“উত্তর মুর্শিদাবাদ “জেলার দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন জঙ্গীপুরে 

Spread the love

“উত্তর মুর্শিদাবাদ “জেলার দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন জঙ্গীপুরে

নিজস্ব সংবাদদাতা,জঙ্গীপুর :-  দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার মুর্শিদাবাদ। স্বাধীনতার পর থেকে মুর্শিদাবাদ যেন এক বঞ্চিত লাঞ্ছিত অবহেলিত অবদমিত জেলার গল্প। যে মুর্শিদাবাদ ব্রিটিশবাংলার রাজধানী সেই মুর্শিদাবাদ কে বারবার চক্রান্ত করে যেন পিছিয়ে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই বাংলায় একের পর এক সরকার পরিবর্তন হয়েছে যদিও মুর্শিদাবাদের এক কোটি মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বলা ভালো এই অবস্থার পরিবর্তন করতে কেউ সেভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও মুর্শিদাবাদ পাইনি কোন পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, এক কোটি জেলায় একটি মাত্র মেডিকেল কলেজ যেখানে বেশিরভাগ জটিল চিকিৎসার পরিষেবা অনুপস্থিত এর প্রভাবে কলকাতার মেডিকেল কলেজগুলোতে এই শীতের রাতে রাস্তার ধারে যারা রাত্রি যাপন করে সামান্য একটু সুচিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে তাদের একটা বড় অংশই মুর্শিদাবাদ বাসি। একদিকে গঙ্গা ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া অন্যদিকে শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ বেসিক পরিষেবা টুকু পাওয়ার জন্য কি ভয়াবহ এক লড়াই। এ যেন এক ব্যথিত মায়ের আর্তনাদ তার অধিকার পাবার জন্য।

অবশেষে বহু রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরে মুর্শিদাবাদ পেয়েছিল আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস। যদিও কেন্দ্র এবং বর্তমান রাজ্য সরকারের গাফিলতির কারণে সেই ক্যাম্পাস প্রায় ধ্বংসের কবলে এবং যে স্বপ্ন নিয়ে মুর্শিদাবাদের মানুষ এই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করেছিল সেই স্বপ্ন এখনো অধরা। বিশেষ করে উত্তর মুর্শিদাবাদ এর ফারাক্কা শমশেরগঞ্জ লালগোলা রঘুনাথগঞ্জ জঙ্গিপুর সুতি সহ প্রায় 40 লক্ষ মানুষের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান পেতে চরম হয়রানির শিকার হওয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা। কাউকে ৮০ কিলোমিটার কাউকে ১০০ কিলোমিটার কাউকে ১২০ কিলোমিটার জার্নি করে ছুটে যেতে হয় সেই বহরমপুর শহরে অথচ বর্তমান রাজ্য সরকার কথা দিয়েছিল তারা এই অচলাবস্থার পরিবর্তন করবে যদিও বর্তমানে সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ এই সরকার নেয়নি।

তাই রাজনৈতিক দলের উপর ভরসা হারিয়ে উত্তর মুরশিবাদের মানুষ নিজেরা জেলা সংগ্রাম সমিতির অধীনে একত্রিত হচ্ছেন তাদের সাংবিধানিক অধিকার আদায় করে নেওয়ার জন্য। এই বেসিক শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থানের অধিকার পাওয়ার জন্য সামনে থেকে লড়াই করছেন জেলা সংগ্রাম সমিতির হাসানুজ্জামান বাপ্পা। তিনি আবার সাথে সাথে একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের মানুষের দাবি-দাওয়া কে মেনস্ট্রিম করার জন্য এক অসম লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন হাসানুজ্জামান বাপ্পা এবং জেলা সংগ্রাম সমিতি।

এই লড়াইয়ের অঙ্গ হিসাবেই আগামীকাল জঙ্গিপুর এসডিও অফ দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি এবং ডেপুটেশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা সংগ্রাম সমিতির লড়াকু সদস্যরা।

এবার কি তাহলে জেলা সংগ্রাম সমিতির গণ-আন্দোলনের চাপে নতিস্কার করতে বাধ্য হবে সরকার? হাসানুজ্জামান বাপ্পা এবং তার জেলার সংগ্রাম সমিতির টিম মুর্শিদাবাদ এর বিশেষ করে উত্তর মুর্শিদাবাদে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে কতটা সফল হবেন সেটা সময় বলবে ।তবে নিঃসন্দেহে এই পদক্ষেপ উত্তর মুর্শিদাবাদের মানুষকে ভরসা যোগাবে।

এই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আজ প্রায় ৩৫টি মিডিয়ার উপস্থিতি তে জেলা ভাগের দাবি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন হাসানুজ্জামান বাপ্পা এবং তার জেলা সংগ্রাম সমিতি। রঘুনাথগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলা সংগ্রাম সমিতির সদস্যরা বলেন এটা কোন খয়রাত নয়, এটা আমাদের অধিকার। আর এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আমরা শেষ নিশ্বাস অব্দি লড়বো।

জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ধরনের মানুষকে এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন জেলা সংগ্রাম সমিতির সদস্যরা। তারা আশা করছেন এই গণ-আন্দোলন মুর্শিদাবাদের মানুষকে নতুন করে ভরসার জায়গা করে দেবে। অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে হওয়া বিভিন্ন আন্দোলন বিভিন্ন সময়ে যুগে যুগে সমাজকে পথ দেখিয়েছে। বিশেষ করে সমাজের শিক্ষকরা যখন দাবি আদায়ের জন্য এগিয়ে আসেন তখন পুরো সমাজ তাদের পিছনে হাটে।

জেলা সংগ্রাম সমিতি এবং হাসানুজ্জামান বাপ্পাদের এই পদক্ষেপ মুর্শিদাবাদের বুকে এক নতুন ভোরে সূচনা করবে এবং উত্তর মুর্শিদাবাদের মানুষদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার পাইয়ে দেবে এই আশা রেখে আমাদের এই প্রতিবেদন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.