অয়ন বাংলা,প্রতিবেদন শেখর দুবে:- আচ্ছা আপনি কি ভারতের নাগরিক? কোনওদিন নিজেকে প্রশ্ন করেছেন কেন, কীভাবে? কী এমন করেছেন যে জন্মেই দুম করে ভারতের নাগরিক হয়ে গেলেন!
আপনি ভারতের নাগরিক কারণ সেই অধিকার ভারতের সংবিধান স্বীকৃত। এরপর বিষয় আসে সংবিধানে কোথায়, কী বলা রয়েছে নাগরিকত্ব সম্পর্কে?
ভারতীয় সংবিধানের ২য় খণ্ডের ৫ থেকে ১১ নম্বর ধারা সম্পূর্ণ আলোচনা করেছে কারা কারা ভারতের নাগরিক, আর কারা নন! কীভাবে ভারতের নাগরিক হওয়া যায়। কীভাবেই বা লোপ পেতে পারে ভারতের নাগরিকত্ব। মোট চাররকম ভাবে ভারতের নাগরিক হওয়া যায়।
১- বাই বার্থ (জন্মসূত্রে)- ভারতে জন্মগ্রহণ করলে
২- বাই ডিসেন্ট- রক্তের সম্পর্ক।
৩- বাই রেজিস্ট্রেশন- নাম নথিভুক্ত করে
8- বাই ন্যাচারালাইজেশন- দেশীয়করণের মাধ্যমে।
সময়ে সময়ে বেশ কয়েকবার সংবিধান সংশোধন করে নাগরিকত্ব (পার্ট-২ আর্টিকেল-৫ থেকে১১) বিষয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন ধরুন একটা সময় অবধি বাই বার্থ অর্থে জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক হওয়ার মেইন ক্রাইটেরিয়া ছিল ‘ভারতে জন্মালেই তুমি ভারতের নাগরিক’। বিষয়টা এমন ছিল যে ধরুন কোন বিদেশি দম্পতি প্লেনে করে ভারতের উপর দিয়ে বিমানে যাচ্ছেন। এখন বিদেশি ভদ্রমহিলা যদি প্রেগন্যান্ট হন এবং কোন কারণে এমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করিয়ে ভারতের কোন শহরে বাচ্চা প্রসব করেন তাহলে তাঁর সন্তান ভারতের নাগরিক বলে গণ্য হবেন। যদিও তাকে পরে আবেদন করে ভারতের নাগরিকত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাবা কিংবা মা কারও পরিচয় দরকার ছিল না। এই বাই বার্থ রুলে চাপ যেটা হল, ধরুন রোহিঙ্গা বা অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে ঢুকল। এরপর প্রতিবছর দ্বিগুণ হারে বাচ্চা জন্মাতে শুরু করল। যদিও এই অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধ কিন্তু তাদের ভারতে জন্মানো সন্তানগুলো বৈধ ভারতীয় হয় সংবিধানের বাই-বার্থ অনুসারে। তো এই জন্য এই বাই বার্থে কিছু চেঞ্জ আনা হল
১) যদি কেউ ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০-র পরে এবং ১লা জুলাই ১৯৮৭-র আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করে থাকেন তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভারতের নাগরিক হবেন। যদি তার পিতা মাতা ভারতীয় নাগরিক হন। ২০০৩ সালে নাগরিকতা আইনে পরিবর্তন এনে এই বিষয়টি ঢোকানো হয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি পরিবারগুলির ভারতে জন্মানো সন্তানগুলি ভারতীয় হবেন কোন চাপ ছাড়াই।
এরপর ধরুন ১৯৫০-১৯৮৭ এর মধ্যে আপনার দাদু, ঠাকুমা ভারতে এসেছেন এবং এই ৩৭ বছরের মধ্যে আপনার বাবা ভারতে জন্মেছেন। এরপর আপনি যদি ১৯৮৭ -র পর ভারতে জন্মগ্রহণ করে থাকেন তাহলেও আপনি ভারতের নাগরিক। তখন ‘বাই বার্থ’ নয়, ‘বাই ডিসেন্ট’ অর্থাৎ রক্তের সম্পর্ক রুলে আপনি ভারতের নাগরিক। কারণ আপনার বাবা আগেই ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। তাই ‘আমরা যারা ১৯৭১, ভারতের নাগরিক কিনা?’ বলে চিৎকার করছেন তাদের চাপ নেওয়ার কিছু নেই।
এবার আসি তাদের নিয়ে যারা ১৯৮৭, ১ জুলাইয়ের পর ভারতে এসেছেন।
এক্ষেত্রে এরকম কোনও দম্পতির সন্তান ভারতে জন্ম নিলেও ভারতীয় হবেন না (জন্মসূত্রে)। এই রকম পরিবারগুলির জন্য দুটি নতুন রুল দেখা হবে
১) ১৯৮৭, ১লা জুলাই থেকে ২০০৪, ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের বাবা-মা ভারতীয় নাগরিক হলেই তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। এখানে জন্মসূত্রের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কটাকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে কোন নাগরিক আবেদনের ( আবেদনের মাধ্যমে, বাই রেজিস্ট্রেশন।) মাধ্যমে ভারতের নাগরিক হতে পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁকে কয়েকটি নিয়ম মানতে হবে।
১) তিনি অন্য কোনও দেশের নাগরিক হতে পারবেন না (কারণ ভারত দ্বৈত-নাগরিকত্বকে স্বীকার করে না)। আবেদনকারী ব্যক্তিকে তার আগের দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হবে।
২) আবেদনকারী ব্যক্তিকে সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে।
৩) আবেদনকারীর ভারতের সংবিধানের প্রতি আস্থা থাকতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
৪) একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ভারতভূমিতে বাস করতে হবে।
এখন এই নিয়ম অনুসারে যদি কোন শরণার্থী ভারতে ৬ বছর বা তার বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন তিনি আবেদনের মাধ্যমে (বাই রেজিষ্ট্রেশন) নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এই নিয়মকে কাজে লাগিয়েই ক্যাব (২০১৬ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল) এনে এক বড়সংখ্যার বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু-বাঙালিদের ‘শরণার্থী’ স্টেটাস দিতে চলেছে ভারত সরকার। এঁদের মধ্যে যাদের ভারতে থাকা ৬ বছরের বেশি হয়েছে তাঁরা আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেন। যাদের ৬ বছর হয়নি তারা ৬ বছর ‘শরণার্থী’ স্টেটাস নিয়ে কাটানোর পর আবেদনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্ব নিতে পারবেন।