অয়ন বাংলা,প্রতিবেদন:- মাঝে কিছু দিন এনআরসি নিয়ে আলোচনায় ভাটা পড়েছিল। মোদি দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পুনরায় আলোচনায় জোয়ার এসেছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে , কোথাও যথাযথ আলোচনা হচ্ছে না। আলোচনার তিনটি স্তর আছে। প্রথম স্তর , বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় এনআরসি হওয়া উচিত কিনা। দ্বিতীয় স্তর, এনআরসি করার জন্য দেশের বর্তমান আইন কী। আইনের সুবিধা অসুবিধা, ভালমন্দ, ত্রুটি ইত্যাদি। তৃতীয় স্তর, দেশের বর্তমান আইন অনুযায়ী এনআরসি হলে দেশের সরকার ও নাগরিকদের করণীয় কী। আমার মনে হয়, এনআরসি করার বর্তমান আইন এবং আইন তৈরি করার পিছনের মানসিকতা সম্পূর্ণ ভুল। কারণঃ – ১)দেশ ভাগের উপর ভিত্তি করে এনআরসি করার তত্ত্ব সঠিক নয়। ২) ৫০সালের পরেই গোটা দেশে না করা। ৩)জন্মগত অধিকার কেড়ে নেওয়া। ৪) এনআরসি না করেই জনগণকে নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া।৫)নাগরিকত্ব না দিয়েই ভোটার তালিকায় নাম তোলা। নির্বাচন করানো । সরকার গঠন করা।
দরকার ছিল প্রথমে এনআরসি করা। তারপর এনআরসির মধ্যে যারা ১৮বছর পার করবে তাদের ভোটাধিকার দেওয়া। প্রশ্ম হল নির্বাচন কমিশন,আধিকারিক, রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, নির্বাচনে প্রার্থী এদের কাছে কি নিজেদের নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট আছে। নেই। তা হলে আমরা নিজেরাই বেনাগরিক হয়ে নাগরিক খুঁজছি। সবটাই গোলমেলে। যাদের মত নিয়ে সরকার তারা নাগরিক না হলে সরকারও অবৈধ তা হলে যাদের ভোটাধিকারে সরকার গঠিত হচ্ছে তাদেরকেই নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের দিয়েই এনআরসি করতে হবে। সংবিধান তৈরি করার সময়ই কারা নাগরিক হবে তা ঠিক করা হয়েছিল। সে নিয়ম ৫৫সালে প্রথম সংশোধন করে। মাঝে অনেক বার করা হয়েছে। সর্বশেষ করা হয়েছে ২০০৩ সালে। তার পর ২০১৬তে করা হয় । এখনও আইনে পরিণত হয়নি। আসাম বাদে দেশের অন্য কোথাও এনআরসি হলে ২০০৩ সালের আইন অনুযায়ী হবে। আসামের জন্য বিশেষ কিছু ছাড় আছে। যতদিন ২০১৬সালের সংশোধনী বিল আইনে পরিণত না হচ্ছে ততদিন ২০০৩ সালের আইন অনুযায়ী হবে। পশ্চিমবঙ্গেও তাই হবে। আসামের ক্ষেত্রে বর্ষের মানদন্ড ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাত। গোটা দেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গে মানদন্ড ১৯৪৮সালের ১৯জুলাই। এখানে মুসলিম অমুসলিম এর কোন ফারাক নেই। তাই আসামের বাঙালিদের চেয়ে বাংলার বাঙালিদের কপালে দুর্ভোগ আছে ঢের বেশি।
বর্তমান আইনে এনআরসি হলে যে সমস্ত প্রমাণ পত্র জমা দিতে হবে তা অধিকাংশ মানুষের পক্ষে সংগ্ৰহ করা সংগত কারণেই প্রায় অসম্ভব। এখানে দ্বায়িত্ব সরকারের সে সমস্ত প্রমাণ সরবরাহ করা। সরকার তা আসামে করেনি। এখানেও করবে না। কারণ এ সম্পর্কে আইনটিই সাধারণ ন্যায় বিচার বিরোধী।এ আইন তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। তাদের স্বার্থে। এখনো সেটাই চলছে। সেই আইন অনুযায়ী যার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে তাকেই প্রমাণ করতে হবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগকারিকে প্রমাণ করতে হবে না যে তার অভিযোগ সত্য। এ রকম আরো ন্যায় বিচার বিরোধী আইন আছে। এ সব আইন প্রনয়নের জন্য দেশের সব বড় রাজনৈতিক দলগুলিই দ্বায়ী।
যারা এনআরসি নিয়ে ভাবিত এবং এর বিপদ থেকে বাঁচতে চাইছে তাদের প্রায় সবার কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে প্রমাণ পত্র জোগাড় করা। তাই বর্তমান আলোচনাগুলিতে গুরুত্ব পাচ্ছে কোন কোন কাগজ লাগবে। কোথায় পাওয়া যাবে। কীভাবে পাওয়া যাবে।
আমার মনে হয় এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে বর্তমান আইনের পরিবর্তন বা সংশোধনের জন্য গণআন্দোলন গড়ে তোলা। বিজেপি বিরোধী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সে কাজ করা। আমার মনে হয় , বিজেপি বিরোধী কোন দলই নাগরিকত্ব আইন ভাল করে বোঝেনি। গুরুত্ব দেয়নি। এখনো সময় আছে বিজেপি বিরোধী সব দল নাগরিকত্ব আইন ভাল করে বুঝতে পারে। দেশের জন্য কত ভয়ংকর তা জানতে পারে। দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করবে তা উপলব্ধি উপলব্ধি করতে পারে। ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভোটকেন্দ্র পর্যায়ে মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন করতে পারে। নাগরিকত্ব আইনের কুফল জনগণকে বোঝাতে পারে। বিজেপি বিরোধী দলগুলো এ দায়িত্ব পালন না করলে জনগণকে এ উদ্যোগ নিতে হবে। সব দলের সমর্থকরা নিজ নিজ দলের নেতাদের বোঝাতে পারে। চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথবা সব দলের সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সে কাজ শুরু করলে নেতারা পরে আসবে। এ কাজ কোন অরাজনৈতিক সংগঠন বা পেশাজীবী সংগঠনও শুরু করতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এ কাজটি করা খুবই জরুরি। শুধু এই কাজটি করে এখানে বিজেপির বিজয় রথকে থামিয়ে দেওয়া যায়। এখন থেকেই কাজ শুরু করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এটাকেই প্রধান নির্বাচনী ইস্যু করে তুলতে হবে।