ওয়েব ডেস্ক:- জুরাসিক যুগে যেমন ভাবে ডাইনোসররা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়ালেও ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে গিয়েছিল এবং পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সেই পথেই দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলার সিপিএম।
২০২৩ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের সেই নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ষোল কলা পূর্ণ হল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বিধানসভা থেকে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরে সিপিএম যে মহাশূন্যের পথে যাত্রা শুরু করেছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার ষোল কলা প্রাপ্তি হলো।
বাংলার যে ২২জেলায় পঞ্চায়েত ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত গঠনের নিরিখে ১৬ জেলা থেকে মুছে গিয়েছে সিপিএমের অস্তিত্ব।
বাংলার ৮ জুলাই এবারে ভোটগ্রহণ হয়েছিল মোট ৩৩১৭ গ্রাম পঞ্চায়েতে। তার মধ্যে তৃণমূল নিরঙ্কুশ ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে ২৬৪১ পঞ্চায়েতে, বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে মাত্র ২৩০ পঞ্চায়েত, সিপিএম ১৯, কংগ্রেস ১১, অন্যান্যরা যাদের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলের নির্দল তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ১৪৯ পঞ্চায়েতে এবং এখনো পর্যন্ত ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে ২৬৭ গ্রাম পঞ্চায়েত।
চন্দ্রযানের থেকেও দ্রুত সিপিএমের মহাশূন্য যাত্রা২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত সিপিএমের যেটুকু ভোট অবশিষ্ট ছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র তীব্র মমতা বিরোধিতা এবং নিজেদের ধান্দাবাজির জন্য আলিমুদ্দিনের কমরেডরা একদিকে বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত করে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক পাঠিয়ে দিয়েছিল রামের।
তার ফলে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বিধানসভা থেকে শূন্যে পরিণত হয় সিপিএম। তার জন্যে আরও একটি বড় কারণ ছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে মোঃ সেলিম যেভাবে চরম সম্প্রদায়িক মৌলবাদী দল ভাইজানের আইএসএফের সঙ্গে জোট গঠন করেছিলেন এবং গলাগলি করে বিজেপিকে সুবিধে পাইয়ে দিতে তৃণমূলের মুসলিম ভোট ব্যাংকে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছিলেন। তা মেনে নেয়নি বাংলার সংখ্যালঘু মুসলিমরাও।
সিপিএম বাংলার ২২জেলার পঞ্চায়েত ভোটের মধ্যে যে ১৬ জেলায় শূন্য পেয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট গঠন করতে সেই তালিকায় একেবারে প্রথমে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, কোচবিহার, ঝাড়গ্রাম, কালিম্পং, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, আলিপুরদুয়ার, হাওড়া, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া, মালদহ বীরভূম এবং দক্ষিণ 24 পরগনা। সামগ্রিকভাবে বাংলার ২২ জেলায় যে ৩৩১৭ গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোট গ্রহণ হয়েছিল তার মধ্যে সিপিএম তথা বামেদের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ১৯ গ্রাম পঞ্চায়েত।
কংগ্রেস মুছে গিয়েছে ১৮ জেলা থেকে
একদিকে সিপিএম আর অন্যদিকে মোদির সঙ্গে অশুভ আঁতাত করে বাংলায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যেভাবে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছেন, তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে বাংলার ১৮ জেলা থেকে মুছে গিয়েছে কংগ্রেসের অস্তিত্ব।
১৮ জেলার নাম লেখার তুলনায় যে চার জেলায় কোনমতে টিকে রয়েছে কংগ্রেস সেই ৪ জেলার নাম লেখাই সুবিধেজনক।
পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং পুরুলিয়া মিলিয়ে মোট ১১ গ্রাম পঞ্চায়েতে টিম টিম করে জ্বলে রয়েছে কংগ্রেস।
২ জেলায় নিশ্চিহ্ন বিজেপি
বাংলা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি নাকি দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে। বাংলার মানুষকে বা আরো বেশি করে নিজেদের দলের নেতৃত্ব এবং আরএসএস নেতাদের বিভ্রান্ত করার জন্য এমন এক আকাশকুসুম দাবি করে চলেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।
একটু পরিসংখ্যান বিচার করলেই দেখা যাবে ২২ জেলায় পঞ্চায়েত ভোট গ্রহণ হলেও তার মধ্যে দুই জেলায় শূন্যে পরিণত হয়েছে শুভেন্দু দিলীপের বিজেপি। তার মধ্যে রয়েছে দিলীপ ঘোষের নিজের জেলা ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলা।