বদলে যাবে কি জীবনের ধারাপাত!
পাশারুল আলম
প্রতিবেদন :- বিশ্ব যুদ্ধ চলছে, দেশে বিদেশে এই যুদ্ধ। দেশের সঙ্গে দেশের নয়, রাজার সঙ্গে রাজার নয়, ধর্মের সঙ্গে ধর্মের নয়, মানুষের সাথে মানুষের নয়, এই যুদ্ধ একটি ভাইরাসের সাথে। আমরা এখন সবাই ঘরবন্দী। এই বন্দীদশা জীবনের অনেক ধারায় বদলে দিতে চলেছে। সারাদিনের কাজের ব্যস্ততা কোথায় যেন হারিয়ে গেল, হারিয়ে গেল আমার দিন তারিখ দেখে নিদিষ্ট সফর সূচী। বড্ড অসহায়ের মতো চেয়ে আছি কবে উঠবে এই লক ডাউন। লক ডাউন উঠে গেলেও কি ফিরে পাব পুরোনো সেই নিয়ম রীতি। হয়তো না, বাঁধা পরবে আরো নতুন নতুন নিয়মে। চলার অধিকার হয়তো আসবে কিন্তু সামাজিক দুরুত্ব থাকবে আরও কিছুকাল। তাই মন বারবার অতীতকে ফিরে পেতে চায়। চাইলেই তো আর হবে না, এই সংকট যেতে আরও ঢের সময় বাকি।
তাই একলা ঘরে বসে একটু এই পৃথিবীটা দুচোখ ভরে দেখে নিই। প্রকৃতির এই রূপ হয়তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। মানুষের স্বাভাকিক জীবন আর প্রকৃতির স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক। রাতের অন্ধকার হোক কিংবা দিনের আলো, প্রকৃতি যে মেলেছে নতুন ডানা। বন্ধ হয়েছে মানুষের কোলাহল, স্বাধীনতা পেয়েছে প্রকৃতির আসর। নদী নালা খাল বিল, তাল তমাল মহুয়ার বন, পশু পাখি কিংবা আকাশমন্ডলী। সবাই যেন বলছে বেশ হয়েছে, হাসি মুখে বয়ে যায় বায়ু ধারা।
টিভির পর্দায় একঘেয়েমী খবরের ফাঁকে দাঁড়িয়ে যেতে মন করে তাদের পাশে। যারা এতদিন বঞ্চিত ছিল, যাদের শিশুরা বিষাক্ত বায়ু মন্ডলে লালিত হয়ে করছিল হাহাকার। আজ তাদের কুজন আর প্রাণ খোলা ডাক আমাকেও হাতছানি দেয়।
প্রয়োজনের থেকে অধিক আমদানির লোভে পুঁজির লড়াইয়ে যে বড় লোক সমাজ, তারা আজ গৃহবন্দী, আকাশে বাতাসে নেই আজ বারুদের শত্রু রাষ্ট্র বলে কেউ ক্যালানী দিতে চায় না। রাজধানী গুলো কেমন যেন উত্তেজনাহীন। নাগরিক আজ কেউ নগরমুখী নয়। পারমানবিক অস্ত্রের ঝলকানি থেমে গেছে নিমিষে। রাজ নেতাদের দেখানো স্বপ্নের হয়েছে সমাধি। চেনা পথ অচেনা, চেনা মানুষ বলে দূরে থাকুন, বন্ধুর সঙ্গে হাত মেলাতে গেলে হাতজোড় করে দেয় সটান। ভয় বলে তো একটা বস্তু আছে।
মা সন্তানকে ডেকে বলে খবরদার বাইরে যাবি না, স্বজনকে বলে সাবধানে থাকিস। রাস্তার ভিড় কিংবা বাজারের বেসাতি, তাবড় তাবড় রাজনীতির নেতাদের রাও নেই মাঠে ময়দানে। ভাগ্যিস কে যেন স্মার্ট ফোন তৈরী করেছিলো, তানাহলে সবার বুজরুকী বোঝাই যেত না। কাল কি হবে কেউ জানে না, শুধু ভাবে একটা কিছু বিহিত হোক, আর পারা যায় না। মনে মনে নাস্তিকও বলে ভগবান বাঁচাও।
বাড়ির চার দেওয়ালে ঘুরে ফিরে যখন অপ্রয়োজনে বিশ্রাম নিতে যাব, ঠিক সেই সময়ে পড়ার বই এর পাতায় দেখা ছবির পাখি আমার বাড়ির বাগানে। এরা আবার কোথা থেকে এল ? আগে তো কোনোদিন আমার বাড়ি আসেনি। সত্যি এমনটাই হল আজ ঘরে ঘরে। গঙ্গার জল এই বুঝি পবিত্র হল আমি বন্দী হওয়ার কারনে, নাকের ডগায় জমে থাকা কালো দাগ খুঁজে পাইনা কেন ? সেটা ভাবতে গিয়ে রাস্তার ওপার থেকে শুনি বন্য প্রাণীর ডাক। জঙ্গল ঘেঁষা পল্লীবাসীর নাকি পোয়াবারো, গৃহবন্দী লোকালয়ে ঘুরছে হাতি আর বাঘ। প্রকৃতি যখন হেসে খেলে, লক ডাউনকে স্বাগত জানাচ্ছে তখনই কিছু মানুষ বসেছে অর্থনৈতিক লোকসানের হিসাব করতে। হয়তো হবে লক্ষ কোটি ট্রিলিয়ন।
আমি আবার টিভির পর্দায় চোখ রেখে বুকে হাত দিলাম, শুনছি ভারতব্যাপী চলছে মৃত্যু মিছিল। মানুষ মরছে, নতুন নতুন মানুষকে ভাইরাস ধরছে, এই ছবি সত্যি করুন। একটা কিছু করতে পারলে ভালো হত। কি করব, এতদিন বোমা তৈরী করেছি, বন্দুক তৈরী করেছি, কারখানার পর কারখানা বসিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে নাম তুলেছি। ধর্ম ধর্ম খেলায় ভোট জয় করেছি। চিকিৎসায় হেলাফেলা, তার নগ্ন চিত্র আজ বুকে বাজে, ভেসে যায় ব্যবস্থাহীন ব্যবস্থার মৃত মানুষের লাশ। কাফন তুলে নিকেশ করতে চায় জীবনের শেষ চিহ্ন টুকু।
ভেবে ছিলাম পারমানবিক বোমার বোতাম আমার হাতে, আমাকে কে পায়। এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে আর আমি অসহায়ের মতো চেয়ে আছি বিজ্ঞান যদি কিছু একটা করে। এতদিন যাদের কদর করিনি তারাই আজ পথে নেমে সেবা দিচ্ছে। এতদিন ধর্মের নামে ঢের করেছি রাজনীতি, ভাগ করে যোগ করেছি বারে বারে। আজ প্রতিবাদীদের সমাজ সেবা দেখলে লজ্জা লাগে। আমার আন্তর্জাতিক মান মর্যাদা আজ কেউ দেখে না, কয়দিন আগে আমার অনেক নাম ডাক ছিলো, আজ কেন যেন মনে হয়, সব শূন্য। অশান্ত পৃথিবীটাকে শান্ত করেছে। এই এক রত্তি এক ভাইরাস।
কে এই ভাইরাস ? হাজার বছর ধরে অবাধে ঘুরেছি, কোনোদিন আসেনি সামনে, হঠাৎ কি হলো একেবারে তেড়েফুঁড়ে বিশ্বজুড়ে ঘুরছে, আমারই বানানো বিমানে চড়ে। আমার ঘরে এসে বলে যায় বন্ধ করো তোমার কলকারখানা, আমার দেশের নেতা মন্ত্রীদের ভয় দেখায় মিটি মিটি চোখে।
এখন মনে হয়, আমরা দোষ করেছি, অর্থের লোভে ভেঙেছি ওদের বাসা, তাই কি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে? এটা যুদ্ধ না প্রকৃতির প্রতিশোধ। ভাই—রাস যদি পারো আমাদের লোভ আর লালসা থেকে মুক্তি দিতে, যারা মৃত্যুঞ্জয়ী হবে তাদের দেখাবে সঠিক পথ।
এই যুদ্ধ থেমে গেলে পর বদলাবে কি জীবনের ধারাপাত?