নিউজ ডেস্ক,অয়ন বাংলা, চুঁচুড়া:- আজব কান্ড আজব প্রশ্ন ,জয় শ্রী রাম আর কাট মানি নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন। জয় শ্রী রাম বলতে না চাওয়ায় বিজেপির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ হোক কি কাটমানি ফেরত চেয়ে তৃণমূল নেতা ও সুপারভাইজারের বাড়ি ঘেরাও, ভাঙচুর! আরও একধাপ এগিয়ে সাংসদের বিরুদ্ধে কাটমানির পোষ্টার কাণ্ডে পুলিশ অফিসারের গ্রেফতারি হোক কি তৃণমূলের নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের আন্দোলনই হোক না কেন, খবরগুলো বঙ্গ রাজনীতি একটা নতুন মাত্রা এনেছে। তাই নয় এই ধরনের খবরে বেশ কয়েকদিন ধরে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছিলেন রাজ্যের মানুষ। কিন্তু জয় শ্রী রাম ধ্বনি বা কাটমানি ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ, আর তা নিয়ে যদি মাধ্যমিকে দ্বিতীয় সেমিস্টারে রচনা আসে তা হলে সবাইকেই তো হতচকিত হতে হয়। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে হুগলি জেলার পোলবা ব্লকের আকনা গ্ৰাম পঞ্চয়েতের আকনা ইউনিয়ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে।
জানা গেছে, সোমবার মাধ্যমিকের দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা পরীক্ষা ছিল। প্রশ্নপত্রের শেষে পাঁচ নম্বরের দুটি প্রশ্ন আসে যে কোন একটি লেখার জন্য। প্রথমটি ছিল, ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি সমাজ জীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে’, এ প্রসঙ্গে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন রচনা কর। দ্বিতীয়টি ছিল, ‘দূর্নীতি দমনে কাটমানি বন্ধ ও ফেরৎ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ’, এ বিষয়ে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
উত্তর লেখার নির্ধারিত সময় শেষ হবার দশ মিনিট আগে একজন শিক্ষকের নজরে এই প্রশ্ন দুটি আসার পরই শুরু হয় বির্তক। শিক্ষকদেরই একটা পক্ষ বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের নজরে এনে প্রশ্ন দুটির বিরোধিতায় সরব হয়। প্রধান শিক্ষক নিজে বিড়ম্বনার পড়ে প্রশ্ন দুটি পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়ার সিন্ধান্ত নেন। ছাত্রদের বলা হয় শেষের প্রশ্ন দুটি বাতিল করা হল। কারোর লেখার দরকার নেই। প্রশ্ন দুটির জন্য নির্ধারিত পাঁচ নাম্বার সবাইকে দিয়ে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে শোকজ করা হয় ওই স্কুলেরই বাংলার শিক্ষককে যিনি এই প্রশ্নটি করেছেন তাকে।
স্থানীয় লোকজনসহ পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা এবং এলাকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্কুলের বিরুদ্ধে। আকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান নির্মল ঘোষ বলেন, ‘ঘটনাটি যখনই আমার নজরে আসে তখনই তদারকি করে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাই। যে শিক্ষক এই ধরনের রাজনৈতিক বিষয় প্রশ্নপত্রে ঠাঁই দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করি প্রধান শিক্ষককে। কারন ঘটনাটা খুবই নিন্দনীয় লেগেছে আমাদের কাছে। পরে প্রধান শিক্ষক সহ অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটনাটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন ঘটনাটি অজান্তে ঘটে গেছে। এই ধরনের কোন ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।’
অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোহিত কুমার পাইন জানান, ‘পরীক্ষা চলাকালীন ঘটনাটা সামনে আসতেই সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত শিক্ষকদের ডেকে ঘটনার নিন্দা করি। এই ধরনের রাজনৈতিক প্রশ্ন যে কখনই প্রশ্নপত্রে আসা উচিত ছিল না সেটাও জানাই এবং প্রশ্নটি বাতিল করি।’ অভিযুক্ত শিক্ষক সুভাশিষ বোসও বিষয়টা বুঝতে পেরে লিখিত চিঠি দিয়ে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘এটা আমার অনিচ্ছাকৃত, অনভিপ্রেত পদক্ষেপ। কাউকে আঘাত করা বা কোন রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে এটা করা হয়নি। সাম্প্রতিক কালের ঘটে চলা অলোচিত বিষয় বলে এটা দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছে এটা ভুল হয়েছে। তাই আমি ক্ষমা চেয়েছি লিখিতভাবে।’ প্রধান শিক্ষক আরও জানান, প্রশ্ন দুটির পূর্নমান প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।