত্রী তানিয়ার বিষয়েও সরব হতে দেখা যায় এদিন। এবং তাকেও মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
আলোচনা সভায় কোলকাতা হাইকোর্টের একঝাঁক সিনিয়র আইনজীবী সহ উপস্থিত ছিলেন ইমাম-এ-ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমান, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের মহঃ কামরুজ্জামান, আইমার পীরজাদা সৈয়দ রুহুল আমীন, নাখোদা মসজিদের ইমাম ক্বারী সফিক, প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, মাওঃ তাহফিমুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা।