উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের নির্মম অত্যাচারে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের জীবন বিপন্ন নিন্দার ঝড় বুদ্ধিজীবি ও সাংবাদিক মহলে
ওয়েব ডেস্ক :- গত বছর (2020) ১৪ই সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে এক তরুণীকে চার নরপশু মিলে গণধর্ষণ ক’রে , তার জিভ কেটে, মেরুদণ্ড সহ দেহের প্রায় সব হাড় ভেঙে দিয়ে ফেলে রেখে চলে যায় । ৩রা অক্টোবর মেয়েটির মৃত্যু হয়। সমস্ত প্রমাণ লোপাট করতে ফ্যাসিষ্ট যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে । পরিবারকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং প্রশাসনের বড় কর্তারা মেয়েটির পরিবারের উপর চড়াও হয়ে মুখ বন্ধ রাখতে আদেশ দেয়। সারা দেশে আলোড়ন ওঠে । ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের আটকানোর জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন হয়। ৫ই অক্টোবর,2020, ঐ ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান । তাকে গ্রেপ্তার ক’রে তার নামে UAPA এবং দেশদ্রোহিতার মিথ্যা মামলা ঝুলিয়ে তার উপর অকথ্য নির্যাতন শুরু হয় । মাসের পর মাস বিনা বিচারে জেলে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সমস্ত রীতি নীতিকে দু পায়ে মাড়িয়ে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে বর্তমানে কোভিড আক্রান্ত অবস্থায় মথুরার কৃষ্ণমোহন হাসপাতালে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে । তার খাদ্য, জল প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । গত চার দিনে তাকে একবারও শৌচাগারে যেতে দেওয়া হয় নি। এভাবে তাকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। তার স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছেন । সাংবাদিক সংগঠন তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে ।
(
অসুস্থ সাংবাদিক শৃঙ্খলিত
ধিক্কার ধ্বনিত হোক চারদিকে
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ১৯ বছরের এক দলিত তরুণী বীভৎস গণধর্ষণের পরিণামে প্রাণ হারান। তার দেহ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে চুপিসারে পুড়িয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ওই ঘটনায় সারা দেশে প্রবল ধিক্কার ধ্বনিত হয়। তা সত্বেও শাসক বিজেপি উচ্চবর্ণের দুষ্কৃতীদের পক্ষে দাঁড়ায়।
ওই ঘটনার সরেজমিন তদন্ত করতে যাওয়ার পথে ৭ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। তাদের মধ্যে তিনজনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলেও কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান সহ চারজনকে এখনও মারাত্মক ইউএপিএ ধারায় দেশদ্রোহীতার অভিযোগে আটকে রাখা হয়েছে। সুপরিচিত মালায়ালাম সাংবাদিক সিদ্দিকের মুক্তির দাবিতে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল ‘কেরল ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জারনালিস্ট’। সিদ্দিক নিজে ওই সংস্থার দিল্লি কমিটির সম্পাদক। সাংবাদিকদের সংগঠন ‘প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া’ও সিদ্দিকের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, যোগী আদিত্যনাথের সরকার পদে পদে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পদদলিত করতে বদ্ধপরিকর। ন্যূনতম মানবাধিকারও স্বীকার করে না ওই সরকার। এই মুহূর্তে অসুস্থ সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে মথুরার কৃষ্ণমোহন হাসপাতলের বেডের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমন ভাবে হাত বেঁধে রাখা হয়েছে যাতে তিনি খাবার এমনকি জল পর্যন্ত নিজে হাতে খেতে পারছেন না, চাইলে শৌচাগারেও যেতে পারছেন না! এই চরম অমানবিক আচরণ সইতে না পেরে তাঁর স্ত্রী রেহানা কাপ্পান সুপ্রিম কোর্টের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির কাছে এই মর্মে কাতর আবেদন জানিয়েছেন যে, হাসপাতাল থেকে তার স্বামীকে ফের জেলে পাঠানো হোক!
আমরা মুর্শিদাবাদ জেলা সাংবাদিক সংঘের তরফে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই বেআইনী এবং অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার দাবি জানাই।
বিপ্লব বিশ্বাস চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
সম্পাদক সভাপতি
মুর্শিদাবাদ জেলা সাংবাদিক সংঘ
২৬ এপ্রিল ২০২১)