সাইফুল্লা লস্কর : নির্বাচনমুখী রাজ্যে দলবদল এর মাঝে ক্রমশ রাজনৈতিক পারদ বেড়েই চলেছে। একদিকে যখন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একের পর এক নেতা নেত্রী বিধায়করা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করছেন নানা কারণে অন্যদিকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র তারকারা যোগদান করছেন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপিতে। একদিকে যখন বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নানা দুর্বলতা খুঁজে তাদের ভোট প্রচারে ব্যস্ত ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় সরকারের বাড়ানো পেট্রোপণ্য গ্যাসের দাম দুধের দাম রেলওয়ে টিকিটের দাম ইত্যাদির কথা এবং গত 10 বছরে নিজেদের জনমুখী সমস্ত প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের স্থান শক্ত করতে চাইছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন এখন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে তাহলে কি এবার দলবদল এর এই আসরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সরকার বাদলের নাকি এটা শুধুই এক সাময়িক ঘটনাপ্রবাহ। সিএনএক্স গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের প্রথম জনমত সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল যেখানে দেখানো হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসে আবার ফিরতে চলেছেন রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল হিসাবে। গতকাল সিএনএক্স এর তরফ থেকে আবার মার্চের জনমত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মত মার্চেও তৃণমূল কংগ্রেসকে এরাজ্যে সম্ভাব্য বিজয়ী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক এবং চমকপ্রদ বিষয় হলো তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে এত নেতা-নেত্রীদের প্রস্থানের পরেও তাদের যেমন বেড়েছে ভোট শতাংশের হার তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের সম্ভাব্য আসন সংখ্যাও।
রাজ্যে বিজেপি নেতা নেত্রীরা যতই তৃণমূল বিরোধী এবং মোদিমুখী রাজনৈতিক হাওয়ার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে সচেষ্ট থাকুক আদতেই যে রাজ্যের তৃণমূলের হওয়া চলছে এখনও তার আভাস পাওয়া গেল সমীক্ষাতে। এবার আসা যাক মার্চের জনমত সমীক্ষায় কোন দল কতগুলি আসন পেতে পারে সে কথায়।
সি এন এক্স এর মার্চ জনমত সমীক্ষা রিপোর্ট :
সম্ভাব্য আসনসংখ্যা :
তৃণমূল কংগ্রেস : ১৫৪-১৬৪ (১৪৬-১৫৬)
বিজেপি : ১০২-১১২ (১১৩-১২১)
বাম কংগ্রেস জোট : ২২-৩০ (২০-২৮)
অন্যান্য : ১-৩ (১-৩)
উল্লেখ্য ২৯৪ বিধানসভা আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৪৮ টি আসন।
ভোট শতাংশের হিসেবে :
তৃণমূল কংগ্রেস : ৪২ শতাংশ (৪১%)
বিজেপি : ৩৪ শতাংশ (৩৭%)
বাম কংগ্রেস জোট : ২০ শতাংশ (১৭%)
অন্যান্য : ৬ শতাংশ (৫%)
বন্ধনীর মধ্য দেখানো হয়েছে CNX এর ফেব্রুয়ারি সমীক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলি যতগুলি আসন পেতে পারে এবং তাদের ভোট শতাংশের হিসাব।
তবে এই জনমত সমীক্ষায় ইন্ডিয়ান সার্কুলার ফ্রন্ট অর্থাৎ আব্বাস সিদ্দিকীর আই এস এফ এর কোনো প্রতিফলন নেই কারণ সেই সময়ে আইএসএফ বাম কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বদ্ধ হয়নি। ফেব্রুয়ারির সঙ্গে মার্চ মাসের জনমত সমীক্ষা তুলনা করলে দেখা যায় গত মাসের তুলনায় এই মাসে তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা রাজ্যে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে বাম কংগ্রেসের নির্বাচনী রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও। নির্বাচনে আসন জয়ের সম্ভাবনা এবং ভোট শতাংশ দুটোতেই পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। তবে জনমত সমীক্ষাটি যেহেতু বেশ কিছুদিন করা হয়েছে তাই এই জনমত সমীক্ষায় তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পরে যে সমস্ত দল বদলের ঘটনাগুলো ঘটেছে তার সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ছবিটি আরো পরিষ্কার হওয়ার জন্য। তবে রাজ্যে ভুয়া বিজেপি হওয়া যে বর্তমানে নেই তাই ইঙ্গিত করছে সমীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।