রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের মিথ্যা বক্তব্যের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ :

Spread the love

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের মিথ্যা বক্তব্যের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ :

এম. ইউছুফ, অয়ন বাংলা, ঢাকা :

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিথ্যা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। মিয়ানমারের এ অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় মিয়ানমার বরাবরই রোহিঙ্গাদের ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসাবে চিহ্নিত করে আসছে। এখন তারা বলছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বড় ঢল মিয়ানমার গেছে।

সাম্প্রতিক আজারবাইজানের বাকুতে ন্যাম সম্মেলনে উ কিয়াও তিন অভিযোগ করেন, ‘ধর্মীয় নিপীড়ন’, ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ ও ‘গণহত্যার’ মতো শব্দ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে বাংলাদেশ ‘ভিন্নভাবে’ চিত্রায়িত করছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করার কারণ হিসেবে মিয়ানমার ওই জনগোষ্ঠীকে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যায়িত করে থাকে। দেশটি বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে গিয়েছিল।

মিয়ানমারের এ ধরনের দাবিকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলছে বাংলাদেশ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ, তথ্যবিকৃতি এবং ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা ওই বক্তব্যকে বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করছে।

বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে, যাদের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নতুন করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান হিসেবে বর্ণনা করে আসছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। সংকট প্রলম্বিত হওয়ার জন্য পুরোপুরিভাবে যারা দায়ী, তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের অযৌক্তিক অভিযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের ভিটেমাটিতে ফেরানোর ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা থেকেই মিয়ানমার অপপ্রচার চালাচ্ছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) কোনো তৎপরতা নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চ মাত্রার সতর্কতার কারণে বাংলাদেশে ঘাঁটি বানিয়ে কোথাও সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড চালানো সুযোগ নেই। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নিরাপত্তা সমস্যায় বাংলাদেশকে জড়ানোর অপচেষ্টা থেকে মিয়ানমারের বিরত থাকা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নীতি অনুসরন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু সঙ্কটের জন্য দায়ী একটি পক্ষের অন্যায্য অভিযোগ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের কর্মকান্ড রোহিঙ্গা সঙ্কট সুরাহায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্থ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.