সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসা- পরিষেবায় অবহেলার অভিযোগে ঘিরে বিতর্ক, তদন্তের দাবি
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপধ্যায়ের মৃত্যু নিয়ে শেষ পর্যন্ত সৃষ্টি হলো নানা বিতর্ক। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যে, কলকাতার এসএসকেএম হসপিটালে উডবার্ন ওয়ার্ডে ভিভিআইপি কেবিনে (৪ অক্টোবর) সুব্রতবাবুর মৃত্যুর একঘণ্টা আগেও কোনো সিনিয়র ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না। সুব্রতবাবুর সহযোগী মুনির নামের এক দলীয় কর্মী সংবাদমাধ্যমে জানান, দাদার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বৌদিমনি (সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়) আমাকে শিগগিরই ডাক্তার ডাকতে বলেন, কিন্তু বারংবার ডাঃ স্বরাজ মণ্ডলকে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তারপর কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার এসে পাম করতে লাগলো। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দাদা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর মৃত্যুর একঘণ্টা আগেও কোনও বড় ডাক্তারকে হসপিটালে পাওয়া যায়নি বলে তার অভিযোগ। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে দাবি সাধারণ মানুষের।
ওইদিন হসপিটাল চত্বরে দাঁড়িয়ে মুনিরের অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারেরা এসে পাম করতে শুরু করলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা নাগাদ দাদা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তারপর হসপিটালের নানা প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও প্রায় ২ ঘণ্টা সময় কেটে যায়। রাত ৯ টা ২২ মিঃ নাগাদ হসপিটালের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে বহু মানুষের অভিযোগ, রাজ্যের সবচেয়ে বড় সরকারি সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল এসএসকেএম-এ রাতে সিনিয়র ডাক্তার থাকেন না কেন ? এবিষয়টি অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত। যার জন্যই হয়তো চলে যেতে হলো সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুজোর পরই শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিছুটা সুস্থ হয়েও উঠছিলেন । তাঁর বাড়ি ফেরার কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু হসপিটাল সূত্রের খবর, কালী পুজোর দিনই হঠাৎ কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন সুব্রতবাবু….তারপরই এই ঘটনা। স্বাভাবিক ভাবে এখানেই প্রশ্ন উঠছে, একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর চিকিৎসার দায়িত্বে যেসব সিনিয়র ডাক্তাররা ছিলেন তারা সেদিন সেই সময় কোথায় ছিলেন ? চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা গুরুতর অসুস্থ একজন মানুষকে ফেলে ওই সিনিয়র চিকিৎসকেরা হসপিটাল ছেড়ে কি কাজে চলে গিয়েছিলেন ? কালীপূজোতে কোনও আনন্দ-ফূর্তি করতে নাকি কোনও পার্টিতে ? বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন বলে রাজ্যের মানুষের দাবী।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, একজন ভিভিআইপি তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর ক্ষেত্রেই যদি চিকিৎসা পরিষেবার এই হাল হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা সুরক্ষিত তা সহজেই অনুমেয়। তাই অবিলম্বে সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত হসপিটাল ও নার্সিং হোমগুলিতে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সরকারি ভাবে নজর রাখা ও তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তারা।