বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গ স্বাধিকার রক্ষা মঞ্চের উদ্যেগে সাচার রির্পোট প্রকাশের ১৮ বছর বিষয়ক এক সেমিনার ও বই প্রকাশ অনুষ্ঠান

Spread the love

বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গ স্বাধিকার রক্ষা মঞ্চের উদ্যেগে সাচার রির্পোট প্রকাশের ১৮ বছর বিষয়ক এক সেমিনার ও বই প্রকাশ অনুষ্ঠান ।

সাচার কমিটির রির্পোট এর আঠারো বছর পরেও মুসলমান সমাজের সমস্যার সমাধান এখনও অধরা

নিজস্ব সংবাদদাতা,বহরমপুরঃ ভারতে মুসলমান সমাজের নানান সমস‍্যা, সামাজিক ,অর্থনৈতিক ,দেশের নিরিখে তাঁদের অবস্থান কী শিক্ষাগত দিক থেকে, কী অর্থনৈতিক দিক থেকে, কী সামাজিক দিক থেকে?
২০০৬ সালে বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার কে কমিটির প্রধান করে একটি রির্পোট পেশ করেন ,যেটা সাচার রির্পোট নামে প্রকাশিত হয় । সেই রির্পোট প্রকাশের আঠারো বছর আজ অতিবাহিত সেই বিষয়কে সামনে রেখে বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে সেমিনার অনুষ্ঠিত হল ।

২০০৬ সালে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল সাচার কমিটি‌।যে কমিটির শীর্ষে ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রাজেন্দ্র কুমার সাচার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকার এই নির্দেশ এই রির্পোট তৈরী হয় । এই সেমিনার এ উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ হাইকোর্টের আইনজীবি সরদার আমজাদ আলী ,ড.আফসার আলী ও ড.আনিসুজ্জামান ।
এর পাশাপাশি একটি বই প্রকাশ হয় ।

“সাচার কমিটির আঠারো বছর-একটি পূনর্মূল‍্যায়ন”

হাসিবুর রহমান তার সাচার পরবর্তী আঠারো বছরে মুসলিম জনজীবনঃ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি পুনর্মূল‍্যায়ন প্রবন্ধে দাবি করেছেন “সাচার কমিটির রিপোর্টটি ৭ই নভেম্বর ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা পড়ে। কমিটি মুসলিম সম্প্রদায়দের প্রতি সীমাহীন বঞ্চনা ও উন্নয়নের ঘাটতি সহ অঢেল তথ্য উপস্থাপন করা করেছিল । প্রতিবেদন প্রকাশের পর জানা যায় – মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি তথাকথিত সরকারি তোষণের যে প্রচার ছিল – আসলে তা ছিল সব্বৈব মিথ্যা গল্প মাত্র। সরকারি নথিতে বরং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।”

প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাধিকার রক্ষা মঞ্চ প্রকাশিত “সাচার কমিটির আঠারো বছর-একটি পূনর্মূল‍্যায়ন” গ্রন্থে। রবিবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে বইটির মলাট উন্মোচিত হয়। ওইদিন মঞ্চের পক্ষ থেকে একই বিষয়ে একটি আলোচনা সভার ও আয়োজন করা হয়েছিল। আলোচনা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সর্দার আলী আমজাদ, সিধু কানহু বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ‍্যাপক আনিসু্জ্জামান, অধ‍্যাপক আফসার আলী সহ অন‍্যরা। তাঁদের বক্তব্যে উঠে এসেছে কোথায় এখনও গলদ রয়েছে। কোথায় সমাধান হয়েছে সাচার রিপোর্ট অনুযায়ী মুসলিম সমাজের সমস‍্যা,বতমানে এর বাস্তবতা।

প্রকাশিত গ্রন্থে সন্তোষ রাণার একটি প্রবন্ধ পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। সাচার রিপোর্টঃ মুসলমানদের বঞ্চনা, বৈষম্য ও অবদমনের দলিল প্রবন্ধে তিনি দাবি করেছিলেন, “শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের মাধ‍্যমে একটি আইনি ব‍্যবস্থা না নিলে মুসলমানদের জন্য যা কিছুই করা হোক না কেন, তার সুফল তাঁদের কাছে পৌঁছবে না। ভারত সরকার সেই মূল প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছেন।”

প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বর্তমান তৃণমূল নেতা মইনুল হাসান লিখেছেন “এখনও মুসলমানদের মধ‍্যে আধুনিক, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার অভাব আছে। এব‍্যপারে ব‍্যক্তিগত উদ‍্যোগ বা বেসরকারি উদ‍্যোগ অনেক থাকে। সেগুলো কার্যকরী অনেক। কিন্তু সরকারি উদ‍্যোগ ছাড়া বিষয়টি পূর্ণতা পেতে পারে না। সারা দেশে মুসলমান বাড়ির ছাত্রদের মধ‍্যে মাত্র চার শতাংশ মাদ্রাসায় পড়ে। প্রায় সবাই পড়ে সাধারণ বিদ‍্যালয় বা কলেজে। সেখানে এবং মুসলমান অধ‍্যূষিত এলাকায় আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। কাছাকাছি হতে হবে, যাতে মেয়েরদের ও পড়াশুনার হার বাড়ে । মেয়েদের মধ‍্যে শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু এখনও কম বয়সে বিয়ের প্রবণতা কিন্তু কমে নি। ফলে উচ্চশিক্ষায় মুসলমান বাড়ির মেয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে মেয়েরা শিক্ষা না পেলে সমাজ এগোতে পারে না।”

সংগঠনের পক্ষ থেকে এদিন মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়া, জেলায় মেয়েদের জন্য আরও তিনটি কলেজ স্থাপন করা ,ভাবতা কলেজ দ্রুত বাস্তবায়ন , জেলায় আরো মহিলা কলেজ তৈরী করা সহ জেলায় আরো একটি মেডিক্যাল কলেজের দাবি তোলেন মঞ্চের সভাপতি ডাঃ মীর হাসনাত আলী। দীর্ঘদিন যাবৎ আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি থমকে আছে।।সে প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, “ওই ক‍্যাম্পাস কেন্দ্র সরকারের অধীন,রাজ‍্য সরকারের কিছু করবার নেই। কিন্তু কেন্দ্র কোনও টাকা মঞ্জুর না করায় নামেই বিশ্ববিদ্যালয় ক‍্যাম্পাস আছে কিছুই নেই। অথচ যা জায়গা আর সুবিধা আছে তাতে ভারতের মধ‍্যে সবথেকে বড় বিশ্ববিদ্যালয় ক‍্যাম্পাস হত মুর্শিদাবাদের ক‍্যাম্পাসটি।।কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের লড়াইয়ের কোনও দাম পাইনি।” অত‍্যন্ত খেদের সঙ্গে বইটির কার্যকরী সম্পাদক হাসিবুর লিখেছেন, “ভারতীয় সংখ্যালঘুদের মনের ভাষা বুঝতে অনেকেই চান না। যাঁরা চান রাজনৈতিক স্বার্থে ‘ভোট ব‍্যঙ্কার’ হিসেবে। ফলে সরকারি উন্নয়নের রোডম‍্যাপ আর শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের দুয়ারে পৌঁছতে পারে না।”

এছাড়াও বইটিতে আরো অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ আছে।

গোটা অনুষ্ঠানটি এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে,খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.