শফিকুল ইসলাম,অয়ন বাংলা,নদিয়া:-
কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ের হ্যাটট্রিক করল তৃণমূল। মোদির হাওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র ৭৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হলেন। মহুয়াদেবী বলেন,মানুষ ভোট দিয়েছেন,আর সংখ্যালঘু ভাইয়েরা উজাড় করে আমাকে ভোট দিয়েছেন।সবাইকে অভিনন্দন।মহুয়াদেবী আরও বলেন, এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের কর্মীদের উৎসর্গ করলাম। কর্মীরা আমার হয়ে ভোট করেছেন। এই কেন্দ্রে বহু উন্নয়নমূলক কাজ করার আছে। রাস্তাঘাট থেকে পানীয় জল অনেক কিছু হয়েছে। কৃষ্ণনগর থেকে যেটা মাইনাস এসেছে, তা নিয়ে শুধু বলব, এই শহরের মানুষ কিছু বলার চেষ্টা করেছেন। ফলাফল পর্যালোচনা করা হবে।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্রকে প্রার্থী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চমক দেন। দিল্লি থেকে ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে কৃষ্ণনগরে উড়িয়ে এনে ভোট পরিচালনা করেন মহুয়া। নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সংগঠন মজবুত করেন তিনি। সাতটি বিধানসভার প্রতিটি বুথে লড়াকু ইমেজে টক্কর দেন। আর তাতেই সাফল্য এসেছে বলে তৃণমূল নেতারা মনে করছেন।
সাতটি বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল সবচেয়ে বেশি লিড নিয়েছে চাপড়া বিধানসভা এলাকায়। সেখানে জেবের শেখের নেতৃত্বে শাসক দল ৫০ হাজার লিড নিয়েছে। বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের সভায় চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন চাপড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জেবের সেখ, চ্যালেঞ্জ জিতলেন তিনি । অনুব্রতকে জানিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে চাপড়া বিধানসভা থেকে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশী ভোটে লিড দেবেন । শুধু মুখে নয় কাজে করে দেখালেন তিনি । চাপড়া থেকে মহুয়া লিড পেলেন ৫০৬৯১ ভোটে । মহুয়ার জয়ের পথ সুগম করতে অত্যন্ত জরুরী ছিল এই লিড ।
এই সাফল্যে স্বভাবতই খুশি জেবের শেখ । তিনি বলেন “এই জয় মা মাটি মানুষের জয়। বিধায়ক রুকবানুর রহমান , সংখ্যালঘু সভাপতি রাজীব সেখ সহ ব্লকের সমস্ত নেতৃত্ব এবং সর্বোপরি অঞ্চল ও বুথ স্তরের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই সাফল্য এসেছে “। তিনি এই সাফল্যকে তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত কর্মীদের উদ্দেশ্য উৎসর্গ করেছেন।
অনুব্রত মন্ডল ,জেবের শেখ কে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন । এখন দেখা যাক কি পুরস্কার জেবের শেখ পান ।কালীগঞ্জ, পলাশীপাড়া, তেহট্ট থেকে বিপুল লিড এসেছে। তবে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা থেকে শাসক দলের ৫৩ হাজার ৯১২ ভোট ঘাটতি হয়েছে। অন্যদিকে, পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতেই হার হয়েছে মহুয়ার। একমাত্র প্রাক্তন কাউন্সিলার অনুপম বিশ্বাসের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১হাজার ১৪৫ ভোটে লিড পেয়েছেন তিনি। পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহার ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও হার হয়েছে শাসক দলের। শহর থেকেই ২৭ হাজার লিড নিয়েছে বিজেপি। আর কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার গ্রামীণ এলাকা থেকে বিজেপি লিড নিয়েছে ২৫ হাজারের বেশি।কালীগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল লিড দিয়েছে। দশম রাউন্ড শেষে প্রায় চল্লিশ হাজার ভোটে তৃণমূল এগিয়ে ছিল।
নাকাশিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমদিকে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও শেষদিকে বিজেপির ভোট ছিল বেশি। তবে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থীর জয় হলেও কালীগঞ্জ ও নাকাশিপাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ কর্মী থেকে নেতা-নেত্রীদের তেমন উচ্ছ্বাস ছিল না। কালীগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ বলেন, বিকেল ছয়টা পর্যন্ত দশম রাউন্ড শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজার ভোটে কালীগঞ্জ বিধানসভা থেকে আমাদের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র এগিয়ে রয়েছেন। জয় নিশ্চিত জেনেও তেমন উচ্ছ্বাস নেই কেন? উত্তরে তিনি বলেন, রমজান মাস তাই আমরা অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস করছি না। তাছাড়া, দলীয়ভাবে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস না করার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকায় যাতে শান্তি বজায় থাকে সেটাই দেখার চেষ্টা করছি।
ফল ঘোষণা শেষ হওয়ার আগেই গণনা কেন্দ্র ছাড়েন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। দৃশ্যতই তাঁকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল। প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণবাবু বলেন, আমরা ৪০০ টির বেশি বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারিনি।