ওয়েব ডেস্ক :- অপেক্ষার অবসান। আগামী সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে চলবে লোকাল ট্রেন (Local Trains)। বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বুধবার থেকে শিয়ালদহ, হাওড়া শাখায় সাধারণ যাত্রীদের জন্য চালু হচ্ছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা। আপাতত স্থির হয়েছে, শিয়ালদহ শাখায় দৈনিক ১১৪ জোড়া ট্রেন, হাওড়ায় ৫০ জোড়া ট্রেন চলবে। সব স্টেশনেই দাঁড়াবে ট্রেন। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। এই খবরে স্বভাবতই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন নিত্যযাত্রীরা। তবে নিউ নর্মালে একাধিক বিধি মেনে ট্রেনে যাতায়াত করতে হবে।
২ তারিখ এবং ৪ তারিখ দু দফায় এ নিয়ে নবান্নে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে রেলকর্তারা বৈঠক করেন। তাতে স্থির হয়, হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখায় রোজ ২০০টি করে ট্রেন চালানো হবে। কী পদ্ধতিতে, কোন সময়ে ট্রেন চলবে, কারা তাতে সফর করতে পারবেন, কীভাবেই বা ট্রেনে চড়া যাবে, তার চূড়ান্ত পদ্ধতি স্থির করতেই বৃহস্পতিবারের বৈঠক ছিল। তাতে স্থির হয়, শিয়ালদহ শাখায় দৈনিক বেশি ট্রেন চলবে। আগের মতো কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেই ট্রেনে ওঠা যাবে। তবে মাস্ক বাধ্যতামূলক। সব স্টেশনেই দাঁড়াবে ট্রেন। আর দূরত্ববিধি মানতে জনসচেতনতায় জোর দেওয়া হচ্ছে। অফিস টাইমে ভিড় এড়াতে বেশি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত রেল-রাজ্যের। আগামী বুধবার অর্থাৎ লোকাল ট্রেন চালুর প্রথম দিন মোট ১৮১ জোড়া ট্রেন চলবে রাজ্যজুড়ে।
প্রায় ৮ মাস পর আগামী সপ্তাহ অর্থাৎ দীপাবলির পর থেকেই চালু হয়ে যাচ্ছে লোকাল ট্রেন। তাতেই খুশির হাওয়া যাত্রীমহলে। আনলক পর্বে মুম্বইতে সাবধানতা অবলম্বন করে এই পরিষেবা চালু হওয়ার পরই এখানেও তা চালুর জন্য চাপ বাড়ছিল। আর তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছিল প্রায় নিত্যদিন রেলের স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেনে সাধারণের উঠতে চাওয়ায় অশান্তির ছবিতে। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে সীমিত পরিসরে লোকাল ট্রেন চালুতে সিলমোহর পড়ল।
যথাযথ যাত্রী পরিবহণের জন্য পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কাছে ‘উপযুক্ত সংখ্যক’ ট্রেনের দাবি করেছিল রাজ্য। তারই প্রেক্ষিতে যথাযথ পরিষেবা ও যাত্রীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পুলিশ প্রয়োজন বলেও রাজ্যকে জানাল রেল। বুধবার স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ও পরিবহণসচিব রাজেশ কুমার সিনহার সঙ্গে লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার পর আবার বৃহস্পতিবারও নবান্নে আসেন রেলকর্তারা। সেখানেই ঠিক হয়, সামনের বুধবার থেকে চলবে রাজ্যের লোকাল ট্রেন। আপাতত ১৮১ জোড়া অর্থাৎ ৩৬২টি করে লোকাল ট্রেন চালানো হবে। তবে, নতুন কোনও সময়সূচী আপাতত চালু হচ্ছে না। পুরনো সময় সূচী মতোই চলবে ট্রেন।
শিয়ালদা ডিভিশনে অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার কারণে ওই ডিভিশনে আপাতত ১১৪ জোড়া অর্থাৎ ২২৮টি ট্রেন, হাওড়া ডিভিশনে ৫০ জোড়া অর্থাৎ ১০০টি লোকাল ট্রেন চলবে। বাকি ১৭ জোড়া অর্থাৎ ৩৪টি ট্রেন চলবে দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশন অর্থাৎ খড়গপুর থেকে।
রেল ও রাজ্য পরস্পরের থেকে কী চাইছে, বুধবারের এক ঘণ্টার বৈঠকে তাই নিয়েই আলোচনা হয়। রেলের একটি সূত্র জানিয়েছিল, রাজ্য সরকার চায়, ব্যস্ত সময়ে হাওড়া, শিয়ালদহ এবং খড়্গপুর ডিভিশন মিলিয়ে ২১০টি ট্রেন চালাক রেল। যদিও নবান্ন এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। কিন্তু এদিন এ বিষয়ে স্পষ্টতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল।
লোকাল ট্রেন চালানোয় রেলকে সহায়তা করতে রাজ্যের প্রয়োজন রেলের এসওপি। অন্য দিকে, রাজ্যের দাবিমতো ট্রেন চালাতে রেলের প্রয়োজন রাজ্য সরকারের থেকে উপযুক্ত পুলিশি সহায়তা। রাজ্যে এ বিষয়ে সর্বত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের জেরে ২৩ মার্চ থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালানোর জন্য রাজ্য-রেল বৈঠক হয় ২ নভেম্বর। ওই আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, ১০-১৫ শতাংশ পরিষেবা দিয়ে লোকাল ট্রেন চালাতে শুরু করবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বরেল। এর পরদিনই স্বরাষ্ট্রসচিব রেলকে চিঠিতে জানান, যাত্রীদের যথাযথ পরিবহণ করতে যত ট্রেন লাগে, তত ট্রেনই চালানোর ব্যবস্থা করা হোক। তারই প্রেক্ষিতে ফের বুধবার আলোচনায় বসে রাজ্য ও রেল। তারপর আবার বৃহস্পতিবার। এরপর সোমবার ফের বৈঠকে বসবে দুপক্ষ। তবে, স্টেশনের ভিড় সামলানোর দায়িত্ব রাজ্য পুলিশকে নিতে হবে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে রেল। প্রতিটি স্টেশনের এন্ট্রি গেটে থাকবে নিরাপত্তারক্ষীরা, করা হবে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং।