প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বললেন ” এনআরসির মাধ্যমে বিজেপির মুসলিম তাড়ানোর পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে গেছে”

Spread the love

অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক:- আসামের এন আর সি নিয়ে এবার মুখ খুললেন তরন গগৈ।
লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল এনআরসি। সেই নিয়ে টালমাটাল চলছিল। অবশেষে গতকাল এনআরসি নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হল। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে তাতে বিস্তর গলদ। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক মতভেদ নির্বিশেষে অসন্তুষ্ট সকলে। চাপা ক্ষোভে ফুটছে আসাম। তবে এই এনআরসির উদ্যোক্তা ছিলেন আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।

কিন্তু তাঁর কাছে এই এনআরসি তালিকা কেমন? তাঁর কথায়, “আমরাই আগে থেকে বলেছিলাম, চেয়েছিলাম জাতির দলিল বা রক্ষাকবচ তৈরি হবে, অসমে যে বিদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে সমস্যা ছিল, তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বিদেশিদের নাম বাদ দিতে হবে। আর যারা প্রকৃত ভারতীয় তাদের নাম এনআরসিতে থাকবে। এই পদ্ধতি আমিই শুরু করেছিলাম। ২০০৫ সালে আমিই প্রস্তাব দিয়েছিলাম আসুকে। বলেছিলাম, একটা এনআরসি করা হোক। তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। একটা নথিও পাওয়া যাবে। আর কেউ করেনি। এজিপি (অসম গণ পরিষদ) বা বিজেপি করেনি। আমরা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে এই প্রস্তাব দিই। তারপর পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়। কিন্তু বরপেটায় একটা সমস্যার জন্য তা আটকে যায়। আজ যেভাবে কাজটা করা হল, তাতে আমার মনে হয়, কাজটা নষ্ট হয়েছে। ওরা যখন খসড়া তালিকা প্রকাশ করে ৪০ লক্ষকে বাদ দিয়েছিল, তখনই বলেছিলাম, এতে কাজের কাজ কিছু হবে না।”

তবে এই উদ্যোক্তাই আজ হতাশ তালিকা দেখে। তাঁর কাছে এই তালিকা বুমেরাং হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবে বুমেরাং হয়েছে। যে হিন্দু বাঙালিরা ভোট দিয়ে ওদের এনেছিল, তাদের বেশিরভাগের নাম নেই। হিন্দিভাষী, গোর্খা, মুসলিম অনেকেরই নাম নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই নাম বাদ যাওয়ার তালিকায় সংখ্যাগুরু অংশই হিন্দু বাঙালি। ওরা আমাকে ভোট দেয়নি। ওরা হিন্দুর নামে ভোট দিয়েছে, আর ওদেরই সবচেয়ে খারাপ করেছে বিজেপি।”

তিনি প্রশ্ন তুলে দিলেন একটি। তাঁর কথায়, “এগুলো কে শুরু করল? ওরা কী বলল? বলল যে, যারা হিন্দু বাঙালি, তাদের ভাবনার কিছু নেই। হিমন্ত বিশ্বশর্মাও তো বললেন যে যারা দুর্গাপুজো, শিবপুজো করেন, তাদের চিন্তা করতে হবে না। এই আশ্বাসটা কে দিল? আর তাদেরই নাম বাদ চলে গেল! আর অমিত শাহই বা কী বলেছিলেন? বলেছিলে, কংগ্রেস নাকি সাহস করে এসব করতে পারেনি। যখন খসড়া প্রকাশিত হয় তখন তো বেশ বলেছিলেন, এরা বিদেশি। ওদের নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরা কারা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানেন না।” অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি মনে করেন যে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি চলছে, সেখানে হিন্দুদের থেকে কংগ্রেসের কিছুটা দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা মুসলিম তোষণ করে তাদের ভোটে ক্ষমতায় থেকেছি, এই অভিযোগ তো আমার বিরুদ্ধেই উঠেছে। মোদী এখানে এসে কী বলেছেন? বলেছেন, ‘এখানে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আছে, যারা এখানে এসে অসমীয়াদের ভাত কেড়েছে, জমি কেড়েছে, চাকরি কেড়েছে।আমরা ক্ষমতায় আসলে এদের ফেরত পাঠিয়ে দেব।’ এখন কী প্রমাণিত হল? এটাই প্রমাণিত হল যে এদের মুখে হিন্দুত্বের বুলি শুধুই ক্ষমতার জন্য, হিন্দুদের ভালর জন্য নয়। তাহলে ওরা হিন্দুদের চাকরি নিশ্চিত করত। তা পারেনি।”

শেষে তিনি আরও একটি প্রশ্ন তুলে দেন। তিনি বলেন, “ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে কারা যায়? যারা বিদেশি বা যারা সন্দেহভাজন। তাদের নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে গিয়ে নথিপত্র পেশ করে। কিন্তু এঁরা কি বিদেশি? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তো তা বলছে না। তাহলে এরা কেন যাবে ট্রাইব্যুনালে?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.