আন্তজার্তিক ডেস্ক :- বাংলাদেশে মুজিববর্ষ উদযাপনে আমন্ত্রিত হয়ে শুক্রবার সাড়ে দশটা নাগাদ দু’দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । সেখানে তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। এই সফরের প্রতিবাদে আজ রাজধানী ঢাকায় জুম্মা নমাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায় মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে হেফাজত সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। সেখানে জড়ায় শাসকদল আওয়ামি লিগের সদস্যরাও। হেফাজত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এদিন নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেড়িয়ে মৌলবাদীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে হেফাজত। মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বেরিয়েই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। এই বিক্ষোভে অংশ নেয় অন্য ইসলামিক দলগুলির নেতাকর্মীরা। গত কয়েকদিন ধরেই ইসলামিক দলগুলি মোদি-বিরোধী বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। অভিযোগ, ক্ষমতায় এসে জামাত-ই-ইসলামির ডানা ছাঁটলেও হেফাজতকে দিব্যি জল-হাওয়া দিয়ে বাড়তে দিয়েছেন মুজিবকন্যা।
উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শতবর্ষ। ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালন করছেন বাংলাদেশবাসী। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে মাস কয়েক আগেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি দেখেশুনে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সফরসূচি নিশ্চিত করা হয়। সেইমতো শুক্রবার সকালেই ঢাকা পৌঁছে যান নরেন্দ্র মোদি। করোনা মহামারী শুরুর পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটাই হবে প্রথম বিদেশ সফর। প্রশাসনের আশঙ্কা, মোদির সফরে সাম্প্রদায়িক হিংসা উসকে দিতে পারে মৌলবাদী দলগুলি। এর জন্য দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা। গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে আক্রান্ত হন সংখ্যালঘু হিন্দুরা। ওই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর ঘিরে দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করে তোলা হয়েছে। উগ্র ইসলামিক দলগুলির উপর নজর রেখে সমস্ত রকমের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ জুম্মাবাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। এদিন নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেড়িয়ে মৌলবাদীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের চালানো গুলিতে অনেক মুসুল্লী এবং হাটহাজারী ছাত্র আহত বলে খবর পাওয়া গেছে। মোদির বাংলাদেশ আগমনের বিরোধিতা করে বের করা প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালিয়েছে হাসিনার পুলিশ বাহিনী বলে অভিযোগ। সঙ্গে ছিল আওয়ামীলীগের কুখ্যাত ছাত্রলীগের বহু সদস্য বলে অভিযোগ এমনকি জুমা নামাজের পর মুসুল্লিদের ওপর গুলি চালিয়ে এবং টিয়ার গ্যাস ফাটিয়ে বায়তুল মুকাররম মসজিদের মধ্যেও প্রবেশ করে পুলিশ। তারা সেখানে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে মুসুল্লিদের উদ্দেশ্য করে। মসজিদের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আহত মুসুল্লী এবং ছাত্রদের পড়ে থাকার ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশের গুলিতে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন মুসুল্লী এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কজনক বলে জানানো হয়েছে মাদ্রাসার তরফ থেকে।
অসমর্থিত সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে পুলিশের গুলিতে। তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি বাংলাদেশ সরকার বা পুলিশ। আহতদের ভ্যান রিকশায় করে স্থানীয় হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমে ভর্তি করেছেন মুসুল্লিরা। হাটহাজারী মাদ্রাসার উত্তেজিত ছাত্ররা পরে হাটহাজারী মডেল থানা ঘেরাও করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেখানেও তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সেখান থেকে সরে এসে তারা হাটহাজারির মূল গেটে অবস্থান নিয়ে সংলগ্ন রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে।
মোদিকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বাংলাদেশের অসংখ্য সংগঠন। কিন্তু তা পরোয়া না করেই মোদি এবং হাসিনা সরকার তাদের পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচি বজায় রাখে। আজ সকালে মোদি ঢাকায় অবতরণ করেন। আর তার প্রতিবাদেই লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি জনতা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন।