শতবর্ষে ভাবতা আজিজিয়া। পর্ব ১ : বংশবাটি থেকে ভাবতা ।

Spread the love

শতবর্ষে ভাবতা আজিজিয়া। পর্ব ১ : বংশবাটি থেকে ভাবতা ।

————-আবু সাইদ———

পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসা (উঃ মাঃ) আগামী বছর শতবর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। ভাবতা আজিজিয়া হাইমাদ্রাসার অতীত ইতিহাস, স্বনামধন্য কিছু শিক্ষক ও কৃতী প্রাক্তনীদের নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। সবাই মতামত দেবেন।

আজকের পর্ব : আজিজিয়া হাইমাদ্রাসার অন্যতম রূপকার কিংবদন্তি শিক্ষক মৌলানা আব্দুল গফুর সাহেব।
———————————————————————-
“বংশবাটির উদ্যানে একটি ফুল ফুটেছে। এটি যত্নের অভাবে নষ্ট হলে কেয়ামতে জবাব দিতে হবে।” বংশবাটির মসজিদে মুসল্লিদের সামনে আব্দুল গফুর সম্পর্কে একথা বলেছিলেন পীর আব্দুর রহিম সাহেব। মক্তবে পড়াকালীন শৈশবেই গফুর সাহেবের উন্নত মেধার সন্ধান পেয়েছিলেন পীর সাহেব।
গফুর সাহেবের প্রাথমিক পড়াশোনা গ্রামের স্কুলে । সেখান থেকে আহিরণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ ছিল নৌকা করে আহিরণ আসতে হত।পরবর্তীতে তিনি ভর্তি হন জঙ্গিপুর মুনিরিয়া হাইমাদ্রাসাতে। মুনিরিয়া থেকে তিনি ১৯৩০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ঢাকা বোর্ডের অধীনে। গফুর সাহেব যখন জঙ্গিপুরে পড়ছেন তখন সেখানে সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন মোঃ ইসাহাক সাহেব। পরবর্তীতে ইসাহাক সাহেব ভাবতা আজিজিয়াতে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন।
ভাবতায় বসেই গফুর সাহেবের মেধার সন্ধান পেয়েছিলেন হাজি শেখ আবদুল আজিজ সাহেবে।মূলতঃ তাঁর আমন্ত্রণেই গফুর সাহেব ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসাতে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদেন ১৯৩৪ সালে। সে সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন মীর ইউসুফ সাহেব। মীর সাহেবের বেতন ছিল ১২৫ টাকা । আর গফুর সাহেবের বেতন ছিল ১১০ টাকা । আজিজ সাহেব নিজ পকেট থেকে ৫ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ১১৫ টাকা করে দেন। যেহেতু প্রধান শিক্ষকের থেকে তো আর বেশি করা যায় না। সেজন্য ১১৫ টাকাই রাখা হয়। এখান থেকে প্রতীয়মান হয় গফুর সাহেব আজিজ সাহেবের কতটা প্রিয় পাত্র ছিলেন।আজিজ সাহেব গফুর সাহেবকে বলেছিলেন ‘আপনি আমাকে কবরস্থ করে যাবেন।’
গফুর সাহেব ছিলেন ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসার একজন স্তম্ভ, উন্নয়নের কান্ডারী। তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবি সহ চার পাঁচটি ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। গফুর সাহেব আজিজিয়া হাইমাদ্রাসার মসজিদে থেকেই শিক্ষকতা করতেন।
তাঁর স্মৃতি চারণায় মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র আবুল কালাম লিখেছেন ‘ জনাব মরহুম আব্দুল গফুর সাহেব ফজরের আজানের আগে একটি বড় বদনায় পানি নিয়ে কলেমার গুনগুন শব্দ করতে করতে বের হতেন। আর আমরাও তাঁর শব্দে জেগে ওঠে নামাজান্তে পড়তে বসতাম। তিনি ছিলেন আইনস্টাইনের মতো।ক্লাস রুমে তাঁর হিউমার দিয়ে পড়ানো, আরবি সাহিত্য পড়ানোর সময় একই সাথে অনর্গল বাংলা ও ইংরেজিতে বোঝানোর চেষ্টা চিরকাল মনে রাখার মতো। তাঁর গুণাবলীর শেষ নেই ।’
গফুর সাহেব ১৯৭২ সালে অবসর নেওয়ার পরে মাদ্রাসার টানে আরও পাঁচ বছর আজিজিয়াতে শিক্ষকতা করে গেছেন।


মরহুম আব্দুল গফুর সাহেবের নাম ভাবতা আজিজিয়া হাইমাদ্রাসার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।(সংক্ষেপিত)। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার : গফুর সাহেবের পুত্র মোঃ মইনুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেন চাচা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *