ওয়েব ডেস্ক,অয়ন বাংলা:-
১৯১৭ সালের ৮ জানুয়ারি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অলিভার থিয়েটারে ‘জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে একটি বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে উপহার দেওয়া হয় একটি বই ছাপার যন্ত্র। নিজের লেখা নির্ভুল ছাপার উদ্দেশ্যে কবিগুরু শান্তিনিকেতনে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই ছাপাখানার – ‘শান্তিনিকেতন প্রেস’। পরে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে।
একসময় পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বহুবার হানা দিয়েছে এই ‘শান্তিনিকেতন প্রেসে’। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার এই প্রেস বন্ধ করার চিন্তা করেও পারেনি, কবিগুরুর বিশ্ব পরিচিতির ভয়ে। অথচ আজ স্বাধীন দেশে বন্ধ হয়ে গেলো কবিগুরুর ‘শান্তিনিকেতন প্রেস’।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ফরমানে শতবর্ষ পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের ‘শান্তিনিকেতন প্রেস’ বন্ধ হতে চলেছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সচল থাকলেও, গত নয়-দশ’মাসে কোনও প্রকাশনা হয়নি ‘শান্তিনিকেতন প্রেস’ থেকে। এটিকে সচল করার মতো কোনও রকম অনুদান অথবা সাহায্য নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ এসেছে প্রেসটি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়ার। শুধু তাই নয়, প্রেসের বিভিন্ন যন্ত্রও নিলাম করার ভাবনা রয়েছে।
শান্তিনিকেতন প্রেসের জন্ম স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। শতাব্দীপ্রাচীন এই প্রেস নিজেই একটি আস্ত ইতিহাস। কত ঐতিহাসিক বই বেরিয়েছে এই প্রেসের গর্ভ থেকে। একটা হেরিটেজ প্রেসকে কি এইভাবে বন্ধ করে দেওয়া যায়? যার ঐতিহাসিক মূল্য এতখানি, তাকে তো সংরক্ষণ করা উচিত। সামান্য লাভ-ক্ষতির অঙ্কে কি ইতিহাস ও ঐতিহ্য’কে মাপা যায়?
হয়ে যায়।
বিশ্বভারতী একটি নোটিস জারি করে জানিয়েছে, গ্রন্থন বিভাগের ডিরেক্টর অমৃত সেনকে চেয়ারপার্সন করে ১০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাপাখানা নিয়ে ৫ আগস্ট বৈঠকও ডাকা হয়েছে। যন্ত্রপাতি এবং বাড়িটি নিয়ে কী করা হবে, তা ওই বৈঠকে ঠিক হবে বলেই জানা যাচ্ছে। এমনকি প্রেসের মেশিনগুলিও নিলাম করা হতে পারে বলে কর্মীমহলে গুঞ্জন। ছাপাখানা বিভাগের এক প্রাক্তন কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘বিশ্বভারতী প্রেস অন্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানার থেকে অনেক উন্নত। সব মেশিনপত্রই এখনও পর্যন্ত সচল রয়েছে। দীর্ঘদিন এখানে কাজ করেছি। অথচ আজ আমাকে অন্য বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
সুশীল সমাজের কথা ভাবছিই না কিন্তু আমি আপনি সাধারণ মানুষেরাও কি চুপ থাকবো?
সৌজন্যে : Dhisankar Sengupta
ু