পুরভোটে স্থানীয় যুব ও মহিলাদের প্রাধান্য, তবে তৃণমূলের বয়স্ক ও অসুস্থ কো-অর্ডিনেটরা বাদ পড়তে পারেন : সূত্র
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : রাজ্যে বিগত বিধানসভা নির্বাচনে এবং বিধানসভার উপনির্বাচনে ৭টি আসনে বিজেপিকে শোচনীয় ভাবে পর্যদুস্ত করার পর স্বাভাবিক ভাবেই পুরভোটে আমজনতার নজর এখন তৃনমূলের প্রার্থী তালিকার দিকে। কারণ বিধানসভা ভোটের নিরিখে কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪ টিতেই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে এই পুরভোটে গেরুয়া শিবির কতটা সাফল্য পায় সেদিকেও নজর রয়েছে ভোট বিশ্লেষকদের। তবে কে কে তৃনমূলের প্রার্থী তালিকায় স্থান পেতে পারেন, আর কারা কারা বাদ যেতে পারেন তা নিয়েই এখন পাড়ার অলিতে-গলিতে আলোচনা তুঙ্গে। তবে স্থানীয় যুব ও মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেই তৃনমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি তৃনমূলের বয়স্ক ও অসুস্থ কো-অর্ডিনেটররা বাদ যেতে পারেন বলে সূত্রের খবর। বিশেষ করে অসুস্থ ও ৮০ বছরের বেশি বয়সের কো-অর্ডিনেটররাই এই বাদের তালিকায় পড়তে চলেছেন বলেই জানা যাচ্ছে।
এছাড়া যেসব কো-অর্ডিনেটররা ঠিক মতো জনসংযোগ রাখেন না, তারাও এই বাদের তালিকায় পড়তে পারেন বলেই বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। কলকাতা পুরসভায় এখন নজরকারা ওয়ার্ডের মধ্যে বেহালার ১২১, ১২৬, ১২৮, ১৩১ ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ওয়ার্ড। সূত্রের খবর অনুযায়ী মহিলা ও যুবদের প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন স্থানীয় মহিলা ও যুব সংগঠকরা। যেহেতু এটা স্থানীয় স্তরের নির্বাচন তাই স্থানীয় প্রার্থীদেরই গুরুত্ব দেওয়া হবে, এমনটাই খবর তৃণমূল সূত্রের।
বেহালায় ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক লাল চট্টোপাধ্যায় প্রায় দেড় বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন, তাই এই ওয়ার্ডটি কাউন্সিলরহীন অবস্থায় রয়েছে। কাউন্সিলরের অবর্তমানে স্থানীয় যুব নেতারাই আপদে-বিপদে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বিগত বিধানসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে ৪ হাজারেরও বেশি ভোটে “লিড” পাইয়ে দিয়েছেন যুব নেতৃত্ব।
স্বাভাবিক ভাবেই ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় যুব নেতাদের মধ্য থেকেই প্রার্থী স্থির করা হতে পারে বলেই খবর। অন্যথায় তৃণমূলের প্রয়াত কাউন্সিলর মানিক চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে মানসী মুখোপাধ্যায়কেও প্রার্থী করতে পারে দল। কিন্তু বহিরাগত অন্য কোনও প্রার্থী দেওয়া হলে এখানকার বাসিন্দারা কোনো মতেই মেনে নেবেন না, এমনকি দলের কর্মীদের মধ্যে অনেকেই বসে যেতে পারেন বলে খবর। এলাকার মানুষও চাইছেন বিপদে-আপদে যাকে পাশে পাওয়া যায় এমন কোনও স্থানীয় যুব নেতাকে টিকিট দিক দল।
একই চিত্র ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে…..এখানে দলীয় কর্মী থেকে শুরু করে বাসিন্দারাও চাইছেন স্থানীয় কোনও ব্যক্তিকে। এব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা যুব সম্পাদক সুদীপ রায় (রানা)। ১২৮ নম্বরেও একই দাবি স্থানীয় কোনও শিক্ষিত ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হোক। কারণ এখানে সিপিমের প্রার্থী হচ্ছেন রত্না রায় মজুমদার। যিনি কলকাতা পুরসভায় বিরোধী দলনেত্রী, তথা এই ওয়ার্ডেই ৩০ বছরের অপরাজিত কাউন্সিলর। তাই এই হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হলে স্থানীয় কোনো বাসিন্দাকেই চাইছেন এলাকার মানুষ। এক্ষেত্রে দলের দক্ষ সংগঠক ও আইনজীবী সুব্রত মিস্ত্রির কথাই বাসিন্দাদের মুখে শোনা যাচ্ছে। যাকে তৃণমুলের সমস্ত কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকায় পাওয়া যায় বলে দাবি এলাকার মানুষের।
পুরভোট স্থানীয় স্তরের নির্বাচন, তাই ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। বহিরাগত কোনও ব্যক্তিকে প্রার্থী মানতে নারাজ তৃনমূল কর্মী থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। যাকে সবসময় মানুষের সুখে-দুঃখে পাওয়া যায় তাকেই চাইছেন এলাকার মানুষ। বেহালার কয়েকটি ওয়ার্ড পরিক্রমা করে জানা গেল, প্রতিটি ওয়ার্ডে একই দাবি, প্রার্থী করা হোক স্থানীয় কোনো মানুষকে। দলের শীর্ষ নেতারা মানুষের এই দাবিকে উপেক্ষা করলে, কিছু কিছু ওয়ার্ডে জয় পাওয়া কঠিন হতে পারে বলেই ধারণা অধিকাংশ তৃনমূল কর্মী-সমর্থকদেরও।