শেষ হলো মুর্শিদাবাদ কবিতা মেলা

Spread the love

শেষ হলো মুর্শিদাবাদ কবিতা মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতা,বহরমপুর:-    বিশেষ প্রতিবেদন: কবি, পাঠক ও‌ সাহিত্য অনুরাগীদের প্রবল আবেগ, আগামী বছর আবার এই মেলা সংগঠিত করার স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ, এবং এই প্রবল গরমেও দুদিন ব্যাপী মেলার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার উচ্ছ্বাস এবং এক প্রকার উন্মাদনার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো মুর্শিদাবাদ কবিতা মেলা-২০২৪; এই মেলা ১৫ জুন ২০২৪ ভারতের প্রথম ‘শিশু বইমেলা’র রূপকার নবতিপর নির্মল সরকার ও বর্ষিয়ান কবি শম্ভু ভট্টাচার্যের হাত ধরে উদ্বোধন হয়ে গতকালই সাড়া ফেলেছিল বহরমপুর শহরে।

দ্বিতীয় দিনে, মেলা মঞ্চে, কবিতার নির্মাণ চর্চার বিভিন্ন ধারা নিয়ে অনিন্দ্যসুন্দর আলোচনা করলেন বিশিষ্ট কবি সন্দীপ বিশ্বাস। তার আলোচনায় তিনি বিশেষভাবে উল্লেখিত করলেন কবি উৎপাল গুপ্ত এবং কবি সুশীল ভৌমিকের অবদান। এছাড়া আলোচনা করেছেন কবি সমীর ঘোষ কবি যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তকে নিয়ে ও অরূপ চন্দ্র আলোচনা করেন মনীশ ঘটক যুবনাশ্ব-কে নিয়ে।

উল্লেখ্য, মেলা কমিটি মেলার স্থানটির নামকরণ করেছিলেন “কবি উৎপল গুপ্ত-কক্ষ”; এবং মঞ্চের নামকরণ হয়েছিল কবি নাসের হোসেন ও কবি অমিতাভ মৈত্র’র নামানুসারে। মুর্শিদাবাদ জেলার কবিতা চর্চার ধারায় উক্ত তিন প্রয়াত কবির অবদান জেলাবাসী স্মরণে রাখবে।

মুর্শিদাবাদ জেলার চারজন বিশিষ্ট কবিকে মেলা কমিটি যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা সম্মানের সঙ্গে সংবর্ধিত করলেন। তাঁরা হলেন— কবি নিখিল কুমার সরকার; তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন এই মেলার সভাপতি ও কবি অরূপ চন্দ্র; কবি সন্দীপ বিশ্বাস-কে উত্তরীয় পরিয়ে হাতে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন জেলার বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ইতিহাস গবেষক প্রকাশ দাস বিশ্বাস; কবি অরু চট্টোপাধ্যায়-কে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ; কবি সৈয়দ খালেদ নৌমান-কে উত্তরীয় পরিয়ে, সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র প্রদান করে সম্মানিত করেন ড. মানবেন্দ্রনাথ সাহা।

এই মেলার অন্যতম অভিনব আকর্ষণ অর্থাৎ ছড়ালেখা ও কবিতালেখা প্রতিযোগিতা এবং একইসাথে জেলার কবিদের রচিত কবিতার আবৃত্তি প্রতিযোগিতা—তাতে বিজয়ীদের সকলকে মেলার পক্ষ থেকে শংসাপত্র ও উপহার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সেই শিশু থেকে যুবকেরা যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, মেলার উদ্যোক্তাদের বুকে বল বাড়িয়েছেন তাঁরা হলেন: আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় স্থানাধিকারী: বিভাগ – ক: প্রথম: নাফিসা মমতাজ, দ্বিতীয়: আরুশী মৈত্র, তৃতীয়: মোহিজিৎ দাস, চতুর্থ: নিলায়ন সরকার, পঞ্চম: প্রিয়াংশী দাঁ। বিভাগ- খ: প্রথম: নিকিতা আকতার, দ্বিতীয়: রিনীতা আঢ্য, তৃতীয়: অভ্রনীল সরকার। বিভাগ – গ: প্রথম: দেবশ্রী মজুমদার মৈত্র, দ্বিতীয়: মমতাজ খাতুন। ছড়ালেখা প্রতিযোগিতার স্থানাধিকারী: প্রথম (যৌথভাবে): অর্ণব হাজরা ও পূর্বা সাহা; দ্বিতীয়: ঐশীকি কুন্ডু; তৃতীয়: পুষ্কর দেবনাথ। তাৎক্ষণিক কবিতা লেখা- প্রতিযোগিতায় স্থান অধিকারীরা: প্রথম: সৃজন সেন, দ্বিতীয়: মৌসনা ঘোষ, তৃতীয়: মমতাজ খাতুন।

মেলায় করুণাসিন্ধু মণ্ডলের ছড়ার বই প্রকাশিত হয়েছে মঞ্চ থেকে৷ নাম ‘চাঁদের কিরণ’৷ মোড়ক উন্মোচক সৈয়দ খালেদ নৌমান।

মেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে হাজির হয়েছিলেন জেলার অসংখ্য কবি এবং সাহিত্যপ্রেমী; এমনকি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার ভূমিকন্যা যদিও বর্তমানে বসবাস অন্যত্র “মুর্শিদাবাদ জেলা কবিতা মেলা”র খবর পেয়ে আজ‌ই বহরমপুরে পৌঁছে মেলায় এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করলেন বিশিষ্ট কবি ও আবৃত্তিকার সাবিনা সৈয়দ। এই স্বতঃস্ফূর্ততাই কবিতা মেলা কমিটি চায় কবিতার জনপ্রিয়করণে– জানালেন কবিতা মেলার সংগঠকগণ।

মেলায় প্রত্যেক কবি যাঁরা তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছেন, সকল আবৃত্তিকার যাঁরা তাদের আবৃত্তি পরিবেশন করেছেন সকলের হাতেই মেলা কমিটির পক্ষ থেকে স্মারক ও উপহার তুলে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মেলার দ্বিতীয় দিনে বিশিষ্ট আবৃত্তিকার প্রদীপ আচার্য কবিতা পরিবেশন করেছেন।

মেলা শেষে সংগঠকগণ যে বার্তা পৌঁছে দিতে চাইলেন তার নির্যাস, এই মেলা আয়োজিত হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার একঝাঁক প্রবীণ এবং বেশ কয়েকজন নবীন কবির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। তাঁরা চান ভবিষ্যতে বাংলা কবিতা যা কিনা বাঙালি জাতির একটি বিশেষ গর্ব বিন্দু এবং বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় তার জনপ্রিয়করণে এবং বাংলা কবিতার মর্যাদার হৃত সিংহাসন পুনরুদ্ধারে, মুর্শিদাবাদ জেলা সহ এই বঙ্গের সমস্ত স্থানে কবিতা মেলা আয়োজিত হোক। মুর্শিদাবাদ কবিতা মেলা কমিটি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগের উৎসমুখ খুলে দিয়েছেন, এবার তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সকল বাঙালিকে ভাগ করে নিতে আহ্বান করেছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.