‘সবাইকে বাঁচাতে পারলাম না’, হরপা বানে তলিয়ে যাওয়া ৮ জনকে উদ্ধার করেও আক্ষেপ মহম্মদ মানিকের
ওয়েব ডেস্ক:- সাক্ষাৎ দেবদূত! হড়পা বান এসে যখন সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে নদী থেকে চরে উঠতে তড়িঘড়ি করছে, সেই সময় চরে ওঠা দূরস্ত, তড়িঘড়ি অন্যদের বাঁচাতেই এগিয়ে আসেন মহম্মদ মানিক। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অন্যদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তিনি। আর মহম্মদের এই তৎপরতায় প্রাণে বেঁচেছেন ১০ জন। একেবারে ১৫ ফুট উঁচু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ১০ জনের প্রাণ বাঁচান। দশমীর রাতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের সময় এভাবে এতজনের প্রাণ বাঁচিয়ে এখন গ্রামের ‘হিরো’ হয়ে উঠেছেন মহম্মদ মানিক।
তেশিমলা গ্রামের যুবক মহম্মদ মানিক। সকলেই তখন আনন্দের সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জন দেখছিলেন। ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী বিভিন্ন চা বাগান এলাকা থেকে পুজো উদ্যোক্তারা তাঁদের প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন দিতে আসেন মাল নদীতে। আর সেই বিসর্জন দেখতে ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার-হাজার মানুষ বিসর্জন ঘাটে জড়ো হয়েছিলেন। আর তাঁদের মাঝেই উপস্থিত ছিলেন মহম্মদ মানিক। প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যখন চলছিল, সেই সময় আচমকা নদীতে হড়পা বান আসে। চোখের সামনে মানুষকে ভেসে যেতে দেখেন মানিক। আর সেই দৃশ্য দেখে কেবল নিজের কথা ভাবতে পারেননি মানিক। কোনও কথা চিন্তা না করেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে ভেসে যেতে থাকা মানুষগুলোকে বাঁচাতে। যেখানে হড়পা বানে জলে ভেসে গিয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে মানিক ১৫ ফুট উঁচু থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ১০ জনের প্রাণ বাঁচান। আর এই মহৎ কাজ করার পর থেকে গ্রামের হিরো হয়ে গিয়েছেন মানিক।
প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, প্রায় পনেরো ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আটজনকে উদ্ধার করে পারে নিয়ে আসেন মানিক। ঘটনায় নিজেও আহত হন। মাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। বৃহস্পতিবার মানিকের এই সাহসিকতার গল্প ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছবি দিয়ে প্রশংসাও করেন অনেকেই। প্রতিবেশী বাবু প্রধান জানান, মানুষের বিপদ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মানিক। গ্রামে রক্তদান শিবির হলেই এক ডাকে মানিককে পাওয়া যায়।
কিন্তু তবে এই মুহুর্তে নিজের প্রশংসা শুনতে ভাল লাগছে না মানিকের। তিনি বলেন, “চোখের সামনে মানুষ গুলোকে ভেসে যেতে দেখলাম। যাদের পেরেছি পাড়ে তুলেছি। যাদের পারিনি তাদের হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারছি না।” ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা না ঘটুক এই প্রার্থনাই জানায় মানিক।
জলে ভেসে যেতে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে মহম্মদ মানিকও আহত হন। তাঁর পায়ে আঘাত লাগে। রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে । তবে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মানিককে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানিক যেভাবে এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচালেন, তাতে তিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছেন। বলা যায়, তেশিমলা গ্রামের যুবক এখন হিরো।
মহম্মদ মানিক বলেন, “আমি বন্ধুর সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলাম মাল নদীর ঘাটে। সেখানে দেখতে পাই, আচমকাই নদীর জল বেড়ে গিয়েছে। জলের স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল একের পর এক মানুষ। আর চিৎকার করে বাঁচার আর্তনাদ করছিল সকলে। তাই আমি কোনও কিছু চিন্তা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই। একের পর এক ভেসে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করতে শুরু করি। আমি সাঁতার জানি। তাই মৃত্যুর ভয় না করে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। নিজেও আহত হয়েছি। তবে এতগুলো মানুষকে বাঁচাতে পেরে ।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের বাসিন্দা রাব্বু প্রধান বলেন, আমি বুঝে ওঠার আগেই দেখি মানিক তার মোবাইল ঘড়ি আমার হাতে দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিল। আমি সাঁতার পারি না বলে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখি নদীতে ভেসে যাচ্ছিল অনেক মানুষ। তাদের নদী থেকে টেনে উদ্ধার করে মানিক। আমাদের গ্রামের হিরো ও এখন।