ঝড়বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই চলছে, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন দ্বারা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন।
নিজস্ব সংবাদদাতা ,কোলকাতা :- ঝড়বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই চলছে, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন দ্বারা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন। শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা বিকাশ ভবনের পাশে বিক্ষোভ বসেছে । মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দূর্নীতি প্রকাশ্য এসেছে। যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়েছে, এই অভিযোগ তুলেছে “মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পাশ প্রার্থী মঞ্চ”। বিকাশ ভবনে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের গেট থেকে ১০০ মিটার দূরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভের অনুমতি দিয়েছিলেন বিচারপতি সম্পা সরকার। “মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পাশ প্রার্থী মঞ্চ”আজ ২২ই জুন অর্থাৎ বুধবার থেকে অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছে । প্রাথমিক ভাবে ২ সপ্তাহের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের গেজেটের কোন নিয়ম মেনে নিয়োগ করেনি কমিশন। বিজ্ঞপ্তির ৩১৮৩ শূন্যপদের মধ্যে মাত্র ১৫০০ নিয়োগ হয়েছে। সেখানেও প্রচুর দুর্নীতি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কমিশন কে ভেঙে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়শই উঠে আসে। সমস্যার সমাধানে হাইকোর্ট রায় দিলেও কমিশনকে কার্যকর করতে দেখা যায়নি। তাই আবারো যদি অভিযোগ আসে তবে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
মূলত ২০১৩ সালে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেয় সেই সময় মোট শূন্যপদ ছিল ৩১৮৩ এবং গেজেটে উল্লেখ ছিল, লিখিত পরীক্ষার আগের দিন (০৫/০৯/২০১৬) পর্যন্ত ঘোষিত শূন্যপদের সাথে আপডেট ভ্যাকান্সি যোগ হবে। কিন্তু ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৮ সালে যখন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তখন পূর্ব ঘোষিত ৩১৮৩ র মধ্যে ১৯০০ জন কে রেকোমেন্ডেড করা হয়। মাদ্রাসা গুলোতে নিয়োগ হয় ১৫০০ এর মত।
২০১৩ সালের ১৫০০ শূন্যপদ অর্থাৎ অর্ধেক সীট পূর্ণ করেনি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। গেজেট রুলস অনুযায়ী, শূন্যপদ বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও বিজ্ঞপ্তির ঘোষিত শূন্যপদকে কমিয়ে দেয়। এমনকি কোনো প্যানেল প্রকাশ না করে কিছু জন কে নিয়োগ দিয়ে দিয়েছে। গেজেট রুলস ২৩ অনুযায়ী ডি আই অফিস কমিশনের ওয়েবসাইট, বোর্ডে সেই প্যানেল প্রকাশ করার কথা বলা থাকলেও সেই প্যানেল প্রকাশ করেনি। শূন্যপদ কমানো ও দূর্নীতি কে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্যই প্যানেল প্রকাশ করেনি দূর্নীতির আঁতুড়ঘর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন।
চাকরিপ্রার্থীরা আর টি আই করলেও সঠিক রিপোর্ট অদ্যাবধি কাউকে দেওয়া হয়নি। একজনের আর টি আই দেওয়ার পর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দূর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ায় আর টি আই দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আরও কিছু জনের আর টি আই দিলে সেখানেও Academic Evaluation গেজেট রুলস ২০১০ অনুযায়ী কারোর মিলে না বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম। এই দূর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ায় কমিশন আর টি আই তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়।।
যাদের Academic বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা কমিশনে যোগাযোগ করলে কিছুজনের academic কমিয়ে দেয়। কমিশনে প্রশ্ন করা হলে, তারা উত্তরে বলেন, আমরা গেজেট রুলস ২০১০ অনুযায়ী প্যানেল তৈরি করিনি। তাহলে তো ২০১৩ সালের বিজ্ঞপ্তির যে কজন কে নিয়োগ করেছে সেই নিয়োগ ও ভুয়ো পুরো প্যানেল ভুয়ো। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পাশ চাকরপ্রার্থী মঞ্চ এর দাবী তাহলে সেই ভুয়ো তালিকা বাতিল করতে হবে।। এই দূর্নীতি যুক্ত প্যানেল বাতিল করতে হবে।।
এক হাই মাদ্রাসায় দুজন শিক্ষক-শিক্ষিকা হাতে নাতে ধরা পড়েছিলেন। তাদের রেকোমেন্ডেড পেপারে কমিশনের স্বাক্ষর ছিল। স্থানীয় ডি আই প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছিলেন, কিন্তু কমিশন চাপ দিয়ে তদন্ত বন্ধ করে দেন।
২০১৮ সাল থেকে চাকরিপ্রার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যচ্ছেন। কখনো ধর্মতলা, কখনো হাজরা মোড়ে কিংবা বিকাশ ভবন চত্বরে। কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি মিলেছে কখনো মিলেছে লাঠিপেটা। সুপ্রিমকোর্ট এর নির্দেশে অনধিক ২৬০০ এর উপর নিয়োগ করতে হবে। কমিশন সেই নির্দেশ মান্যতা দেয়নি। হাইকোর্ট বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের জন্য কনসিডারেশন অর্ডার দিলেও কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রৌফ সরাসরি জানিয়ে দেন, ‘আমি চাকরি দিব না, যা করার করে নিন।’
বলাবাহুল্য যে, রাজ্যের মাদ্রাসাগুলো বিভিন্ন সময়ে কমিশনের কাছে শিক্ষক চেয়ে পাঠালে উলটে কমিশন সেই সমস্ত মাদ্রাসাগুলোর গ্রান্ট এড কেড়ে নেবার হুমকি দেন। এমনকি প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রৌফ সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকার হেনস্থা করেন। ফলত তারা মাদ্রাসার পঠন পাঠন স্বাভাবিক রাখতে, শিক্ষক নেবার জন্য হাইকোর্টের দারস্থ হন। দীর্ঘদিন মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায়, মাদ্রাসাগুলোতে সঠিক অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পার করে চলে গেল অথচ বিষয়ভিত্তিক সাবজেক্ট টিচার ছাড়াই।
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের দাবী, এই দূর্নীতি দূর করতে নম্বর সহ গেজেট রুলস ২৩ অনুযায়ী প্যানেল প্রকাশ করতে হবে। ২০১৩ সালের যে ১৫০০ শূন্যপদ এখনো পড়ে রয়েছে সেই শূন্যপদে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সেখানে নিয়োগ করতে হবে। এস এস সি তে দফায় দফায় নিয়োগ করে আপডেট ভ্যাকান্সি তে, আবার কিছু আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সরকার মানবিকতা দেখিয়ে ভ্যাকান্সি বৃদ্ধি করে নিয়োগ করতে যাচ্ছে, অথচ মাদ্রাসায় ভ্যাকান্সি পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন নিয়োগ নেই। প্রায় ১০০০০ হাজার ভ্যাকান্সি। ঘোষিত সীটই পূরণ হল না কেন? আমাদের অবিলম্বে আপডেট ভ্যাকান্সিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, নতুবা আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে। জীবন মরণ সংগ্রামে আমরা আমাদের আহুতি দিব। মাদ্রাসা পাশ প্রার্থী মঞ্চর রাজ্য সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন মাদ্রাসা গুলোতে শিক্ষক নেই অথচ কমিশনে উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ করছেন না।
স্কুল গুলোতে ২০১৭ সালের শূন্যপদ গুলোতে নিয়োগ করে আবার ৬০০০নতুন শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু মাদ্রাসা গুলোতে ২০১৩ সালের ১৫০০শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। অবিলম্বে তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করুন