পশ্চিমবঙ্গে গণপিটুনির ঘটনায় কেন শাস্তি হচ্ছেনা দোষীদের? প্রশ্ন তুলে সংখ্যালঘু কমিশনকে ডেপুটেশন কামরুজ্জামানের
সাবিবুর খান, কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের মত পশ্চিমবঙ্গেও দিনের পর দিন বাড়ছে মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা। সম্প্রতি বাসন্তীতে রফিকুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। দেড় মাস আগে এই পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হন সোনারপুরের পুলিশ কর্মী সুরাপ হোসেনও।
মব লিঞ্চিং নিয়ে কঠোর আইনের ঘোষণা হলেও তা এখনও কার্যকরী হচ্ছেনা কেন? এই প্রশ্ন তুলেই সংখ্যালঘু কমিশনে ডেপুটেশন দিলেন সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান।
ডেপুটেশন জমা দেওয়ার পর কামরুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এতদিন উত্তর প্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে মোব লিঞ্চিংয়ের মত অপরাধমূলক ঘটনার কথা শুনছিলাম। তবে এখন পশ্চিমবঙ্গেও এই পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তা অকল্পনীয়। সম্প্রতি বাসন্তীর চরবিদ্যায় পিটিয়ে হত্যা করা করা হয় রফিকুল ইসলামকে। অভিযোগ ওঠে, বিজেপির বিরুদ্ধে। দেড় মাস আগে সোনারপুরে পুলিশকর্মী সুরাব হোসেনকেও গণপিটুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
তাঁর আরও বক্তব্য, দোষীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছেনা বলেই এরকম ঘটনা দিনের পর দিন বাড়ছে। শাসক দল নিচ্ছেনা কোনওরকম ব্যবস্থাও।
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান প্রশ্ন তুলেছেন, মোব লিঞ্চিংয়ের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও কেন কার্যকর হচ্ছেনা? তাহলে কি তৃণমূল চাইছেনা দোষীদের শাস্তি হোক? এমনকি রাজ্যপালকে এই কার্যকর করার জন্য চিঠিও দেওয়া হয়নি শাসক দলের তরফ থেকে। এই সমস্ত বিষয় নিয়েই মাইনোরিটি কমিশনকে ডেপুটেশন দিলেন কামরুজ্জামান। কমিশনও আশ্বাস দিয়েছে, এই ঘটনা নিয়ে শাসক দলকে চিঠি দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কি হয়, তা সময় বলবে।
সোনারপুরে পুলিশ কর্মী সুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর পুলিশী অত্যাচার এবং বাসন্তীতে গণপিটুনিতে নিহত রফিকুল ইসলামের দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বুধবার পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মমতাজ সংঘমিত্রাকে ডেপুটেশন দিল সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহঃ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল।
সোনারপুরে পুলিশ কর্মী সুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর পুলিশী অত্যাচার এবং বাসন্তীতে গণপিটুনিতে নিহত রফিকুল ইসলামের দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ডেপুটেশন
গত ৬ই অগাস্ট, ২০২১, সোনারপুর থানার অন্তর্গত বেনিয়া-বৌ গ্রামের বাসিন্দা এবং পুলিশকর্মী সুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর হামলা, অকথ্য অত্যাচার এবং গ্রেফতারীর ঘটনা ঘটে। এই বর্বরোচিত ঘটনার নেতৃত্বে ছিল সোনারপুর থানার এসআই সোমনাথ দাস, এএসআই প্রিয়া সেন এবং ২০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার। আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পান নি সুরাফের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা-ও। সুরাফকে বাঁচাতে ছুটে যান সুরাফের আড়াই মাসের গর্ভবতী স্ত্রী তানিয়া পারভীন, তাঁকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেন সোমনাথ দাস। সুরাফের স্ত্রী তানিয়া পারভীন জানিয়েছেন যে গর্ভবতী জানা সত্ত্বেও প্রিয়া সেন ও সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর পেট ব্যথা ও রক্তস্রাব শুরু হয়ে যায় এবং অবশেষে গর্ভপাত হয়ে যায়।
পুলিশের এই বর্বরোচিত আচরণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিচার এবং অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, মাইনরিটি কমিশন, স্টেট পুলিশ ডিজি, বারুইপুর থানার এসপি, এসডিপিও, সোনারপুর থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ, রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন সুরাফ হোসেনের পরিবার। এখনো পর্যন্ত কোনো সদর্থক সাড়া মেলেনি। তাঁদের এই ইনসাফের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন গণসংগঠন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জীবনতলায় চুরির অভিযোগে মারধর এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে প্রাণ হারালেন রফিকুল মোল্লা(৩২) নামে এক মুসলিম যুবক। বাড়ি জীবনতলা থানার গাববুনি এলাকায়। ।
রফিকুলের পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় বাসন্তী থানার চড়বিদ্যা এলাকায় মারধর করা হয় তাকে। মারের চোটে তার হাত-পা ভেঙে যায়। ঘটনাস্থালেই লুটিয়ে পড়ে রফিকুল।
এলাকারই লোকজন রফিকুলকে ভর্তি করে বাসন্তী গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়।
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দুটি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করে নিম্মলিখিত দাবি জানিয়েছেন।
১. অবিলম্বে সোনারপুরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে।
২. সোমনাথ দাস, প্রিয়া সেন এবং অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সুরাফ হোসেন এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
৪. সুরাফ হোসেনকে কর্মক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মান সহ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সুরাফ হোসেনের বাড়ি থেকে লুঠ হওয়া সোনার গয়না, মোবাইল ফেরত দিতে হবে।
৫. মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে রাজ্য পুলিশের নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের দায় স্বীকার করতে হবে এবং এই ধরনের যে কোনো ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ এর নীতি গ্ৰহণ করতে হবে।
৬. বাসন্তীতে গণপিটুনিতে নিহত রফিকুল ইসলামের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ সহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৭. রাজ্যে কোথাও যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সংখ্যলঘু কমিশনকে সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংখ্যলঘু কমিশনের চেয়ারম্যান বিষয়দুটি নিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।এদিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের সহ সম্পাদক হাফেজ নাজমুল আরেফীন, শিক্ষক আলি আকবর প্রমুখরা।