হাঁপানি: কারণ ও মুক্তির উপায়
স্বাস্থ্য ডেস্ক :- আমদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ৩-৫ জন বা ততোধিক লোক ফুসফুসের একটি অসুখ শ্বাসকষ্ট বা এজমাতে ভূগেন৷ তন্মধ্যে ১৫-২০% বাচ্চারাও এতে আক্রান্ত৷ এই এজমা যখন কোন ব্যক্তিকে পেয়ে বসে তখন তার জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে৷ নাকের ছিদ্র দিয়ে ও মুখগহ্বর দিয়ে যে বাতাস প্রবেশ করে সেটা এপিগ্লটিস থেকে ভাগ হয়ে ট্রাকিয়া বা বড় শ্বাসনালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অসংখ্য শাখা-প্রশাখার মত বড় থেকে ছোট সাইজের পাইপের মধ্য দিয়ে গমন করে৷ সেই বাতাস ফুসফুসের মধ্যে ঢুকে এলভিওলাই এ বিশেষ প্রক্রিয়াতে রক্তে মিশে৷ সেই বাতাস বা অক্সিজেন আমাদের দেহের প্রতিটি কোষে সরবরাহ হয়৷ কোষের শক্তি উৎপাদনের মূল ভূমিকা পালন করে৷ কোষের বিভিন্ন কার্যাবলীতে উৎপাদিত কার্বনডাই অক্সাইড ফুসফুসের এলভিওলাই এ রক্ত থেকে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে৷ সেটা আবার ছোট থেকে বড় অসংখ্য পাইপের মত শ্বাসনালীর মাধ্যমে নিঃশ্বাস হিসাবে দেহের বাইরে নির্গত হয়৷ আমাদের দেহের শক্তি অব্যহত ও কার্যাবলী মজবুত রাখতে অক্সিজেন,পুষ্টি,জল লাগবেই৷ এই অক্সিজেনকে পরিবেশ থেকে দেহের মধ্যে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াতে মূল ভূমিকা রাখে—ফুসফুস৷ অতএব, কোন ব্যক্তির এই বাতাস গ্রহণে বা ত্যাগে বাধক তৈরী হলে তার দেহের মধ্যে নানাবিধ মেটাবলিক ও ফিজিওলজিক্যাল সমস্যা অবধারিতভাবে আসবেই৷ যখন ফুসফুসের এই শ্বাসনালী গুলো কোন না কোন ভাবে Inflammation বা প্রদাহ দ্বারা প্রভাবিত থাকবে,তখন শ্বাসনালীগুলির ব্যাসার্ধ ছোট হয়ে যাবে৷ শ্বাসনালীর মাংশপেশী কুচকে থাকবে৷ ভিতরের ওয়ালে প্রচুর মিউকাস তৈরী হবে৷ ফলে,পর্যাপ্ত অক্সিজেন বা বাতাস পাইপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারবেনা৷ প্রবল বেগে বাতাস ছোট সাইজের পাইপে প্রবাহিত হলে বাঁশির মত সাঁই সাঁই শব্দ হবে৷ রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না যাওয়াতে ব্যক্তিটি শারিরীকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে৷
ঠিক এই সমস্যাটাই কোন পাইপে,কোন টাইপে,কোন ইনফেকশনে,কোন স্থলে,কোন এজেন্টে,কত সময় ধরে হচ্ছে—তার ভিত্তিতে একই সমস্যার নানাবিধ নামকরণ করা হয়েছে মেডিক্যাল সিস্টেমে৷
এজমা বা হাঁপানি তখন বলা হয় যখন শ্বাসনালীতে কোন রকম স্পষ্ট ইনফেকশন ছাড়াই শুধুমাত্র কিছু হাইপারসেন্সিটিভ এজেন্টের জন্য ব্রঙ্কোকন্সট্রিকশন বা শ্বাসনালীর প্রচন্ড সঙ্কোচন হয়৷ এই রোগীরা সর্বদা তটস্থ থাকে যে, কখন না জানি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়!!! তাই, বাড়ির বাইরে রাস্তাঘাটে ট্রেনে বাসে খুবই ভয়ে ভয়ে ও আতঙ্কে চলাফেরা করে৷ রাস্তার ধুলো,গাড়ির ধোঁয়া,বৃষ্টির জল,অন্যস্থলের জল,শীতের মরসুমের ঠান্ডা,শরতের পরাগরেণু প্রভৃতি থেকে সাবধানে থাকে৷ একটু ছোঁয়া পেলেই শ্বাসকষ্ট হতে দেরী হয়না৷ সঙ্গে সঙ্গে স্টেরয়েড ইনহেলার বা ব্রঙ্কোডাইলেটর ইনহেলার টেনে কিছুটা সুস্থ হয়৷ বিরক্ত হয়ে যায় নিজের উপর! হাঁপানি অসুখটা এমন কেন?? মারছেও না,সুস্থ ভাবে বাঁচতেও দিচ্ছেনা৷ এই একটা অসুখের জন্য মানুষের বহু স্বপ্ন অপূরণ থেকে যায়৷ বহু মানুষের অনেক আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিতে হয়৷ অনেকে বহু ডাক্তার দেখিয়ে দেখিয়ে শুধু মুক্তির আশাতে অনেক টাকা কড়ি ছড়ায়৷ ডাক্তার বলে দিয়েছেন, “হাঁপানি ভাল হয়না,যতদিন বাঁচবেন টানার ওষুধ নিয়ে থাকতে হবে৷”
এই কথা শুনে শুনে রোগীর মনে এই বিশ্বাস জন্মে যায় যে, সত্যিই তো কারোরই ভাল হয়না,আমারও হবেনা৷ অতএব, সাবধানতা ও ইনহেলার আমার সারাজীবনের সম্বল৷
আমি নিজে যখন NRS medical college এ MBBS পাঠরত,তখন 3rd Year এ আমি এই সমস্যাতে আক্রান্ত হই৷ আমার আব্বা দীর্ঘদিন হাঁপানিতে ভূগতেন- দেখতাম৷ আমি Chest department এ দেখিয়ে X Ray,Sputum,Blood report করে স্যারদের দেখালাম৷ বললেন, “বাবু, তোকে এই ইনহেলার টেনে সারাজীবন কাটাতে হবে৷” আমি হতাশ হয়েছিলাম৷ প্রথমতঃ টানতাম৷ বহুদিন টেনেছি৷ কিন্তূ, MBBS পাশ করে কলেজে ইন্টার্ন,হাউসস্টাফশিপ কম্প্লিট করে বের হয়ে যখন দেখলাম শুধু হাঁপানিই নই,আরও অসংখ্য রোগ আছে যার চিকিৎসা থাকলেও মুক্তি নাই৷ সারাজীবন ঔষধ খেতে হবে—এই কথাটা আমাকে খুবই পীড়াদায়ক মনে হল৷ যখন অল্টারনেটিভ মেডিক্যাল ফিল্ডে গভীরভাবে মনোনিবেশ করলাম ,গবেষনা করলাম৷ সহিহ মুসলিমের হাদিশ-
“আল্লাহ এমন কোন রোগ পাঠান না,যার চিকিৎসা নাই৷ যখন রোগ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা হবে তখন আল্লাহর ইচ্ছায় রোগটি সেরে যাবে৷”
এই কথাটাই আমার চিকিৎসা জগতের মোড় ঘুরিয়ে দিল৷ শুরু হল অভিনব তথ্য ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, জানার অধীর আগ্রহে গভীর অধ্যয়ন৷ আমি আলহামদুলিল্লাহ গত ৪-৫ বছর থেকে এই ইনহেলার ও স্টেরয়েড থেকে মুক্ত৷ আজ আমি সেটাই শেয়ার করব যেভাবে আমি মুক্ত হয়েছি৷
এবার চলুন দেখি, শ্বাসকষ্ট ঠিক কেন ও কীভাবে হয়?
Conventional medical communities বিশ্বাস করেন যে, হাঁপানি একটি জন্মগত (Genetic ) ও Auto immune disease. ট্রাকিয়া,ব্রঙ্কাই, ব্রঙ্কিওল গুলি Auto Immunity এর জন্য আক্রান্ত হয়ে inflammed হচ্ছে৷ এই inflammation সর্বদাই জারি থাকছে যেহেতু genetic ও auto-immune. কিন্তু এই inflammation কে করছে সেটা বার করতে গিয়ে Immunity পাঁঠার বলি(Scapegoat) হয়ে গেল৷ Auto immunity নিয়ে research সীমাবদ্ধ হয়ে গেল৷ আসল কারণগুলি ছুটে গেল৷ Inflammation নিয়ে গভীর আলোচনা,গবেষণা হল ৷ বহু রকম inflammatory biological mediators কমানোর অনেক রকম ওষুধ আবিস্কার হল৷ রোগের সিম্পটম্স ও সমস্যা কমানো গেল অবিশ্বাস্যভাবে৷ কিন্তু,যেহেতু inflammation এর আসল কারণটা অবহেলিত ও উপেক্ষিত থাকল,ফলে আজীবন শ্বাসকষ্টের ঔষধের উপর বহাল থাকতে হল৷ এবং আসল কারণটি যেহেতু থাকলই ,ফলে রোগের প্রকোপ বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তেই থাকল৷ আজকে যে ডোজের ইনহেলার নেয়, আগামীতে আরও বেশী ডোজের ইনহেলার নিতে হয়৷ আজকে যতগুলি ঔষধ নিতে হয়,আগামিতে আরও বেশী ঔষধ গ্রহণ করতে হয়৷ এটাই বাস্তবতা ও সত্য ঘটনা৷
হাঁপানি সম্পর্কে যে সত্য তথ্যগুলি এখন পরিবেশন করব,সেগুলি শুনে জেনে হতচকিত হবেন!!
প্রথমতঃ Medical Coomunities আজমাকে সাধারনতঃ এক্যুউট ও ক্রনিক হিসাবে জানে৷ সেটা ঠিক আছে-রোগের আক্রমনের সময়কালের ভিত্তিতে৷ কিন্তূ, হাঁপানি চার রকম ভাবে ভাগ করা যায় মূল কারণের ভিত্তিতে৷
১) নিউরোলজিক্যাল এজমা
২) ভেগাস নার্ভ এজমা
৩) টক্সিক হেভি মেটাল এক্সপোজার এজমা
৪) ভাইরাল কন্ডিসন (EVB) এজমা ৷
Low grading viral infection of nerves -নার্ভগুলিকে ইনফ্লেইমড করে৷ নার্ভের ফাংশন কম হয়৷ শ্বাসনালীতে বাতাস প্রবাহে হাল্কা একটা বাধক তৈরী হয়৷ যেটা রোগী কম্প্লেইন করে যে, শ্বাস-প্রস্বাসে একটু কেমন অসুবিধা হচ্ছে,মনে হচ্ছে বুকটা হাল্কা হয়ে যাচ্ছে৷ বুকের মধ্যে বাতাস ঢুকছেনা—এরকম মনে হচ্ছে৷ অনেক সময় এই সব রোগীদের সমস্যাকে উপেক্ষিত করা হয়৷ বলা হয়-এটা এমন কিছু না৷ কিছু সময় Anxiety বলেও diagnose করা হয়৷ সেক্ষেত্রে নিউরোট্রান্সমিটার এনহান্সিং ( সেরোটনিন) ঔষধ(SRI) দেয়া হয় ৷ রোগী- এই ঔষধে Symptomatically সুস্থ হয়৷ পরবর্তীতে ঐ রোগীই আরও বড় সমস্যা নিয়ে হাজির হয়৷ যখন শ্বাসে বাধক তৈরী হয়,বুকের মধ্যে চাপ বা টাইটনেস অনুভূত হয়,তখন প্রচুর এড্রিনালিন সিক্রেশন হয় এই অবস্থাকে সামাল দিতে৷ তখন সিম্পাথেটিক অভারএক্টিভিটির জন্য বুকে ধড়পড়, হাত পা ঠান্ঠা হওয়া, হাত পা টেনে নেওয়া প্রভৃতি নিয়ে রোগী এমার্জেন্সিতে আনয়ন করে৷ অধিকাংশ রোগীদের কোন সর্দি কাশি জ্বর কিছুই থাকেনা৷ চিকিৎসকেরা Panic Attack or anxiety ডায়াগনোস করে চিকিৎসা করেন৷
যে রোগীর এই রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হয় তার Chronic Low Grade EVB infection লিভারেও থাকবেই৷ এই রোগীর লিভারে পুন্জিভূত বিষের পাহাড় যেগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জন্ম থেকে এমনকি মাতৃগর্ভ থেকেই জমছে৷ আমাদের পাণীয়,আমাদের খাদ্য,আমাদের আসবাব পত্র, বিভিন্ন ঔষধিতে নানাবিধ বিষ,কেমিক্যালস,হেভি মেটালস, অক্সিডেটিভ এজেন্ট,প্লাষ্টিকস প্রভৃতি আমরা প্রতিনিয়ত খাচ্ছি, এক্সপোজ হচ্ছি,ত্বকের মাধ্যমে শোষণ করছি,শ্বাসের মাধ্যমে ধোঁয়া গ্রহণ করছি৷ এই বিষাক্ততার ছোবলে আমরা ছারখার হয়ে গেছি৷ বিষের কণার কিছুটা লিভারে জমছে৷ লিভার তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় বিষগুলি বিভিন্ন প্রসেসিং করে দেহ থেকে নির্গমনের চেষ্টা করছে৷ এই রকম অবস্থায় লিভারে ডর্মান্ট স্টেজে থাকা EBV ঐ সকল হেভি মেটালের উপর ফিডিং করে এক্টিভ ও শক্তিশালী হচ্ছে৷ লিভারের নিজস্ব ইমিউনিটির বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে রক্তে,লসিকাতে চলে আসছে৷ দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে৷ যখন এই ভাইরাসটি হাল্কাভাবে ফুসফুসে সরবরাহ থাকা বিভিন্ন নার্ভগুলিকে,ভেগাস নার্ভকে এটাক করে,তখন নার্ভগুলি inflammation হয়ে ফুলে যায়, নার্ভ কন্ডাকশণ কমে যায়৷ নার্ভের ফাংশন লস হয় কিছুটা৷ Diaphram বা মধ্যচ্ছদাতে সরবরাহ থাকা ফ্রেনিক নার্ভও ইনফ্লেইমড হয়৷ ফলে, ফুসফুসে এক কমপ্লেক্স নিট এফেক্ট এসে পড়ে৷ ভেগাস নার্ভের ইনফ্লামেশনে শ্বাসনালীগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রসারিত হতে পারেনা৷ ফ্রেনিক নার্ভের জন্য ডায়াফ্রামের প্রসারন ঠিক থাকেনা৷ ফলে শ্বাস নিতে বাধক তৈরী হয়৷ উপরন্তূ, সিম্পাথেটিক অভারএক্টিভিটির জন্য আরও বেশী ব্রঙ্কোকন্সট্রিকশন তৈরী হয়ে এক্যুট এজমা লাইক সমস্যা তৈরী হয়৷ যেহেতু , এই রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার আগে লিভারকে দূর্বল অবস্থাতে পাওয়া যাচ্ছে,তাই এই রোগীদের গ্যাসের সমস্যা,ক্ষিদের সমস্যা,হজমের সমস্যা,পায়খানার সমস্যা প্রভৃতি থাকবেই৷ স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা বা বাড়ির কেউ কোন স্ট্রেস বা মানসিক চাপ পেলেই স্ট্রেস হরমোন এড্রিনালিন বেশী সিক্রেশন হয়৷ সিম্প্যাথেটিক এক্টিভিটি বাড়ে৷ ওদিকে পূর্ব থেকেই ভেগাস বা ফ্রেনিক নার্ভ দূর্বল অবস্থাতে আছে৷ ফলে, এই মহুর্তে, ঐ স্ট্রেস একটি ট্রিগার ফ্যাক্টর হিসাবে রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট,বুকে চাপ ধরা,বুক ধড়পড় করা,হাত পা অবশ,ঠান্ডাভাব,মাংশপেশী টেনে নেওয়া প্রভৃতি হবে৷
এটাকে বলা হয় Neuro-asthma.
হেভি মেটাল এক্সপোজ এজমা—যখন ক্রনিক ভাইরাল ইনফেকশনে ভেগাস ও ফ্রেনিক নার্ভ ইনফ্লেমড থাকবে,তখন যে কোন ভাবে হেভি মেটালের এক্সপোজ হলেই এজমা বাড়বে৷ কারণ, ভাইরাসের জন্য হেভি মেটালস খুব ভাল খাবার৷ এক্ষেত্রে, স্টেরয়েড যেহেতু নার্ভকে শান্ত করে ফলে স্টেরয়েড ইনহেলার স্বস্তিদানে সহায়তা করে৷ কিন্তু, যেহেতু, ভাইরাস ঐ স্টেরয়েডে শক্তিশালী হবে ফলে অদূর ভবিষ্যতে শ্বাসকষ্ট আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে৷ আজকে ২০০ পাওয়ারের স্টেরয়েড নিলে আগামিতে ৪০০ পাওয়ার নিতেই হবে৷
Inflammed bronchial asthma-
যে কোন ধরণের ইরিটেটিভ কেমিক্যালস যেগুলি আমরা প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকাচ্ছি, সেগুলি ফুসফুস নালিতে জমে যায়৷ ঐ জায়গাতে মাইক্রোইনজুরি করে৷ধুলো,ধোঁয়া,বালি,পরাগরেণু,বাতাসে বিদ্যমান বিভিন্ন সিজনাল ভাইরাস,ফ্লু ভাইরাস, কন্সট্রাকশন ডাষ্ট, গন্ধ প্রভৃতি ফুসফুসের নালীতে জমে গিয়ে মাইক্রোইনজুরি করে ফুসফুস নালীর ভিতরের ওয়ালে,মিউকাস লেয়ারে৷ এক্ষেত্রে, ব্রঙ্কিয়াল টিউবগুলি হাইপারসেন্সিটিভ হয়ে যায় ইনফ্লামেশনে মিউকাস লেয়ারে ক্ষত থাকার জন্য৷ এক্ষেত্রে, পরবর্তীতে ঐ জাতীয় বিষগুলি আর সহ্য করা যায়না৷ এক্সপোজ হলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়৷ স্টেরয়েড ইনহেলারে সাময়িক স্বস্তি পেলেও পরবর্তীতে কোন কাজই হয়না৷ কারণ ব্রঙ্কিয়াল ইনার লেয়ার স্টেরয়েড রেজিস্টান্ট হয়ে যায়৷
ঐ জাতীয় ইরিটেটিভ এজেন্টগুলি ফুসফুসে দিনের পর দিন ঢুকছেই৷ ফুসফুস বের করে দিচ্ছে অনেকটাই৷ কিন্তূ কিছুটা হলেও মিউকাস লেয়ারে স্টাক হয়ে যাচ্ছে৷ যতই প্রশ্বাস নিচ্ছি, ঐ ইরিটেন্টটা ততই ফুসফুসের ভিতরে প্রবেশ করছে৷ যতই প্রশ্বাস নিচ্ছি,ততই বেশী বেশী পরিমাণে জমছে৷ একটা সময় এত পরিমাণে হয়ে যায় যে, মিউকাস আর ঐ ইরিনেন্টকে বের করতে পারেনা৷ এই মিউকাস কিন্তু ফুসফুস নালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্সিভ মেকানিজম ও হাতিয়ার৷ গলাতে,ফুসফুসের নালীতে মিউকাস (জলের মত তরল পদার্থ) থাকতেই হবে৷ যাতে ইনফেকশন,ইরিটেটিভ এজেন্ট ক্ষতি না করতে পারে৷ এই হেল্দি মিউকাস ঐ ক্ষতিকর জিনিসগুলি কফ ও থুতুর মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়৷ আবার, এই মিউকাস লিভারে,ব্লাডে,লসিকাতে,অন্যান্য অর্গানে থাকলে খুবই ক্ষতিকর৷
ফুসফুস নালীতে ফ্লু ভাইরাস,ইনফ্লুয়েন্জা ভাইরাস,ক্লামাইডিয়া,মাইকোব্যাকটেরিয়াম,ফাঙ্গাস,স্ট্রেপটোকক্বাই,স্ট্যাফাইলোকক্বাই প্রভৃতি মাইক্রোঅর্গানিজম প্রবেশ করলে ঐ ইরিটেটিভ এজেন্টের মতই ফুসফুসের নালীতে জীবাণুগুলি জমতে থাকে৷ আস্তে আস্তে গভীরে প্রবেশ করে৷ লাঙ প্যারেনকাইমাতে অনুপ্রবেশ করে৷
এই ভাবে মিউকাস লেয়ারে ক্রনিকভাবে বেশী বেশী পরিমাণে মিউকাস পূন্জিভূত হলে ও বিভিন্ন জীবানুর ইনফেকশনে মিউকাস থকথকে ও শক্ত হয়ে যায় পুঁজের মত৷ তখন পুরো শ্বাসনালীটাই মিউকাস দ্বারা ব্লক হয়ে যায়৷ শুরু হয় প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট৷ উঠে আসে পাকা পাকা কফ৷ এক্ষেত্রে, ব্রঙ্কাইটিস বা ব্রঙ্কিওলাইটিস তৈরী হয়৷ ক্ষত-বিক্ষত শ্বাসনালীর মিউকাস লেয়ার বিভিন্ন ইরিটেটিভ এজেন্ট, সিজনাল ফ্লু ভাইরাসে ঘন ঘন আক্রান্ত হয়৷ বিভিন্ন জীবাণুর ভিন্নতায় তৈরী হয় বিভিন্ন রকম লেশন ও কনসলিডেশন৷ এক্ষেত্রে,প্রপার এন্টিবায়টিক ,এন্টি সিক্রেটরি,মিউকোলাইটিক,এক্সপেক্টরেন্ট দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা হয়৷ রোগী সুস্থ হয়৷ কিন্তূ, ক্ষত-বিক্ষত ,হাইপারসেন্সিটিভ,ক্রনিক ভাইরাল ইস্যু অবহেলিত থাকে বলে রোগীটি সারাজীবনই এই সমস্যাই ভূগতেই থাকে৷ এটিকে অনেক ক্ষেত্রে Chronic Bronchitis বলে অবহিত করা হয়ে থাকে৷
এক্ষেত্রেও, ব্রঙ্কোডাইলেটর ও স্টেরয়েড ইনহেলার দিয়ে রোগীকে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ নিরাময় অধরাই থেকে যায়৷
মুক্তি কীভাবে???
১) নিজের দেহের,লিভারের,ফুসফুসের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করা ৷যাতে ক্রনিক লো গ্রেড ভাইরাল ইনফেকশনকে প্রতিহত করা যায়৷ এরজন্য Thymoquinone rich BSO , Phytonutrients rich Honey, Vitamin-C, Zinc প্রভৃতি নিয়মিত বেশ কিছু সময় খেতে হবে৷
২) Antiviral, Anti bacterial
food -supplemets যেমন- Licorice, Cat’s claw, Zaitus, Lemon Balm বেশ কয়েকমাস খেতে হবে৷
৩)Mucus layer and damaged nerves repairing Foods খেতে হবে৷
৪)Heavy Metals detoxification ফুডস খেতে হবে৷ এক্ষেত্রে, Spirulina, Blue berry দারুন কাজ করে৷
৫)মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও মানসিকভাবে মজবুত হওয়া —যাতে স্ট্রেস হরমোন এড্রিনালিন রাস না তৈরী হয়৷
৬)স্টেরয়েড ওষুধ বন্ধ করা৷ ইরিটেটিভ এজেন্ট পারতঃপক্ষে এড়িয়ে চলা৷ অন্ততঃ নার্ভ ও ব্রঙ্কিয়াল ওয়াল মেরামত ও মজবুত না হওয়া পর্যন্ত৷
৭)যে সমস্ত খাদ্য প্রচন্ড মিউকাস প্রডিউসিং করে যেমন ডিম, দুধের দ্রব্য বন্ধ রাখা৷
৮)যে সমস্ত খাবার ও তার উপাদান বিভিন্ন প্যাথোজেনকে ফিডিং ও শক্তিশালী করে যেমন—মাংস,সয়াবিন,সাদাতেল,ভূট্টা,চিনি,মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট,এসপার্টেম,আর্টিফিসিয়াল কালার ও ফ্লেভার এভোয়েড করা৷
চেষ্টা করুন, আপনিও সুস্থ থাকবেন ইনশাল্লাহ৷ সম্পূর্ণ সুস্থতা আপনার কাম্য৷
ধন্যবাদ— Dr. Md Year Ali Sk