এনআরসি ও সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে কিছু কথা

Spread the love

এনআরসি ও সিটিজেশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে কিছু কথা:

অয়ন বাংলা,প্রতিবেদন :- বিজেপি প্রচার করছে এনআরসিতে শুধু মুসলমান বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাই বাদ পড়ছে আর সব হিন্দু সুরক্ষিত, এটা যে কত বড় মিথ্যা কথা সেই বিষয়ে একটু বিস্তারিত লেখা, বিজেপির মিথ্যাচারকে সকলের সামনে তুলে ধরুন।

১) এনআরসি বাদ পড়া মানুষের সংখ্যা ১৯ লক্ষ, যার মধ্যে ১৭ লক্ষ বাঙালি যার মধ্যে ১১ লক্ষ হিন্দু বাঙালি।

২) এই এনআরসি প্রক্রিয়া চলাকালীন এখনো পর্যন্ত কম করে ৫৫ জনের ওপর আত্মহত্যা করেছে যার মধ্যে প্রায় ৪০ জন হিন্দু বাঙালি

৩) লোকসভা ভোটের আগে আসামের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল বলেছিলেন “ধুতি, লুঙ্গির ভোট চাইনা, আসামে বিজেপি খিলোনজিয়ার ভোটেই জিতবে”। ধুতি বলতে বোঝাচ্ছে হিন্দু বাঙালি আর লুঙ্গি বলতে বোঝাচ্ছে মুসলমান বাঙালি আর খিলোনজিয়া মানে অসমীয়া। মানে বিজেপির বাঙালিদের ভোটের প্রয়োজন নেই, তারা অসমিয়াদের ভোটেই আসামে জিতবে।

৪) চন্দ্রযান অভিযানের ইস্রোর বৈজ্ঞানিক জিতেন্দ্রনাথ গোস্বামীর পরিবারের নাম ওঠেনি, নাম ওঠেনি আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের, কার্গিল যুদ্ধে লড়াই করা সেনার পরিবারের লোকেদেরও। এমন কি নাম ওঠেনি আসামের বিজেপির কাছাড় জেলা কমিটির সদস্য ববিতা পাল ও তার পরিবারের লোকেদের। ববিতা পাল ভোটের আগে কাছাড় এলাকায় প্রচার করেছিল যে বিজেপিকে ভোট দিলে সব হিন্দু বাঙালিরা সুরক্ষিত। তার ছেলে ও তার নাম এনআরসিতে নেই। যেকোনো দিন তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হতে পারে।

এইবার আসি সিটিযেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বা নাগরিকত্ব বিল নিয়ে :

যখন দেখা গেল যে এনআরসির জন্য লক্ষ লক্ষ হিন্দু বাঙালি রাষ্ট্র হতে চলেছে তখন বিজেপি আমাদের বললো আমরা নাগরিকত্ব বিল আনছি এবং সব হিন্দু সুরক্ষিত শুধু মুসলিমদের আমরা তাড়াচ্ছি যেটা হলো সম্পুর্ন মিথ্যে কথা।

১) প্রথমে নাগরিকত্ব বিলে কোথাও লেখা নেই তুমি নাগরিকত্ব পাবে। ওখানে যেটা বলা হয়েছে ৬ বছর টানা ভারতে থাকলে তুমি অ্যাপলাই করতে পারবে। কিন্তু সেটাও তুমি করতে পারবে তখন যখন তুমি নিজেকে প্রথমে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ঘোষণা করো। মানে ব্যাপারটা এরম দাঁড়ালো যে আগে তোমায় এটা স্বীকার করতে হবে তুমি দোষী তারপর ৬ বছর পর ওরা ভেবে দেখবে তোমার শাস্তি মুকুব করবে কিনা। এবং এই ৬ বছরে যদি তোমার নামে একটি ছোট্ট ট্রাফিক সিগনাল ভাঙ্গারও কেস থাকে তুমি পাবে না। এবং সর্বশেষে এই ৬ বছরে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন সরকার কি করবে কেউ জানে না।

২) এই নাগরিকত্ব বিলে নাগরিকত্ব পাওয়ার কিছু শর্ত আছে। প্রথমে তুমি ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে যে ভারতে এসছো তার প্রমান দিতে হবে। মানে ধরো তোমার দাদু দিদা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে এসেছিল ১৯৬৬ সালে , যখন পালিয়েছিল তখন যে থানায় কমপ্লেন করেছিল তার FIR copy কিংবা খবরের কাগজে যদি এই নিয়ে খবর বেরোয় তার কপি প্রমান স্বরূপ জমা দিতে হবে।

৩) নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য তোমার কাছে long term visa থাকতে হবে। এই visa মূলত পাকিস্তান থেকে যে পাঞ্জাবীরা এসেছিল তাদের দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালিরা এই ভিসা পাইনি। তারা রিফিউজি সারটিফিকেট পেয়েছিল যেগুলো ওরা আজ আর মান্যতা দিচ্ছে না।

নাগরিকত্ব বিলে যে শর্ত দেওয়া আছে, তা যদি খুঁটিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখবে প্রায় কোনো বাঙালি হিন্দুই নাগরিকত্ব পাবে না। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলায়ে কোটি কোটি মানুষ পূর্ব বাংলা থেকে এখানে এসছে পিঠে কাটা তারের দাগ নিয়ে। এক রাশ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সর্বহারা হয়ে আবার একটু একটু করে নিজেদের গড়ে তুলেছে এই মাটিতে। আজ বিজেপি আবার সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই ঠেলে দিচ্ছে এই মানুষগুলোকে। আসামে ৯০ লক্ষ বাঙালি থাকে, তার মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৭ লক্ষ রাষ্ট্রহীন হয়ে গেছে। যদি এই বাংলায়ে এনআরসি হয়ে কম করে কয়েক কোটি বাঙালি রাষ্ট্রহীন হতে চলেছে। সংগঠিত হও, রুখে দাঁড়াও।

ওরা মুসলমান বাঙালি তাড়াচ্ছে না, ওরা হিন্দু, মুসলমান সব বাঙালিকেই তাড়াচ্ছে। বারবার এটা প্রমান হয়েছে বিজেপি বাঙালি বিরোধী দল। ওদের মূল লক্ষ্য বাংলা থেকে বাঙালিকে তাড়িয়ে এটাকে পূর্ব বিহার – উত্তর প্রদেশ বানাবে যার প্রমান আমরা রোজ পাচ্ছি মূর্তি ভাঙা থেকে এবং তাদের নেতা নেত্রীদের কথায়। তারা আক্রমণ করছে বাঙালির ভাষাকে, বাঙালির খাদ্যকে, বাঙালির দেব দেবীকে, বাঙালির মনীষীকে, বাঙালির চেতনাকে, তারা বাঙালিয়ানাকেই শেষ করে দিতে চাইছে। যদি মেরুদন্ডটা ভেঙে দেওয়া যায় এই ১০০০ বছরের মহান জাতির তাহলে তাদের অবলুপ্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তারপর শুরু হবে এখানে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ যার চিহ্ন আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে শুরু করেছি ভাটপাড়াতে, আসানসোলে, কাকিনারাতে, রিশরায়, লিলুয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.