নিউজ ডেস্ক: – দিল্লির কৃষক বিক্ষোভে মাওবাদী-নকশালরা মিশে রয়েছে বলে কেন্দ্রের তরফে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার জবাব দিল কৃষক সংগঠন। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন -এর নেতা রাকেশ টিকাইত শনিবার বলেন, কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তাঁরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন, তার মধ্যে সমাজবিরোধীরা এসে মিশিছে বলে কৃষক সংগঠনগুলি অন্তত তা জানা নাই কেন্দ্রে র যদি তা সত্যি জানা থাকে কেন ওই ‘সমাজবিরোধী’দের ধরার ব্যবস্থা করছে না, তা নিয়ে পালটা প্রশ্ন তোলেন রাকেশ।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করেন, কৃষকদের এই বিক্ষোভে এসে মিশেছে নকশাল ও মাওবাদীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, কৃষকরা এ নিয়ে অবগত নন। তাঁদের অজান্তেই এই আন্দোলন মঞ্চের অপব্যবহার করছে মাওবাদীদের মতো সমাজবিরোধীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, এই সমাজবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করে আন্দোলনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
টিকাইতের স্পষ্ট অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরোধিতায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে কালি ছেটাতে চাইছে মোদী সরকার। কৃষক নেতাদের বক্তব্য, ‘আমাদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে সমাজবিরোধীরা মিশে রয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অবগত নই। কেন্দ্র কৃষকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সমস্ত মন্তব্য করে, বিক্ষোভের বদনাম করছে। কেন্দ্রের যদি জানা থাকে, এসে ধরছে না কেন? আমরা তো কেউ বাধা দিইনি।’
বৃহস্পতিবার, মানবাধিকার দিবসে কয়েক জন বিক্ষোভকারী তিকরি সীমানায় হাতে পোস্টার নিয়ে সমাজকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান। সে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর মন্তব্য করেন, কৃষকদের ভিড়ে মিশে ‘সমাজবিরোধী উপাদান’রা আন্দোলনের পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে। এর আগে আর এক কৃষক নেতা কানওয়ালপ্রীত সিং পান্নুও সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন, সরকার তাঁদের আন্দোলনকে দুর্বল করতে চাইছে। কিন্তু, এটা তাঁরা হতে দেবেন না।
তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, বিভিন্ন কৃষক সংগঠনগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা সরকার চালাচ্ছে। কিন্তু, এই আন্দোলন ৩২টি কৃষক সংগঠনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের মধ্যে ভাগন ধরানোর কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টা আমরা রুখে দেব।
পান্নু জানান, সরকারের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। কিন্তু, তার আগে তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, দেশজুড়ে প্রতিবাদের মধ্যেই কৃষক নেতারা অনশন কর্মসূচি নিয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রত্যাহারের হুমকি বিজেপি-শরিক সাংসদের
তিনি আরও জানান, রাজস্থানের শাহনজাহানপুর থেকে কয়েক হাজার কৃষক দিল্লি চলো অভিযান শুরু করেবেন। রবিবার ট্র্যাক্টর নিয়ে জয়পুর-দিল্লি হাইরোড ধরে তাঁরা দিল্লির দিকে রওনা দেবেন।
রাজস্থানে কৃষকদের এক প্রতিবাদ মঞ্চে যোগ দিয়ে আরএলপি’র এই সাংসদ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর উচিত স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকর করা।’ এনডিএ জোটের শরিক হলেও কেন্দ্রের এই কৃষি আইনকে ‘কৃষক বিরোধী’ বলতে কুণ্ঠা করেননি হনুমান বেনিওয়াল। রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির এই সাংসদ দলের আহ্বায়কও।
এনডিএ’র শরিক হলেও মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতে দ্বিধা করেননি এই সাংসদ। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কৃষকদের বিরুদ্ধে গেলে এনডিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দেন আরএলপি নেতা। শুধু বেনিওয়াল একা নন, তাঁর সঙ্গে দলের অনেক সমর্থকও এদিন কৃষক বিক্ষোভে শামিল হন। বেনিওয়াল জানান, তিনি অনুগামীদের নিয়ে দিল্লি-রাজস্থান সীমানায় রওনা দিচ্ছেন। সেখানে গিয়ে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
শনিবার কোটপুতলিতে আয়োজিত ‘কিষাণ মহাপঞ্চায়েত’-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেনিওয়াল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘কৃষি আইন আনার সময় শরিকদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হয়নি।’ তাঁর দাবি অনুযায়ী, সংসদে কৃষি বিল পেশের আগে পর্যন্ত এনডিএ’র শরিক হিসেবে এ বিষয়ে কিচ্ছুটি জানতেন না। শরিকদের তা জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি বিজেপি। হনুমান বেনিওয়ালের কথায়, ‘আমরাও কৃষকের সন্তান। শরিক হিসেবে আমাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল বিজেপির।’ খেদের সঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘জানি না কে এই বিলের খসড়া তৈরি করেছেন!’
সৌজন্য :- এই সময় পত্রিকা