ফ্ল্যাগ-স্ট্রেশন ও অন্যান্য উন্নয়নের দাবিতে বিক্ষোভ, রিলে অনশন ও রেল-অবরোধ কর্মসূচি পিরতলা স্টেশন কমিটির
**************
ফিরোজ অনীক
লালগোলা
———
মুর্শিদাবাদ ভারতবর্ষের মানচিত্রে সব সময় বঞ্চনার জেলা। স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকে এ বঞ্চনা চলমান। রাজা আসে রাজা বদলায়, কাল কেটে যায় মুর্শিদাবাদের মানুষের বঞ্চনার অবসান হয়নি। কংগ্রেস জামানা পার হয়েছে। ৩৪ বছরের বাম জামানা চলে গেছে। তৃণমূলের ১৫ বছর চলমান। কেন্দ্রে কংগ্রেস জামানা পার হয়েছে। বিজেপির জামানা শুরু হয়েছে। ৮০-৯০ লক্ষের এই জেলার মানুষের কপালে দুর্ভোগের কাল রেখা আজও জাজ্বল্যমান ।
মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার লালগোলা ব্লকের অন্তর্গত পিরতলা রেলওয়ে স্টেশন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে দীর্ঘ ৫০ বছর পরেও হল্ট স্টেশনের তকমা মুছতে পারেনি। ১৯৭০ সালের ২২ আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে পিরতলা স্টেশন স্থাপিত হয়। তারপর গঙ্গা পদ্মা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। সেই দিনের হল্ট স্টেশনটি আজও হল্ট রয়ে গেছে। রেলওয়ে বোর্ডের সমস্ত রকম নিয়ম পাস করেও আজও আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন পরিকাঠামোর কোনো কিছুই স্টেশনটি পায়নি। বছরে রেলওয়ে বোর্ড এই স্টেশন থেকে অর্থ আয় করে ৮৮লক্ষ টাকার উপরে। অথচ স্টেশনের উন্নয়ন থমকে আছে। ২০০১ সাল থেকে পিরতলা স্টেশন এইচ জি ১(HG1) ক্যাটাগরির স্টেশনের তকমা পেলেও , একটি এই মানের স্টেশন যে সকল পরিকাঠামো পায় তা দিতে রেলের কার্পন্যের সীমা নেই। রেলের গত বছরের তথ্য অনুযায়ী স্টেশন প্রতিদিন গড়ে ১৪৭৭ জন যাত্রী ওঠানামা করে। পর্যাপ্ত কালেকশন এবং রেলকে সমস্ত রকমের ক্রাইটেরিয়া পূরণ দিয়েছে এই স্টেশন। অথচ পিরতলা বঞ্চিত। যৎসামান্য যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা পরিপূর্ণরূপে স্টেশন ন উন্নয়ন কমিটির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল।
উপর্যপুরি স্টেশন উন্নয়ন কমিটির আন্দোলন কর্মসূচি প্রতিবাদ বিক্ষোভ চললেও রেলবোর্ড প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু তা কার্যকরী করার কোন উদ্যোগ বা উদ্যম লক্ষ্য করা যায় না। লালগোলা শিয়ালদহ রুটে পিরতলা স্টেশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন , এখানে প্রতিদিন শয়ে শয়ে লোক বিভিন্ন প্রয়োজনে শিয়ালদা রুটে যাত্রা করে। অথচ রেল টয়লেট যুক্ত ট্রেনগুলো এইরূট থেকে তুলে দিয়েছে। ২২৫ কিলোমিটারের জার্নিতে রেলওয়ে বোর্ডের কোন মস্তিষ্কের বিড়ম্বনায় যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানবার আগ্রহ থাকে বৈকি।
এই সমস্ত কারণে পিরতলা স্টেশন উন্নয়ন কমিটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগাম জানানোর ভিত্তিতে তিন দফায় রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে।
। প্রথমত, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি। অক্টোবরের আট, নয়, দশ—এ তিন দিন ।দ্বিতীয়, রিলে অনশন ২৯ ও ৩০ অক্টোবর সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা এবং তৃতীয় উপরিক্ত দাবি না মানা হলে রেল অবরোধ কর্মসূচি—২৬ নভেম্বর সকাল ৬:৪৫ থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আজ প্রথম দিনে পিরতলা স্টেশন প্লাটফর্ম চত্বরে এক এবং দুই নম্বর প্লাটফর্মে প্রায় হাজার খানিক লোকের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানো হয়। দাবি ছিল—
ক. পিরতলা রেলওয়ে স্টেশনকে ফ্ল্যাগ স্টেশনে পরিণত করা।
খ. স্টেশনে ঘোষণার জন্য মাইকের ব্যবস্থা করা।
গ. কম্পিউটারাইজ টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা করা।
ঘ. স্টেশনের নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
ঙ. রানিং ওয়াটারসহ টয়লেটের ব্যবস্থা করা।
চ. প্রত্যেকটা ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা।লালগোলা শিয়ালদা রুটের সমস্ত ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা।
ছ. সেকেন্ড প্লাটফর্মে আরো একটি সেডের ব্যবস্থা করা।
জ. ওভারফ্লাইয়ের উপরে সেডের ব্যবস্থা করা।
ঝ. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যাত্রীদের জন্য Ramp এর ব্যবস্থা করা.।
ঞ. স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য রেলের রাস্তায় লিংক রোড তৈরি করা।
সকাল ৭ থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পরিচালিত হয় ।উপস্থিত ছিলেন পিরতলা স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ ।এলাকার জনগণ। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এবং স্টেশনের ভুক্তভোগী প্যাসেঞ্জারদের অনেকেই। স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক বীরেন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, রেল বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিন বছর ধরে এপ্রোচ রোড করবো করবো বলেও এখনো বাস্তবায়িত করেনি। মাইকের ব্যবস্থা নেই ।পানীয় জলের সঠিক ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বিশ্রামাগার নেই। ফ্লাইওভারের সেড নেই। এ সমস্ত দাবির ভিত্তিতে আমরা বারবার রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি ।তাদেরকে জানিয়েছি ।তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।
কিন্তু তারা কোন ভাবে কর্ণপাত না করায় আমরা লিখিত ভাবেও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পিরতলা স্টেশন এইচ জি১ ক্যাটাগরির হওয়া সত্ত্বেও তার যে সুবিধা স্টেশন পেয়ে থাকে তার কোনোটি স্টেশন পাচ্ছেনা। এ অবস্থায় আন্দোলন চলবে কর্মসূচি অনুযায়ী’।
ইতিহাস —
ইতিহাস বলছে, 1905 রাণাঘাট থেকে কৃষ্ণনগর ও মুর্শিদাবাদ শাখা রেললাইন চালু হয় (Murshidabad Branch Railway)।
Murshidabad জেলা রেলের ইতিহাসে উল্লেখ আছে: “Azimganj branch line ছিল একমাত্র রেল, ১৯০৫ সালে Ranaghat–Murshidabad শাখা চালু হয়।”
1907 ওই মুর্শিদাবাদ শাখা লাইনকে Lalgola Ghat পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়, এভাবে Lalgola Ghat Branch Railway গঠিত হয় EBR-এর শাখা লাইনগুলোর তালিকায় Lalgola Ghat Branch নামে এই অংশের কথাও রয়েছে ।
— শাখা লাইন হিসেবে রাণাঘাট → কৃষ্ণনগর → লালগোলা রুট বাস্তবায়িত হয় বর্তমান রুটের ইতিহাস হিসেবে রাণাঘাট–কৃষ্ণনগর–লালগোলা লাইন ১৫৫ কিমি দীর্ঘ বলে পরিচিত।
২০০৪ Krishnanagar–Lalgola সেকশনসহ পিরতলা স্টেশন বৈদ্যুতীকরণ (electrification) করা হয় ।
২০১০ ওই সেকশনে নতুন একটি ট্র্যাক যোগ করে ডাবল লাইন (double track) করা হয় পিরতলা স্টেশনও এই আপগ্রেডের অংশ।

