নিউজ ডেস্ক :- রাজ্য তথা উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেম ‘বক্তা সম্রাট ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গোলাম আহমাদ মোর্তজা ইন্তেকাল করলেন। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৩.০৫ নাগাদ কলকাতার জিডি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আশি ঊর্ধ্ব। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার মুসলিম সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মেমারি জামিয়া মাদ্রাসা ও মামুন ন্যাশনাল স্কুল সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, বহু গ্রন্থপ্রণেতা, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও বাগ্মী জনাব হাফেয গোলাম আহমাদ মোর্তজা সাহেব। ২ রমাযান, মোতাবেক ১৫ এপ্রিল ২০২১ রাত ০৩:৩৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় তিনি জিডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন।মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। রেখে গেছেন ৬ পুত্র,এক কন্যা ও অসংখ্য ভক্ত ও অনুসারী।
ইতিহাসের ইতিহাস, চেপে রাখা ইতিহাস, এ এক অনন্য ইতিহাস, বজ্র কলম, পুস্তক সম্রাট প্রভৃতি বই লিখে তিনি সাড়া জাগিয়েছিলেন। ‘ইতিহাসের ইতিহাস’ বইটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৮১ সালে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।
গোলাম আহমদ মোর্তজা স্বাধীনতার পর একমাত্র বাঙালি সন্তান যিনি ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে দেশ তথা রাজ্যের মানুষকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময় মানুষের পড়াশোনার পরিবেশ কম ছিল সেজন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন ইতিহাস চর্চা হিসাবে বক্তব্যকে। গ্রাম গঞ্জে জলসা গুলোতে যেখানে হাদিস-কোরআনের কথা বলা হতো সেই জায়গায় তিনি বলতে শুরু করলেন ইতিহাসের গভীর কথা। ইতিহাসকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে হিন্দু-মুসলমান মিলনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি একইসঙ্গে ইতিহাস বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ গুলিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে গেছেন আজীবন।
তিনি ভাবতেন চিন্তা করতেন বলতেন ইতিহাস আমাদের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। ইতিহাস চর্চার খুব প্রয়োজন ইতিহাসকে সামনে আনতে হবে পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে জীবনকে অতিবাহিত করতে হবে। যুব সম্প্রদায়ের কাছে তার বার্তা ছিল যে প্রত্যেকটা ছেলে মেয়েকে ভালো করে অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। ইতিহাস চর্চা যদি ঠিকমতো করা যায়, ঠিক মত মানুষের সামনে উপস্থাপন করা যায় তাহলে কোন অসুবিধা হবে না দেশের শান্তি সম্প্রীতি বিরাজ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।
তার মৃত্যুতে এই বাংলায় গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হল। দেশ হারালো মহান সন্তানকে রাজ্য হারালো একজন বিশিষ্ট নাগরিককে যিনি সম্প্রীতির স্বার্থে আজীবন কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুতে সমগ্র বাংলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার অনেকটাই বয়স হয়েছিল বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিলেন তবু তিনি বেশ কয়েক মাস আগেও মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে চলে যাচ্ছিলেন তার ইতিহাসের গবেষণাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আজ তিনি নেই। তার এই চলে যাওয়া আমাদের সকলের কাছেই দুঃখের। তবে তিনি যে কাজ করে গেছেন সেই কাজের দৌলতে আল্লাহতালা তাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ মাকাম এর স্থান দেবেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
মরহুম মোর্তাজা মেমারিতেই মুসলিমদের জন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মেমারি ন্যাশনাল স্কুল শুরু করেন। নানা কারণে তা বন্ধ করে দিতে হলেও পরে মামূন ন্যাশনাল স্কুল নামে ইসলামিক মিশন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা রাজ্যের মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। মুসলিম শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে চলেছে। তিনি ছিলেন কুরআনে হাফিজ।