বসন্ত ঋতু রাজ স্মারক সম্মানে নারী বাহিনী
নিজস্ব সংবাদদাতা .অয়ন বাংলা,কলকাতা :- একজন নারী কারোর মা, একজন নারী কারোর বোন, একজন নারী কারোর স্ত্রী। সেই নারী যেমন একদিকে সন্তান আর সংসার সামলেছে, তেমনি পুরুষের পাশে অংশ নিয়েছে নানা ধরনের জীবিকায়ও। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারী অধস্তন। আজো নারী অপুষ্টি, অবহেলা, অশিক্ষা, উপেক্ষা, নিষ্ঠুরতা, ধর্ষণ, পারিবারকি নির্যাতনের ভয়ঙ্কর শিকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে কামনার বস্তু হিসেবে দেখলেও, কন্যা সন্তান কামনা করে না। অনেক কিছুর মধ্যে একটা কারণ হলো, মেয়েকে এখনো অনেকে বোঝা মনে করেন। আর ছেলেকে মনে করেন শেষ বয়সের লাঠি হিসেবে। তাই নারীর মর্যাদা বুঝি মণ্ডপেই সীমাবদ্ধ। তাই পাথরের মূর্তিকে শক্তির দেবী রূপে আরাধনা করলেও আসল শক্তির আধারদের অবেহলা করি। নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলন নতুন কোনো বিষয় নয়। নারীর সম্মান স্বয়ং নারীকেই আদায় করতে হবে। ঠিক তেমনই একজন নারী বাংলা তথা ভারত বর্ষ ভারতবর্ষের ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক স্থানে নিজের সম্মান অর্জন করেছেন, তিনি হচ্ছেন আর কেউ নয় কলকাতার আগরপাড়ার বাসিন্দা সুপর্ণা রায়। তিনি কখনো কবিতা লিখেছেন, কখনো বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গল্প লিখেছেন, কখনো সম্পাদনা করেছেন। সেই নারী বাহনীকে সামনে রেখে কলকাতা কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাউল স্বপন দত্ত কে এই ঋতু রাত স্মারক সম্মান তুলে দিলেন, শুধু এখানেই শেষ নয় বাংলার সৎ নিষ্ঠাবান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক মৃত্যুঞ্জয় সরদারকে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হিসাবে বসন্ত ঋতুর স্মারক সম্মান তুলে দিলেন স্বপন দত্ত বাউল, সুপর্ণা রায় , মহাশ্বেতা মুখার্জি। বিভিন্ন কবি, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক বসন্তের ঋতুরাজ স্মারক সম্মান অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিতি ছিলেন । ঋতুরাজ বসন্তের উৎসবে কবিদের আবৃতি গান ও নিজস্ব ভাষণে উক্ত অনুষ্ঠানে সুন্দর থেকে সুন্দরতর রূপ দিয়েছেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চিত্রপরিচালক রাজ ব্যানার্জি, স্বপন দত্ত বাউল, সুপর্ণা রায়, নাজমা সুলতানা, সুশর্মা ও মৃত্যুঞ্জয় সরদার রানু সহ একাধিক মহিলা বাহিনীর শক্তি। বাংলার প্রথম আত্মকথার লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী স্বামীর ঘোড়াকে দেখে ঘোমটা দিতেন – উনিশ শতকে সংসারে নারীর অবস্থানের চিত্রটি ছিল এরকম। একবিংশ শতকের প্রথমার্ধে পৌঁছেও পুরুষশাসিত সমাজের কতজন পুরুষ সাফল্যের শীর্ষে ওঠা নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান আর স্বীকৃতি দিতে পারে? টপ উদাহরণস্বরূপ বলতে গেলে বলতে হয় সুপর্ণা রায় এর মতন নারীদের কথা, বলতে হয় নাজমা সুলতানের মতন নারীদের কথা।তবে নানাভাবে নারীর সাফল্যকে তুচ্ছ, খাটো করার চেষ্টা করে থাকে পুরুষ। সাফল্যের কথা যদি বাদও দিই, মেয়েদের যে একটা আলাদা আইডেন্টিটি আছে, ধারণক্ষমতা আছে, নিজস্ব আকাক্সক্ষার জগৎ আছে, তারা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, নারী জীবনের এই সহজ, সাধারণ সত্যকে পুরুষ অবজ্ঞা আর তাচ্ছিল্যই করে এসেছে চিরকাল। নারীর প্রতি তাচ্ছিল্য আর অপমান আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির অন্তর্গত হয়ে গেছে। কথা প্রসঙ্গে আলবেয়ার কামু একবার সিমোন দ্য বোভোয়ার কাছে মন্তব্য করেছিলেন, নারীর পিছিয়ে থাকার কারণে পুরুষরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি, কারণ তারা উপযুক্ত সঙ্গিনী পায় না। উপযুক্ত সঙ্গিনীর অভাবের কথা বলেছিলেন কামু। নারীর উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠার পেছনে প্রতিবন্ধকতার কথা তিনি বলেননি। আর উপযুক্ত হলেও পুরুষতন্ত্র যে নারীকে নিুকোটিতে নামিয়ে রাখতে পছন্দ করে এ-কথা তিনি ভেবে ছিলেন কিনা জানি না।নারীর প্রতি পুরুষের এই লাঞ্ছনা, অবমাননার একটি সামাজিক ভিত্তি আছে। দুই হাজার ৩০০ বছর আগে অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, মেয়েরা পুরুষের তুলনায় অক্ষম ও স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন। অ্যারিস্টটলকে অনুসরণ করে যুগের পর যুগ ধরে পুরুষেরা তোতাপাখির মতো একই কথা আউড়ে গেছেন। সমাজপতিদের দেওয়া অনুশাসন নারীর জীবন, স্বপ্ন, অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে বিকশিত হতে না দিয়ে যুগ-যুগ ধরে তাকে অন্দরমহলের অন্ধকারে আবর্জনার স্তূপে আবদ্ধ করে রেখেছে। তবে আজকের দিনে নারীদের মুখ বন্ধ তো দূরের কথা ,পুরুষশাসিত সমাজের ত্রিসীমানা টপকে একটি ছত্রছায়ায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আনন্দমুখর সাহিত্য পত্রিকা ও পরিষদ। এই সাহিত্য সংস্কৃতি মঞ্চ আনন্দমুখর সাহিত্য পত্রিকা ঋতুরাজ স্মারক সম্মান উপস্থিত ছিলেন আরো দুই লড়াকু নারী 1971 সালের যোদ্ধা তিনি রানু অন্যদিকে সংসার জীবনের ভয়ংকর যুদ্ধ পেরিয়ে নিজেকে এখন প্রতিষ্ঠা করেছে কবি ও সাহিত্যক রূপে তিনি হচ্ছেন নাজমা সুলতানা।