নিউজ ডেস্ক :- লালকেল্লা অভিযানে বড় ষড়যন্ত্রের গন্ধ কৃষক ‘নেতা’ বিজেপি ঘনিষ্ট , এই নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা । প্রজাতন্ত্র দিবসে রণক্ষেত্র দেশের রাজধানী। লাগাতার চলতে থাকা কৃষক আন্দোলনের সূত্র ধরেই এদিনের ট্রাক্টর মিছিল থেকে ধুন্ধুমার বাঁধল দিল্লিতে। কৃষক মৃত্যু, লালকেল্লায় প্রতিবাদীদের পৌঁছে যাওয়া, সেখানে পতাকা উড়িয়ে দেওয়া, জলকামান, টিয়ার গ্যাস-বাদ রইল না কিছুই। আর এরপরই সর্বস্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, লালকেল্লার মতো ঐতিহাসিক সৌধ, যেখান থেকে দেশের স্বাধীনতা দিবসে বক্তব্য রাখেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেখানে প্রতিবাদের নামে ‘দখল’ নেওয়া, জাতীয় পতাকার মুখোমুখি বিক্ষোভকারীদের সংগঠন বা ধর্মীয় পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ অনেকেই। যদিও গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষক নেতারা। এদিন রাতেই প্রশান্ত ভূষন ট্যুইটে দীপ সাধু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের দুটি ছবি শেয়ার করেছেন। প্রশান্ত অভিযোগ করেছেন, পঞ্জাবি গায়ক ও অভিনেতা দীপ সিধু লালকেল্লায় অভিযানের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ধর্মীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন সৌধে। এ বিষয়ে একটি ভিডিয়োও শেয়ার করেছেন তিনি।
ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের হরিয়ানা ইউনিটের প্রধান গুরুনাম সিং চাডুনি বলেন, দীপ সিধুই বিক্ষোভকারীদের উসকেছিলেন ও ভুল পথে চালিত করেছিলেন। স্বরাজ ইন্ডিয়ার যোগেন্দ্র যাদবও একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে বলেন, ‘লাল কেল্লায় হিংসার সময় দীপ সিধু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা শুরু থেকেই তাঁর বিরোধিতা করছিলাম। লালকেল্লার ঘটনার জন্য আমার মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যারা সেখানে ছিল, তারা ঠিক ছিল মানুষ নন। দীপ সিধু লালকেল্লায় মাইক্রোফোন হাতে কীভাবে পৌঁছে গেলেন, তা তদন্ত করে দেখা হোক।’ যোগেন্দ্রর আরও দাবি, ‘দীপ সিধু বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। বিজেপি সাংসদ সানি দেওলের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বহু ছবিও রয়েছে। আমরা পুলিশকে বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। ঘটনার সময় দীপ সিধুকে গ্রেফতারও করা হল না। লালকেল্লায় আসলে ষড়যন্ত্র হল।’
So, is the BJP trying to fish in the farmers waters to defame the movement? https://t.co/OMWGqLOnOl
— Prashant Bhushan (@pbhushan1) January 26, 2021
যদিও এদিনের রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর কৃষক আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নানা শিবির। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন এমন সংঘর্ষপূর্ণ প্রতিবাদের সমালোচনাও করেছেন অনেকে। যদিও এই ঘটনার নেপথ্যে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছিলেন কৃষক নেতারা। কিষান নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, ‘আমরা শান্তিতে মিছিল করেছি। কিন্তু যারা অশান্তি করছে, তাদের আমরা চিনে ফেলেছি। দিল্লিতে পৌঁছলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। এমনকী লালকেল্লা যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্তও কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্র করে কৃষক আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে এমন কাণ্ড ঘটানো হল।’
এই সময় ডিজিটালকে কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘এত বড় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গত একশো বছরে ভারতবর্ষে হয়নি। সকলেই মেনে নিয়েছেন এ কথা। শান্তিই আমাদের শক্তি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম, এমন অশান্তি ঘটানো হতেই পারে। কৃষকরা কখনই নিজেদের আন্দোলনকে এভাবে কালিমালিপ্ত করতে পারেন না। কিছু ষড়যন্ত্রকারী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। লালকেল্লায় এত মানুষ পতাকা তুলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখছে। সরকারকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁদের আমরা খুঁজে বের করবই। ব্যবস্থা নিতেই হবে তাঁদের বিরুদ্ধে।’ দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন আপ সরকারও। কেন্দ্রের অসংবেদনশীল মনোভাবের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
This is Deep Sidhu with Modi & Shah. He led the mob at Red Fort today & unfurled the Sikh religious flag there pic.twitter.com/dX9bQjAIim
— Prashant Bhushan (@pbhushan1) January 26, 2021
এদিন ট্রাক্টর মিছিলের শুরু থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে। অবাধে ভাঙচুর চালানো হয়েছে পুলিশের গাড়িতে, বাসে। পাল্টা বিক্ষোভরত কৃষকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো থেকে চলে লাঠিচার্জও। বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে লালকেল্লায় পৌঁছায় মিছিল। সেখানে সংগঠনের বেশ কিছু পতাকা সেখানে লাগিয়ে দেয় তাঁরা। কৃষকদের কর্মসূচি হিংসাত্মক রূপ নিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিঙ্ঘু, গাজিপুর, টিকরি সীমান্ত, মুকারবা চক ও নাঙ্গলোই এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ। রাজধানীর এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে নিজের বাসভবনে জরুরি বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। কিন্তু রাত বাড়তেই যেভাবে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে সুর চড়ছে, তাতে কৃষকদের সঙ্গে সংঘাত এত সহজে মিটবে বলে মনে হয় না।