আধুনিক মিডিয়া ও সংখ্যালঘুদের দায় দায়িত্ব-

Spread the love

আধুনিক মিডিয়া ও সংখ্যালঘুদের দায় দায়িত্ব- -আনিসুর রহমান

“সত্যিকারের খবর হলো যা কেউ কোথাও চাপা দিতে চায় বাকি সব বিজ্ঞাপন। ” – লর্ড নর্থক্লিপ

প্রতিবেদন :-  মূলধারার মিডিয়া তথা সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা বেতার, একই সঙ্গে হালের অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলো ব্যতিরেকে অন্য যে মাধ্যমগুলো থেকে আমরা তথ্য পাচ্ছি বা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করছি তা-ই হলো আধুনিক মিডিয়া । বিকল্প মাধ্যম হিসেবেও এগুলো পরিচিত। আধুনিক মিডিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এগুলো ডিজিট্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট নির্ভর । ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ফেসবুক ও ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা টুইটার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত ডিজিট্যাল মিডিয়া উদাহরণ। এর সঙ্গে রয়েছে ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব আর লাখ লাখ ব্লগ,অনলাইন পত্রিকা,বিভিন্ন ওয়েবসাইট।

আসলে মিডিয়া তো সমাজেরই আয়না। যুগের পরিবর্তন একেবারে বদলে দিয়েছে মিডিয়ার চালচিত্র। আমাদের চোখের সামনেই দেখলাম প্রিন্ট থেকে টেলিভিশন, সেখান থেকে ওয়েব মাধ্যম। প্রযুক্তির কল্যাণে অর্থাৎ ইন্টারনেট আসায়, দুনিয়াও এসে গেল হাতের মুঠোয়।

মুক্ত অর্থনীতি, পণ্য সংস্কৃতি এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মিডিয়াকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে, সেটাও তো স্বাভাবিক। সেই প্রভাবের তালে তালেই সখ্য গড়ে উঠল অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গেও। মোট কথা, একদা যে আদর্শের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যম জন্ম নিয়েছিল মানব সমাজে, তার সংস্করণ, নতুন রূপ বা বিকল্প চাল এখন কতিপয় এমন মানুষের হাতে, যাদের সঙ্গে আর যাই হোক, প্রতিষ্ঠিত নীতি ও আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই।

আধুনিক মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন উঠে আসছে, আর তা হলো এখানে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান কি প্রিন্ট মিডিয়ার মতো শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত? আর সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতার কারণে কি সংবাদের কনটেন্টের ওপর সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ কমছে? ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে এই প্রশ্নের বহর!
এমন সব জিজ্ঞাসাও আছে অনেক ক্ষেত্রে। এসব প্রশ্নের উত্তর দেবেন এই মিডিয়ার সম্পাদকরাই।

তবে এ কথা তো মানতেই হবে, প্রচলিত মিডিয়ার চেয়ে আধুনিক মিডিয়ায় মানুষের অংশীদারিত্ব অনেক বেশি, সে অর্থে তা অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। বর্তমানে পত্রিকাগুলোর অনলাইন পাঠক প্রচলিত সার্কুলেশন পাঠকের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। পশ্চিমা বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তারে বেশ কিছু জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে। তথ্য আজ শুধু কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের সম্পদ নয়। অনলাইনের জনপ্রিয়তায় এমন একটি সময় আসবে যখন ম্যাস মিডিয়া আর ক্লাস মিডিয়া থাকবে না, হয়ে উঠবে সত্যিকারের গণমাধ্যম।

এখন আর আজকের খবরের জন্য পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না ,কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টার মধ্যে পাঠক বা দর্শকের কাছে পৌছে যায় । মানুষ এখন তাৎক্ষণিকভাবে খবর চায়। টেলিভিশন আর রেডিও আসার পর পত্রিকা ধাক্কাটা সামলে ছিল সম্পাদকীয় আর বিশ্লেষণী দক্ষতার জোরে। কিন্তু নিউ মিডিয়া দ্রততার সঙ্গে তথ্যই দিচ্ছে না, সমাজের নানা স্তর থেকে নিয়ে আসছে বহুমুখী বিশ্লেষণ।

তবে এটাও সত্য যে অনেক ক্ষেত্রেই এসব মাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাদের উপস্থাপনার ঢং অনেক বিষয়কেই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যম কাদের গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। । পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সাহিত্যের বিনিয়োগ কোথা থেকে হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইনে আমরা প্রতিদিন অনেক তথ্যে সম্মুখীন হচ্ছি। কে ঘরের মধ্যে কী খেল, কে কোন সিনেমা দেখল । একই সঙ্গে অনেক ছবিও গলাধকরণ করছি। আধুনিক মিডিয়ায় এখন হাজারো কণ্ঠের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। এই যে অনুশীলনবিহীন কণ্ঠহীনের কণ্ঠ তাকে কে কেমন ভাবে দেখছে? দর্শক শ্রোতার চোখে কোন কালিমা লেপ্টে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে কিনা, এখানে কোনো প্রকার তথ্য আবর্জনার স্তূপে সমাজ ভারাক্রান্ত হচ্ছে কিনা, তা দেখার দায়িত্বও সমাজের। প্রচলিত মিডিয়া ব্যবস্থায় একটা বিশেষ শ্রেণির ঝোঁক থাকলেও আধুনিক মিডিয়াতে ঝুঁকে পড়েছে সব শ্রেণি-সবপেশার মানুষ। আধুনিক মিডিয়ার প্রতি এই আকর্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তাদের মতামত ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে।
মূলধারার মিডিয়া একটা শক্তিশালী সম্পাদকীয় নীতিমালা নিয়ে চলে বলে দ্রুত করলেও ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে কিন্তু আধুনিক মিডিয়ায় ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশী । প্রশিক্ষণহীন সাংবাদিকদের কাজ এবং ভাষাগত জ্ঞান পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যাবস্থাকে নিয়ে ধ্যান ধারণা ও চিত্র তাদের কাছে পরিষ্কার না থাকায় তারা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যটি তুলে ধরতে অপারগ হয়।
তাই প্রবেশের মুহূর্তে প্রশিক্ষণ জরুরি। মিডিয়ার সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এটি কেবল রিপোর্টারদের জন্য না নিউজরুমের প্রত্যেকের জন্য। কেননা প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই আপগ্রেড হচ্ছে। প্রশিক্ষণ না দিলে বিষয়টি বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। সাংবাদিকতা নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির আত্মস্থ করানোর দায়িত্ব মিডিয়া হাউসগুলো যেমন নেবে তেমনি এই ধারণাগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সিলেবাসে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে। কেননা প্রাচীনপন্থিরা নতুন যে কোনো কিছু গ্রহণে ‘কালচারালি শকড’ হয়। ফলে নতুনদের মধ্য দিয়ে এটি বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।’ নিউ মিডিয়া আর যাই হোক তাকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে তার যথাযথ নিয়মাচার, রীতিনীতি, পদ্ধতি ও মানের আলোকে তার গ্রহণযোগ্যতার ও বৈধতার দিকটার প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সময়ের বিবর্তনে ‘গতানুগতিক’ গণমাধ্যমের ওপর মানুষের নির্ভরতা কমছে। সে জায়গা নিয়ে নিচ্ছে ‘আধুনিক মিডিয়া’ ও অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য মানুষ এখন আর গণমাধ্যমের ওপর তেমন নির্ভরশীল নয়। ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা নিজেরাই এজেন্ডা ঠিক করে নিতে পারছে। নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারছে।’ যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দুই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ফেসবুকের মাধ্যমে নিজস্ব অনুসারী তৈরি করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলো প্রচারে তারা যতটা না গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি সহায়তা নিয়েছেন নিজস্ব ফেসবুক পেজের।

আধুনিক মিডিয়া ও সংখ্যালঘুদের দায়দায়িত্ব ২

আধুনিক মিডিয়া ও সংখ্যালঘুদের দায় দায়িত্ব ২

হলুদ সাংবাদিকতার রয়েছে একটি হাস্যকর ইতিহাস। তৎকালীন দুই ভূবনবিখ্যাত সাংবাদিকের নাম জড়িয়ে আছে এ ইতিহাসের সাথে। জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম র্যা নডল্ফ হার্স্টের এক অশুভ প্রতিযোগিতার ফসল হলুদ সাংবাদিকতা।

১৮৮৩ সালে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড নামে একটি সংবাদপত্র কিনেন পুলিৎজার। পত্রিকাটির আগের মালিক ছিলেন জে গোল্ড।

অন্যদিকে উইলিয়াম হার্স্ট ১৮৮২ সালে ‘দ্য জার্নাল’ নামে একটা পত্রিকা কিনে নেন জোসেফ পুলিৎজারের ভাই অ্যালবার্ট পুলিৎজারের কাছ থেকে। কিন্তু পরিবারের সদস্যের পত্রিকা হার্স্টের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়টিকে মানতে পারেননি পুলিৎজার।

শুরু হয় হার্স্টের সাথে পুলিৎজারের স্নায়ুযুদ্ধ। পুলিৎজার নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড কিনেই ঝুঁকে পড়লেন চাঞ্চল্যকর খবর, চটকদারি খবর ইত্যাদি প্রকাশে। একজন কার্টুনিস্টকে চাকরি দিলেন তার কাগজে। তার নাম রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্ট।

ওই কার্টুনিস্ট ‘ইয়েলো কিড’ বা ‘হলুদ বালক’ নামে প্রতিদিন নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের প্রথম পাতায় একটি কার্টুন আঁকতেন এবং তার মাধ্যমে সামাজিক অসংগতি থেকে শুরু করে এমন অনেক কিছু বলিয়ে নিতেন, যা ছিলো অনেকটাই পক্ষপাতদুষ্ট।

জার্নাল এবং নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের বিরোধ সে সময়কার সংবাদপত্র পাঠকদের কাছে ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিলো।

এক সময় হার্স্ট পুলিৎজারের নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের কার্টুনিস্ট রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্টকে অধিক বেতনের প্রলোভনে নিয়ে এলেন তার ‘জার্নাল’ পত্রিকায়।

হার্স্ট তাতেই ক্ষান্ত থাকেননি, মোটা বেতনের লোভ দেখিয়ে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের ভালো সব সাংবাদিককেও টেনে নেন নিজের পত্রিকায়। বেচারা পুলিৎজার রেগে আগুন। তিনি অগত্যা জর্জ চি লুকস নামে আরেক কাটুনিস্টকে নিয়োগ দেন।

এদিকে জার্নাল, ওদিকে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড – দুটো পত্রিকাতেই ছাপা হতে লাগলো ইয়োলো কিডস বা হলুদ বালক কার্টুন। শুরু হয়ে গেলো পত্রিকার কাটতি নিয়ে দুটো পত্রিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব।

দুটো পত্রিকাই তাদের হিট বাড়ানোর জন্য ভিত্তিহীন, সত্য, অর্ধসত্য ব্যক্তিগত কেলেংকারিমূলক খবর ছাপা শুরু করলো। এতে দুটো পত্রিকাই তাদের মান হারালো। তৈরী হলো একটি নষ্ট মানসিকাতর পাঠকশ্রেণি, যারা সব সময় সুড়সুড়িমূলক, চটকদার, ভিত্তিহীন, চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী, অর্ধসত্য সংবাদ প্রত্যাশা করতো এবং তা পড়ে তৃপ্তি পেতো।

এভাবে জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্ট দু’জনেই হলুদ সাংবাদিকতার দায়ে অভিযুক্ত এবং ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে রইলেন।

তখনকার সংবাদপত্রের কার্টুন হলুদ বালকের হাত ধরে আজকের এই হলুদ সাংবাদিকতা।

মিডিয়া সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকেই আর এক মার্কসীয় চিন্তক লুইস আলথুসার বলেছেন ‘ইডিওলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটাস’। অর্থাৎ মিডিয়ার মাধ্যমে শাসকশ্রেণি মানুষের চিন্তা ও চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের আদর্শ ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের স্বার্থে। ভারত রাষ্ট্র তাদের ইডিওলজিক্যাল এজেন্ডা ‘হিন্দি হিন্দু ও হিন্দুস্তান’কে ঠিক এভাবেই গোটা দেশে চাপাতে চায়। হারমান ও চমস্কি দেখিয়েছেন কিভাবে সংবাদ মাধ্যম শাসক শ্রেণীর হয়ে মানুষের সম্মতি উৎপাদন করে। শাসকশ্রেণীর স্বার্থে মানুষকে সচেতন করে। যদিও এঙ্গেলস থেকে শুরু করে ফ্রাঙ্কফ্রুট স্কুলের মার্কসীয় চিন্তাকরা এটাকে ফলস কনশাসনেস ( মিথ্যা চেতনা) বলেছেন। অর্থাৎ শাসক শ্রেণীর হয়ে মিডিয়া যে প্রচার করে সেই প্রচারে মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হয়, তাতে তাদের কোন স্বার্থসিদ্ধি না হলেও লাভবান হয় শাসক শ্রেণী। ভারতের ক্ষেত্রে এটা ভীষণভাবে প্রযোজ্য। তাহলে যেটা বোঝা যাচ্ছে ‘প্রোপাগান্ডা’, ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’ এবং ‘হেজিমনি’ – তিনটি শব্দ পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ওতোপত ভাবে জড়িত। প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট হয়। অর্থাৎ মানুষের সম্মতি উৎপাদনে শাসকশ্রেণি প্রোপাগান্ডাকে অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগায়। আর মানুষের সম্মতি উৎপাদন হলেই শাসকের হেজিমনি ( আধিপত্য) তৈরি হয়।

রাষ্ট্র ও কর্পোরেট এলিটরা কিভাবে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে দিয়ে তাদের পক্ষে প্রোপাগান্ডা চালায় এটা বোঝাতে গিয়ে হারমান এবং চমস্কি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট: দ্য পলিটিকাল ইকনমি অফ দা মাস মিডিয়া’ বইতে পাঁচটা ফিল্টারের কথা বলেছেন। এই পাঁচটা ফিল্টার এর মধ্য দিয়ে সমস্ত সংবাদ মাধ্যমগুলিকে যেতে হয় বলে তারা এই বইতে উল্লেখ করেছেন। মূলত আমেরিকান প্রেক্ষিতেই এই পাঁচটা ফিল্টার কে বর্ণনা করলেও এখানে ভারতীয় প্রেক্ষিতেই আলোচনাটা হবে।

প্রথম ফিল্টারটি হল গণমাধ্যমের মালিকানা (Ownership)। এসেল গ্রুপ, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বেনেট অ্যান্ড কোলম্যান, এবিপি গ্রুপ, ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপ– এই কর্পোরেশনগুলিই মূলত ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম গুলিকে চালায়। এই কোম্পানিগুলির আসল লক্ষ্যই হল সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে লাগামছাড়া মুনাফা উপার্জন করা। বহুমাত্রিক সংস্কৃতি দেশে বিরাজ করলে এদের ব্যাবসা চালাতে অসুবিধা হবে । তাই এরা চাই দেশে একমাত্রিক সংস্কৃতি। এদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদ মাধ্যমগুলি সরাসরি বা ঘুরপথে বিজেপির হিন্দুত্ব এজেন্ডাকে সমর্থন করে তাদের ব্যবসার স্বার্থেই। ‘কোবরা পোস্ট অপারেশন-১৩৬’-এর তথ্য অনুযায়ী যত বড় মিডিয়া হাউজ তারা ততই হিন্দুত্ব এজেন্ডাকে সমর্থন করে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে।

 

হারমান ও চমস্কির দ্বিতীয় ফিল্টারটি হল বিজ্ঞাপন (Advertising)। গণমাধ্যম চালাতে যে বিশাল খরচ হয় তার খুব ক্ষুদ্র অংশই গ্রাহকদের কাছ থেকে আসে। গণমাধ্যমগুলিকে নির্ভর করতে হয় বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের ওপর। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মাদার কোম্পানি ‘বেনেট অ্যান্ড কোলম্যান’-এর ভাইস চেয়ারম্যান সমীর জৈন একদা বলেছিলেন, ‘‘আমরা নিউজ পেপার বিজনেস করিনা, বিজ্ঞাপন বিজনেস করি…’’, এই কথা থেকেই পরিষ্কার নিউজ পেপারটা মূলত বিজ্ঞাপন ছাপানোর একটা জায়গা। বড় বিজনেস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকে সরকারের। মিডিয়া হাউজ গুলোকে শুধু বিজ্ঞাপন দাতাদের নয়, সঙ্গে সঙ্গে সরকারেরও মন জুগিয়ে চলে !

তৃতীয় ফিল্টারটি হল সংবাদের উৎস (Sourcing)। সংবাদ সংগ্রহের জন্যেও সাংবাদিকদের সরকারি সংস্থা ও কর্পোরেট সংস্থার উপর নির্ভর করতে হয়।

চতুর্থ ফিল্টারটি হল ‘Flak’। হারমান ও চমস্কি ‘Flak’ কে বর্ণনা করেছেন নেগেটিভ রেসপন্স (নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া) হিসাবে। সংবাদ মাধ্যম যদি সরকার বা কর্পোরেট বিরোধী কোনও খবর পরিবেশন করে তাহলে ওই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া জানাবে সরকার কিংবা কর্পোরেট সংস্থাগুলি। এবং সেই প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন শাস্তিমূলক , তেমনই সংবাদ মাধ্যমগুলিকে এক ঘরে করে দেয়ারও প্রচেষ্টা চলতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষে অনেক উদাহরণ আছে।

সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া জানাবে সরকার কিংবা কর্পোরেট সংস্থাগুলি। এবং সেই প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন শাস্তিমূলক , তেমনই সংবাদ মাধ্যমগুলিকে এক ঘরে করে দেয়ারও প্রচেষ্টা চলতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষে অনেক উদাহরণ আছে। এর সবথেকে বড় উদাহরণ হল এনডিটিভির মালিকানা কৌশলে ছিনিয়ে নেওয়া, এমনকী কলকাতার বৈদ্যুতিন মাধ্যম ‘কলকাতার টিভি’র কর্নধারকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো। এনডিটিভি সরাসরি বিজেপি সরকারের সমালোচনা করত তাই দীর্ঘ দিন ধরেই এই টিভি চ্যানেল সরকারের নজরে ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলে পরিচিত গৌতম আদানি। গৌতম আদানি একপ্রকার রাজনৈতিক কৌশলে এই টিভি চ্যানেলটিকে কিনে নিয়েছে। এই বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে কম সমালোচনা হয়নি। আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ভারতের ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইন এই কৌশলে চ্যানেলটিকে কিনে নেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে। একইভাবে বাংলা টিভি চ্যানেল কলকাতা টিভি বিজেপির বিরুদ্ধে খবর পরিবেশন করে বলে সেই টিভি চ্যানেলকেও বন্ধ করার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির হয়ে ফেক ও প্রোপাগান্ডা নিউজকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অল্ট নিউজের কো ফাউন্ডার মোহাম্মদ জুবেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের বিরুদ্ধেও। এরকম অসংখ্য ঘটনার উদাহরণ আছে যেখানে সরকার বিরোধী খবর করলেই তাদের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।

ভারতের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলিতে শুধুই যে সরকার এবং কর্পোরেটের আধিপত্য কাজ করে তাই নয়, নিউজরুমগুলিতে উচ্চবর্ণের কর্তৃত্ব দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে রমন ম্যাগসেসাই অ্যাওয়ার্ড জয়ী সাংবাদিক পি সাইনাথ একদা বলেছিলেন, ‘‘ভারতে দলিত রাষ্ট্রপতি, দলিত বিচারপতি, দলিত ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হয়েছে। কিন্তু প্রথম সারির বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমগুলির নিউজরুমগুলিতে দলিত, আদিবাসী প্রতিনিধি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।’’ বর্তমানে প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলির মালিকরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসক দল বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। যে দুটি সংবাদমাধ্যম বেশি বিজেপির হয়ে প্রোপাগান্ডা চালায় তারা হল জি মিডিয়া ও রিপাবলিক টিভি। মিডিয়া ব্যারন সুভাষচন্দ্র হলেন জি মিডিয়া কর্পোরেশনের মালিক। তিনি বিজেপির সাহায্য নিয়ে প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। রিপাবলিক টিভি তৈরি করেছিলেন অর্ণব গোস্বামী ও রাজীব চন্দ্রশেখর। রাজীব চন্দ্রশেখর বর্তমানে একজন বিজেপির সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অন্যদিকে অর্ণব গোস্বামীও যে বিজেপির একদম কাছের লোক সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এনডিটিভির বর্তমান মালিক গৌতম আদানিকে পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয়নের মণি হিসাবেই ধরা হয়। অন্যদিকে নেটওয়ার্ক ১৮ গ্রুপের কর্ণধার মুকেশ আম্বানিও মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই কারণেই প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের পলিসি বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা প্রভাবিত। ভারতের প্রায় ৯০% প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেকটা পদক্ষেপকেই সমর্থন করে। এই বিষয়টাকে ইন্দিরা গান্ধীর সময়কার এমার্জেন্সির সঙ্গে তুলনা টেনে পি সাইনাথ কটাক্ষ করে বলেছেন,‘‘ইমার্জেন্সসির সময়ে সংবাদ মাধ্যমগুলিকে ঝুঁকতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা হামাগুড়ি দিয়েছিল। কিন্তু এখন সংবাদ মাধ্যমগুলিকে আর কিছু বলারই দরকার হয় না।’’ এর মানে, পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় গেছে যে সংবাদমাধ্যমগুলোকে না বললেও তারা হামাগুড়ি দিতে থাকে।

উত্তরপূর্বের রাজ্য মণিপুরে গত প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে চলছে জাতি দাঙ্গা। কত চার্চ পুড়েছে, ঘরবাড়ি পুড়েছে, কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, মহিলাদের বিবস্ত্র অবস্থায় ঘোরানো হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রেও বিজেপি সরকার, মণিপুরেও বিজেপি সরকার। কটা সংবাদ মাধ্যম বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে? এত নির্মম ঘটনার পরেও রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি হলো না, এটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে কি? এটাও এক ধরনের মিডিয়া প্রোপাগান্ডা। অর্থাৎ সরকারকে রক্ষা করাও এক ধরনের প্রোপাগান্ডা। গত ৩১ শে জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় মণিপুর নিয়ে একটি খবর বেড়িয়েছে। খবরের শিরোনাম হল, ‘‘মনিপুরে হিংসার পর্দার আড়ালে মাদকের কারবার’’। বলছিনা যে খবরটা ভুল। নিশ্চয়ই এটা একটা খবর। কিন্তু আসল ঘটনাকে আড়াল করে দেওয়ার এটা কি একটা প্রচেষ্টা নয়? কিছু সামাজিক মাধ্যমে খবর বেড়িয়েছিল যে মনিপুরের মাটির নিচে বিশাল খনিজ সম্পদ আছে। সেই খনিজ সম্পদ কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতেই চক্রান্ত করে এই দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছে বলে সমাজ মাধ্যমে বহু লেখালেখি হয়েছে। অন্যদিকে সংখ্যাগুরু মেইতেইদের ( যারা ধর্মে মূলত হিন্দু) সংখ্যালঘু কুকিদের ( যারা ধর্মে মূলত খ্রিস্টান ও মুসলিম) দাঙ্গা তৈরিতে বিজেপির রাজনৈতিক হাত রয়েছে বলেও সামাজিক মাধ্যমে লেখালিখি হয়েছে। গোটা উত্তর পূর্বেই এই ঘটনা কেন্দ্র করে মেরুকরণ ঘটানোর বিজেপির একটা কৌশল বলেও সামাজিক মাধ্যমে উঠে এসেছে। আসল ঘটনাকে গোপন করাটাও সংবাদমাধ্যমের এক ধরনের প্রোপাগান্ডা।

আধুনিক মিডিয়া ও সংখ্যালঘূদের দায় দায়িত্ব-৩

মিডিয়া কি ভাবে সংখ্যালঘুদেরকে ভুল বোঝায়-

টুইটার, গুগল এবং মেটা অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ভাগ করা অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে বিশেষ প্রচেষ্টা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে. টুইটার ৩৭ লক্ষ ৫৯ হাজার ১৮০টি মুসলিম বিরোধী টুইট মুছে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পদক্ষেপটি বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে, মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার এটি বিস্তারের প্রাথমিক উৎস হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যায়!

2019 সালে EU DisinfoLab- এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অন্তত “65টিরও বেশি দেশে 265টি ভুয়া স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটগুলি ভারতীয় প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত হয় যার লক্ষ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত করা এবং পাকিস্তান সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণাকে প্রভাবিত করা।” [৩৮] 2020 সালের মধ্যে, ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস শিরোনামের একটি তদন্তে 116টি দেশে এই ধরনের ভারত-পন্থী ফেক নিউজ ওয়েবসাইটগুলির সংখ্যা 750-তে উন্নীত হয়েছে বলে প্রকাশ করা হয়েছিল । [৩৯] ভুয়ো খবর ছড়ানো ওয়েবসাইট এবং অনলাইন সংস্থানগুলির বিশিষ্ট উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে

জাল খবর প্রায়ই সংখ্যালঘুদের টার্গেট করতে ব্যবহৃত হয় এবং এটি স্থানীয় সহিংসতার পাশাপাশি বড় আকারের দাঙ্গার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হয়ে উঠেছে। [75] 2013 সালের মুজাফফরনগর দাঙ্গার সময় প্রকৌশলী গণ সহিংসতাকে প্ররোচিত করা হয়েছিল , লাভ জিহাদ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার এবং একটি জাল সংবাদ ভিডিও প্রচারের মাধ্যমে একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে। [৭৬]

লখনউতে বিক্ষোভকারীরা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিল
28শে ডিসেম্বর, মালভিয়া লখনউয়ের ক্লক টাওয়ারে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতাকারী বিক্ষোভকারীদের একটি ভিডিও টুইট করেছেন, দাবি করেছেন যে তারা “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” বা পাকিস্তান দীর্ঘজীবি হোক।

Alt News দাবি মিথ্যা ছিল. বিক্ষোভকারীরা পাকিস্তানপন্থী স্লোগান দেয়নি বরং বদলেছে, “কাশিফ সাহেব জিন্দাবাদ।” তারা অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমীন পার্টির লখনউ প্রধান কাশিফ আহমেদের কথা উল্লেখ করছিল । দলের উত্তর প্রদেশ ইউনিটের সভাপতি হাজী শওকত আলী অল্ট নিউজকে বলেছেন যে কাশিফ আহমেদ 13 ডিসেম্বর রাজ্যের রাজধানীতে একটি বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

AMU ছাত্ররা ‘হিন্দুওন কি কবর খুদেগি’ স্লোগান দিল
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছিল দাবি করে যে তারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। 16 ডিসেম্বর, মালভিয়া যারা ক্লিপটি শেয়ার করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন।

ছাত্ররা আসলে হিন্দুত্ব, সাভারকর, বিজেপি, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল। তারা বলেন, “হিন্দুत्व की कब्र खुदेगी, एएमयू की छाती पर, सावरकर की कब्र खुदेगी, एएमयू की छाती पर, ये बीजेपी की कब्र खुदेगी, एएमयू की छाती पर, ब्राह्मवाद की कब्र खुदेगी, एएमयू की छाती पर, येवाद की कब्र,” তারা বলেছিল। . এএমইউ-এর বুকে খোঁড়া হবে হিন্দুত্বের কবর, এএমইউ-এর বুকে খোঁড়া হবে সাভারকারের কবর, এএমইউ-এর বুকে খোঁড়া হবে বিজেপির কবর, এএমইউ-এর বুকে খোঁড়া হবে ব্রাহ্মণ্যবাদের কবর, জাতিবাদের কবর। কবর খনন করা হবে-অনুবাদ।

CAA নিয়ে সাংবাদিকের বক্তৃতা বিকৃত
“ইসলামবাদীরা চায় সিএএ-র প্রতিবাদগুলি ‘অন্তর্ভুক্ত’ হওয়া পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি, অ-মুসলিমরা, তাদের ধর্মীয় পরিচয়, বিশ্বাস এবং আধিপত্যবাদী স্লোগানকে গসপেল হিসাবে গ্রহণ করা শুরু করবেন,” অমিত মালভিয়া 26 শে জানুয়ারী একটি বক্তৃতার ভিডিও শেয়ার করার সময় বলেছিলেন। দ্য ওয়্যারের সাংবাদিক আরফা খানম ।

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে খানম যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটি ক্লিপ করা হয়েছে এবং ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । মালভিয়া দাবি করেছেন যে সাংবাদিক একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচার করছেন এবং প্রতিবাদকারীদের প্রতি অমুসলিমদের সমর্থনের ভান বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করছেন যতক্ষণ না এই ধরনের একটি সমাজ তৈরি হয়। যাইহোক, খানম সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য দিয়েছিলেন: তিনি প্রতিবাদকারীদের ধর্মীয় স্লোগান ব্যবহার না করার এবং আন্দোলনের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে, দাঙ্গা লাগিয়ে সেখান থেকে রাজনৈতিক ময়দানে মেরুকরণ ঘটিয়ে সুবিধা লাভ করেছে বিজেপি। এ কাজে তাদের হয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যমের বিরাট অংশ। ভারতের জাতিগত ও ভাষাগত, ধর্মগত, সংস্কৃতিগত বহুত্ববাদের পক্ষে সওয়াল করার বদলে বিজেপি-আরএসএসের মতাদর্শ ‘হিন্দি হিন্দু এবং হিন্দুস্তান’কে সফল করতে সর্বতোভাবেই গত দু’দশকের ওপর সহযোগিতা করে চলেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বড় অংশ। এ ব্যাপারে তারা নিজেদের পুরোপুরি গেরুয়া বাহিনীর প্রোপাগান্ডা ইন্সট্রুমেন্ট করে তুলতে সক্ষম।

সম্প্রতি খড়গপুর আইআইটিতে ফাইজান নামে এক ছাত্রেরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৯৯। এইগুলো নিয়ে মিডিয়ার কোন উচ্চবাচ্য নেই। রাষ্ট্রের প্রযুক্তিবিদ্যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ বা আইআইটিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই র‍্যাগিংয়ের আখড়া। খড়গপুর আইটিতে ফাইজান নামের মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে সেটা নিয়ে কটা প্যানেল ডিসকাশন করেছে আমাদের দেশ সহ বাংলার মিডিয়াগুলি। আসলে ফাইজান ধর্মে মুসলমান। আর আইআইটিগুলো ইউনিয়ন সরকারের অধীনে। তাই এইগুলোকে নিয়ে আলোচনা করলে বিজেপি আরএসএস-এর স্বার্থসিদ্ধি হবে না। তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে চুপ গদি মিডিয়া। আসলে এরা চায় জহরওলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণপন্থী তথা হিন্দি-হিন্দু জাতিবাদীদের আখড়া বানাতে । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নামক এক গোপন্থীকে উপাধ্যক্ষ পদে বসিয়ে যেমনটা করা হয়েছে। এটাই এদের হিডেন এজেন্ডা। তার জন্য যতটা পারা যায় প্রোপাগান্ডা চালানো দরকার সেটাই চালাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের এই অংশ।এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিজেপি আরএসএসের টার্গেটের অন্যতম আর একটা কারণ হলো এরা শিক্ষার গৈরিকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। একদিকে শিক্ষার গৈরিকিকরন অন্যদিকে শিক্ষার বেসরকারিকরণ। এই দুটি উদ্দেশ্য সফল করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কার্যত পঙ্গু করতে চাই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ঠিক এই কারণেই নয়া শিক্ষনীতি তৈরি করে তা চাপিয়ে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ গুলি হচ্ছে সেই প্রতিবাদের প্রথম সারিতেই আছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কে শেষ করার জন্য দুটো পথ বেছে নিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ফান্ড কমিয়ে দেওয়া অন্যদিকে মিডিয়াকে দিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে দেশবিরোধী কলঙ্ক সেঁটে দেওয়া।

সম্প্রতি ‘লোকনীতি’ ও ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলাপিং সোসাইটি’ যুগ্মভাবে একটি সমীক্ষা করেছে। যার নাম, ‘ভারতীয় প্রচার মাধ্যম: প্রবণতা ও ধরণ’। এই সমীক্ষায় ৮২ শতাংশ সাংবাদিকই বলেছেন, বিজেপির হয়ে কাজ করাটাই তাঁদের কাজের শর্ত। তাঁদের মিডিয়া হাউজগুলি বিজেপির পক্ষেই কাজ করে। এই জন্যই বিশ্ব ‘প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্স’-এ ভারতের স্থান ১৬১। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র ভারতের আগে। হবেই বা না কেন? যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নই করতে দেন না। পৃথিবীর সবথেকে বড় লিখিত গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন করতে দেন না এটাই তো সব থেকে বড় লজ্জার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়েছিলেন । কোনও এক অনুষ্ঠানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর পাশে বসেছিলেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকী ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন। সেই জন্য গেরুয়া বাহিনীরা সামাজিক মাধ্যমে তাকে কম আক্রমণ করেননি। এই হচ্ছে ভারতবর্ষের সাংবাদিকতার অবস্থা। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এসেছিলেন সংবাদমাধ্যমের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বর্ষীয়ান আমেরিকান সাংবাদিক জোয়েল সাইমন। বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভারতবর্ষের সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতীয় সাংবাদিকতার দুরাবস্থা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা ও প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিকদের প্রশ্নকে গ্রহণ না করা নিয়ে ওনাকে মেইল করেছিলাম। সাংবাদিকতার এই দুরাবস্থা ও প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া নিয়ে উনি গভীর হতাশ প্রকাশ করেছেন। সংবাদমাধ্যমের প্রোপাগান্ডা মূলক প্রচার সমাজের জন্য ক্ষতিকারক বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সংখ্যালঘুদের কি করণীয় – মিডিয়া আসলেই মুসলিমদের বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে অঞ্চল সরবরাহ করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিম্নলিখিতঃ

১. সঠিক ও সত্যপরায়ন: মিডিয়া নিজেকে সত্যের পক্ষে রেখে উভয়পক্ষের সংবাদ ও তথ্য প্রদান করতে উদ্যোগী হতে হয়। ভয় প্রতিপত্তি, ভেঙে যাওয়া মত প্রচার করবেন না। ২. ভালোবাসার আদালতে থাকা: মিডিয়া মানুষের মধ্যে ভালোবাসার আদালত স্থাপন করতে হয়। মিথ্যাবাদ এবং বিদ্রোহ সাধন করে অপকার করা উচিত নয়। ৩. সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করা: মিডিয়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও জ্ঞান জাগ্রত করে সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করতে হয়। এটি মধ্যমে সমাজের সমস্যাগুলির সমাধান ও পেশাদারীতার উন্নয়ন চালিয়ে যায়। ৪. তথ্য এবং জ্ঞান সরবরাহ করা: মিডিয়া মানুষের মধ্যে তথ্য ও জ্ঞানের দায়িত্ব নিয়ে সত্ত্বরভাবে অবগত করে দেয়। কারিগরি, সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হয়। ৫. সমাজ পরামর্শ দেওয়া: মিডিয়া সামাজিক পরামর্শ দেওয়া যেন সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শেখায়। পরামর্শ দেয়া হয় নেতৃত্ব, তরুণদের আদালতে ভূমিকা পালন, শিক্ষা প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি।

উপরোক্ত ফলাফলগুলি মানে সহ হতে পারে যার ফলে মিডিয়া মুসলিম সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :-

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:

১. নিউ মিডিয়া: সামাজিক প্রভাব ও তাৎপর্য- ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ প্রকাশিত প্রতিদিনের সংবাদ অনলাইনে

২. ভারতীয় মিডিয়ার মাফিয়া গিরি ও ফ্যাসিস্ট প্রোপাগান্ডা- নজরুল আহমেদ জমাদার প্রকাশিত প্রতিপক্ষ অনলাইন

৩. অনলাইন উইকিপিডিয়া

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.