COP29: সমাপন আশা ও আকাঙ্ক্ষা পাশারুল আলম

Spread the love

COP29: সমাপন আশা ও আকাঙ্ক্ষা
পাশারুল আলম

প্রতিবেদন :=     ২২ নভেম্বর ২০২৪, আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শেষ হলো ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন (COP29)। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই সম্মেলন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো, অভিযোজন, এবং ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে, আগের মতোই এবারও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সীমাবদ্ধতা এবং অগ্রগতির প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল স্পষ্ট।

COP29-এর অন্যতম প্রধান অর্জন হলো জলবায়ু তহবিল সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি আরও জোরালো করা। $100 বিলিয়ন বার্ষিক তহবিল সংগ্রহের পূর্ব প্রতিশ্রুতিকে আরও বাড়িয়ে একটি বিশেষ ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই তহবিল জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল এবং দুর্বল দেশগুলো এই অর্থায়নের মাধ্যমে তাদের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করতে পারবে।
তবে, তহবিলের প্রাপ্তি ও ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। যথাযথ তদারকি ছাড়া এই তহবিল কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাশাপাশি, শুধুমাত্র অর্থায়নই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। কেননা, গঙ্গা দূষণ নিয়ে আমরা বাস্তব চিত্র দেখছি। আসলে ব্যবস্থাগত পরিবর্তন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য আরও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমানোর বিষয়ে এবারের সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য আলোচনা হয়েছে। যদিও বাধ্যতামূলক কোন চুক্তি হয়নি, তবু এই বিষয়ে সচেতনতা এবং আলোচনা বাড়ানো হয়েছে। তবে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের অভাব বরং প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বের অনেক বড় অর্থনীতির দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় নয়। তদুপরি, উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নয়নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এই দ্বন্দ্ব সমাধান না করা পর্যন্ত এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আসবে না।

জলবায়ু অভিযোজন এবং সবুজ প্রযুক্তি স্থানান্তর নিয়ে COP29-এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। সবুজ প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। “১ ট্রিলিয়ন গাছ উদ্যোগ” সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ডি-কার্বনাইজেশন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তবে, প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলো তাদের প্রযুক্তি শেয়ার করার ক্ষেত্রে এখনও পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিচ্ছে না। যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই কাজে এগিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। আধুনিক প্রযুক্তি নাগালের মধ্যে না থাকলে এই দেশগুলির কাজ করতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হবে।

COP29 কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এটি যথেষ্ট নয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে আরও দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে, জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো অপরিহার্য।
এই সম্মেলন ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করলেও, তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপের অভাব হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আরও সাহসী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে, জীবাশ্ম জ্বালানি এবং কার্বন নির্গমন কমানো বিষয়ে একমত হয়ে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। যা এই সম্মেলনে পরিলক্ষিত হয়নি বলে বহু পরিবেশবিদ মনে করেন।

COP29 জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন তহবিল ও প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে। তবে, এই সম্মেলন একথাও স্পষ্ট করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বের নেতাদের আরও দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র আলোচনা এবং সীমিত অগ্রগতি দিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
সত্যি কথা বলতে কি? ভবিষ্যতের প্রজন্মকে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী দিতে হলে আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি এই মুহূর্তে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে বিফল করে দেবে। COP29 একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এই লড়াইয়ে জয়লাভ করতে ভবিষ্যতে আরও সাহসী ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.