দীর্ঘ দুবছরের কোভিড মহামারীর আতঙ্ক ও ভয় কাটিয়ে বাংলা নববর্ষ কে বরণ করে নিল বাঙালী।
বহরমপুর,অয়ন বাংলা :- দীর্ঘ দুবছরের কোভিড মহামারীর আতঙ্ক ও ভয় কাটিয়ে বাংলা নববর্ষ কে বরণ করে নিল বাঙালী। নতুন বছর যেন ভালো কাটে এই কামনায় শুক্রবার সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন মন্দিরে উপচে পড়া ভিড় ছিল ভক্তদের । মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি দোহালিয়ার প্রাচীন কালী মন্দিরে ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে, ঐতিহাসিকদের মতে বাঙলার তৎকালীন শাসক সেন বংশীয় রাজা বল্লাল সেনের আমলে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি ব্লকের দোহালিয়ায় এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। মা এখানে ব্যাঘ্র রূপিণী। আগে জঙ্গলাকীর্ণ এলাকার মধ্যে এই মন্দির থাকলেও এখন কাল পরিবর্তনের সাথে সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মন্দির ও তৎসংগগ্ন এলাকায়। মন্দিরের সেবায়েতরা জানালেন, হাজার বছর আগে বল্লাল সেনের আমলে উত্তর পূর্ব ভারত থেকে আগত এক সন্ন্যাসী নদী পথে যাওযার সময় এখানে বসে তপস্যা করেছিলেন। তপস্যা চলাকালীন বিভিন্ন রূপে তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করতে উদ্যত হন আসুরিক শক্তি গণ। এতে ক্রোধান্বিত হয়ে মা দক্ষিণা কালী ব্যাঘ্ররূপে দেখা দেন। তখন থেকেই এখানে ব্যাঘ্র রূপে মা দক্ষিণাকালীর পূজো হয়ে আসছে। প্রতিবছরই এই মন্দিরে ধুম ধামের সাথে মা দক্ষিণা কালীর পূজো হয়ে থাকে। পাশাপাশি সারবছরই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পূজো হয়। সারা বছর যাতে ভালো কাটে তার জন্য বছরের প্রথম দিনে সকাল থেকেই পূজো দিতে ভিড় করেছিলেন ভক্তরা। আবার এই মন্দির নিয়ে অন্য গল্পও প্রচলিত আছে।কেউ কেউ বলেন এক সিদ্ধ পুরুষ তপস্যায় বসে মা কে দেখতে পান। তখন মা তাঁকে মনোবাসনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি অন্ধ। অন্ধত্ব দূর করতে কোন কিছুর ব্যবস্থা করুন। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে আসেন এবং এই পুকুরে স্নান করে গাছের শিকড় নেন অন্ধত্ব দুর করার বাসনায়। মন্দিরে পাশের পুকুরের জল কখনো পরিবর্তন করা হয়না। কারো মতে একবার জল পরিবর্তন কালে পুকুরের মাটি ফেটে গিয়েছিল সেই থেকে এই পুকুরে জল এক ভাবে রাখা আছে। নিয়ম নিষ্ঠা ও আচার মেনেই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের পূজো হয় আজও। পাশাপাশি জেলার সদর শহর বহরমপুরেও মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণকারীরা পরিবেশন করেন বাংলার নিজস্ব আলকাপ, ছৌ ও আদিবাসী নাচ। আয়োজকরা জানান, বহরমপুরের নিজস্ব উৎসব এই শোভাযাত্রা। তাই নিজস্ব প্রথায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়। সকলের হাতে তুলে দেওয়া হয় গাছের চারা। গাছই তো নতুন প্রাণের উৎস। তাই গাছের চারা উপহার দিয়েই নতুন বছরে সুস্থ থাকার কামনা করা হয়।