অয়ন বাংলা ,কোলকাতা :-একুশে জুলাইয়ের সভায় , তাঁর মুখে এল না কোনও ভগবানের নাম। মন্ত্রোচ্চারণ থেকেও রইলেই কয়েশ ক্রোশ দূরে। রাম, মা কালী, বিশালাক্ষী, মা দুর্গা, বা গণেশ; কেউই ঠাঁই পেল না তাঁর বক্তব্যে। এটাই কি তবে ‘পিকে এফেক্ট’?
সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতগুলি সভা করেছেন, সবেতেই বিজেপির রাম ভক্তিকে কটাক্ষ করেছেন। সঙ্গে নানা ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, তিনি কতটা ধর্মনিরপেক্ষে। এবং কতটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার দিকে নজর দেন তিনি। কিছুটা বিজ্ঞাপনই করতেন বটে। কিন্তু একুশের মহামঞ্চে আচমকাই সে সব থেকে দূরে পালালেন মমতা। কিছুটা কৌশলি কায়দাতেই এড়িয়ে গেলেন তিনি। যা পর্যবেক্ষণের পর পর্যবেক্ষকদের অনুমান, তৃণমূলের নব্য নিয়োজিত ভোট ম্যানেজার প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই এই পথ বেছে নিয়েছেন মমতা।
প্রাক লোকসভা নির্বাচন পর্বের কথাই মনে করে দেখা যাক। এক একদিনে গড়পড়তা তিনটি করে সভা করেছিলেন মমতা। সেখানে আগাগোড়া উনিশ বিশ ছাড়া তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম একই থাকতো। আরও একটা জিনিস থাকতো। ভাষণ শেষে আল্লাহ, কালী, লক্ষ্মী থেকে শুরু করে আরও বেশ কয়েকজন ঠাকুর দেবতার নাম। তবে এসব করেও লোকসভা ভোটে যে নেত্রী খুব একটা সুবিধে করে উঠতে পারেননি তা এখন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। সে কারণে এবার মেপেই পা ফেলছেন তিনি।
এবারের একুশের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে আসেনি ধর্মের কোনও কথা। তার বদলে বলতে শোনা যায় বানতলা চর্মনগরী কিংবা দেউচা পাঁচামি কয়লা খনির কথা। আর সেখানে কত চাকরি হতে পারে সেই সম্ভাবনার কথা আওড়াতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক এখানেই প্রশান্ত কিশোর নিজের খেলা খেলতে শুরু করেছেন বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
দিনকয়েক আগে পর্যন্তও শোনা যাচ্ছিল, একুশের তৃণমূল সমর্থকদের নাড়ি মেপে নিতে মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু সেটা হলে বিরোধী আক্রমণ যেভাবে ধেয়ে আসত, তা আগেভাগে বুঝেই নিজেকে উপস্থিত রাখেননি প্রশান্ত। কিন্তু তাঁর পরামর্শ যে তৃণমূল নেত্রীকে চালিত করছে, সেই প্রমাণ একবার নয়, এদিন একাধিকবার পাওয়া গিয়েছে মমতার ভাষণে। ইদানীং সর্বত্রই বিজেপিকে মমতা আক্রমণ করেন তাদের অত্যাধিক রাম প্রীতি নিয়ে। রামের উপর বিজেপির একার ‘কপিরাইট’ আছে কিনা সেই প্রশ্নও ছুড়ে দিতেন তিনি। কিন্তু এই সব থেকেই নিজেকে এদিন গুটিয়ে রাখলেন মমতা।
বিশেষ করে সংখ্যালঘু তোষণের প্রশ্ন যখনই ওঠে, তখন তৃণমূল কংগ্রেসকেই তুলোধনা করতে অভ্যস্ত বিরোধীরা। আর তিনি বা তাঁর দল সংখ্যালঘু তোষণ করেন না, এই প্রমাণ দিতে গিয়ে অনেক সময়ই বড্ড মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে নেত্রীকে। এই প্রতি আক্রমণই কোথাও ডিফেন্সে ফাঁক ফোঁকর রেখে দিচ্ছিল। যার দ্বারা কিছুটা হলেও সেই অভিযোগ জমি পেয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মমতা যখন নিজেকে ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ইস্যু থেকেই সরিয়ে রেখে দিচ্ছেন, তখন সেই প্রশ্ন ওঠারও কোনও জায়গা নেই। ফলে এই পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যগুলি খুব সহজেই দৃশ্যমান হয়েছে মমতার ভাষণে। যার পিছনে বকলমে কৃতিত্ব প্রশান্ত কিশোরেরই রয়েছেন বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।