রঘুনন্দনকে সামনে রেখেই পরাজিত মমতার উত্থান, মন্তব্য প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদকের
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : ১ আগস্ট (রবিবার) এবিএন নিউজে কংগ্রেসের উদ্যোগে রঘুনন্দন তেওয়ারীর মৃত্যু দিবস পালন উপলক্ষে একটি খবর প্রকাশ হয়। খবরের শিরোনাম ছিল, “রঘুনন্দনের পরিবারের কাউকে চাকরি দিলনা রাজ্য সরকার, মৃত্যু দিবস পালনের দিন অভিযোগ কংগ্রেস নেতার।” উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ছাত্র পরিষদের কর্মী রঘুনন্দনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাই যে রাজনৈতিক পটভূমিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল….একথা উস্কে দিল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। খবরের জেরে কংগ্রেসের বহু নেতা-কর্মীই রবিবার এবিএন নিউজ দপ্তরে যোগাযোগ করেন। এমনকি “রঘুনন্দনকে সামনে রেখেই পরাজিত মমতার উত্থান..” এমনই মন্তব্য করেন প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক বিবেক চক্রবর্তী।
প্রসঙ্গত: এবিএন নিউজে খবরটি প্রকাশ হতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সহ সভাপতি তথা বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক বিবেক চক্রবর্তী বলেন, ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। সেই বছরই ছিল লোকসভা ভোট। যাদবপুর লোকসভা আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তখন বেহালা তথা যাদবপুরের মানুষ কেউই পরিচিত ছিলেন না। শুধুমাত্র সদ্য প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর আবেগই সঙ্গবদ্ধ হয়ে মানুষ ভোট দিয়েছিলেন কংগ্রেসের নতুন মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আবেগ ভোটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত করেছিলেন সিপিএমের বলিষ্ঠ নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। তবে পরেরবার অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন সিপিএমের ডঃ মালিনী ভট্টাচার্য। আচমকা পরাজয়ের পরই মমতা কিছুটা থমকে যান বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল….বামফ্রন্টের আমলে বাসভাড়া বেড়েছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এরই প্রতিবাদে তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের নেতৃত্বে দিকে দিকে দলে দলে আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মীরা। ১ আগস্ট ঠিক এই রকমই একটি আন্দোলন সংগঠিত হয় দক্ষিণ কলকাতার তারাতলায়। যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। বিনা প্ররোচনায় বাম সরকারের পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কংগ্রেস ছাত্রনেতা রঘুনন্দন তেওয়ারী। এই ইস্যুকেই হাতিয়ার করে ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ২ আগস্ট বেহালা থানা অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মীরা। সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহালা থানায় ঢুকে ওসি’র চেয়ার দখল করে চেয়ারে বসে পড়েন। এই ঘটনায় চারিদিকে শোরগোল পড়ে যায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরের ঢেউ আছড়ে পড়ে রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কথা প্রসঙ্গে বিবেকবাবু বলেন, রঘুনন্দনের মৃত্যুর ইস্যুতেই ১৬ আগস্ট কলকাতা বন্ধ ডাকে কংগ্রেস। এইদিন কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোলমালের খবর আসতে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হাজরায় মিছিল চলছিল। মিছিলে সিপিএমের ক্যাডার লালু আলমের লাঠির আঘাতে জখম হন মমতা। তাকে ভর্তি করা হয় নার্সিং হোমে। খবরের বন্যায় ভেসে যায় রাজ্য থেকে শুরু করে দেশ। সেদিন থেকেই পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে রাজীব গান্ধী তাকে যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী পদে মনোনীত করেন। ইতিমধ্যে আচমকা লোকসভা ভেঙ্গে যাওয়ায় ১৯৯১ সালে লোকসভা নির্বাচন ঘোষিত হয়। যাদবপুর থেকে মমতার জেতা শক্ত বুঝেই তাকে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়। এখান থেকেই শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের উপাখ্যান, এমনই দাবি কংগ্রেস নেতা বিবেক চক্রবর্তীর।
বিবেকবাবু আরও বলেন, রঘুনন্দনকে সামনে রেখে যার রাজনীতির আঙ্গিনায় উত্থান এবং একইসঙ্গে জয়ের উপাখ্যান শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে সেই মমতার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব পাওয়া ও ২০১১ সালে রাজ্য শাসন ক্ষমতায় আসা….। তাই অবাক লাগে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে তিনি কি করে ভুলে গেলেন রঘুনন্দনকে ? সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের শাহিদদের পরিবারের সদস্যরা যদি চাকরি ও ক্ষতিপূরণ পায় তাহলে রঘুনন্দনের পরিবারের সদস্যরা আজ ৩১ বছরের পরও বঞ্চিত কেন ? এমনই হাজারো প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক বিবেক চক্রবর্তী। রাজনৈতিক বিশ্লষকরা মনে করছেন বিবেক চক্রবর্তীর এই মন্তব্য মমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের লড়াইয়ের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও উস্কে দিল।