নিউজ ডেস্ক,অয়ন বাংলা:- রাজ্যের তিনটি আসনের উপনির্বাচনের ফল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনে আসবে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে, এই ফলাফলকে একটি রোডম্যাপ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ ২০২১-এর নির্বাচনে যে যে ইস্যুগুলি সামনে আনা দরকার। এই নির্বাচনে সেই ইস্যুগুলিকে ইতিমধ্যে উত্থাপন করেছে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরই। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এনআরসির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন, নির্বাচনী জনসভায় এনআরসির প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। আবার বিরোধী দল বিজেপি এনআরসির পক্ষে সওয়াল করেছেন। ক্ষমতায় এলে বাংলায় যে এনআরসি হবে, তা বিভিন্ন জনসভায় নিশ্চিত ভাবেই বলছেন বিজেপি নেতারা। অন্যদিকে বিজেপি ও তৃণমূলকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে মানুষের কাছে তুলে ধরতে মরিয়া বাম ও কংগ্রেস। তাঁদের মতে, গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আগামী দিনে তাদের জোটই মানুষের কাছে প্রভাব বিস্তার করবে। সব মিলিয়ে এক কথায় বললে এই নির্বাচনের ফলাফল, ২০২১-এর রণক্ষেত্র তৈরি করতে সাহায্য করবে রাজনৈতিক দলগুলিকে।
তিনটি বিধানসভার মধ্যে খড়গপুর সদরের দিকে সবচেয়ে বেশি চোখ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। এই আসনটি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া আসন। এখানে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন দিলীপ ঘনিষ্ঠ প্রেমচাঁদ ঝা। যাঁর বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। দলের পুরনো কর্মী হিসেবে পরিচিত প্রদীপ পট্টনায়েক, প্রেমচাঁদের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে প্রেমচাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন প্রদীপ সরকার। যিনি আবার এক সময় প্রেমচাঁদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আর এখানে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন চিত্তরঞ্জন মন্ডল। এলাকায় তিনি ‘মাস্টারজি’ নামে পরিচিত। এই আসনটি জিততে মরিয়া তৃণমূল ও বিজেপি দুই পক্ষই। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রেল শহরের ফলাফল নিয়ে ভরসা রাখছেন শুভেন্দু অধিকারীর উপরেই। তবে তৃণমূল এই আসনে দ্বিতীয় স্থানেও থাকবে না বলে দাবি করছেন জেলার বিজেপি নেতারা।
খড়গপুর সদরের পুরনো রেকর্ড দেখলে বোঝা যাবে, এখানে কোনও দিন কোনও আঞ্চলিক দল ক্ষমতায় আসেনি। তার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন অ-বাঙালী ভোট। রেল শহর হওয়ার সুবাদে এখানে প্রায় ৬৫ শতাংশ বাসিন্দা অ-বাঙালী। এর আগে খড়গপুরের প্রাণপুরুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ১০ বারের কংগ্রেস বিধায়ক ‘চাচাজি’ তথা জ্ঞান সিংহ সোহনপাল। ২০১৬ সালে ‘চাচাজি’কে সরিয়ে খড়গপুর সদরে পদ্ম ফোটাতে সফল হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তাই খাতায় কলমে প্রেমচাঁদ প্রার্থী হলেও, আসল লড়াইটা দিলীপ ঘোষের সঙ্গেই। এখানেও নেতৃত্বের অভাবে ধুঁকছে কংগ্রেস ও সিপিএম। তাই তাদের ভোটের বেশিরভাগটাই যাবে তৃণমূলের ঝুলিতে। আবার বিক্ষুব্ধ বিজেপির প্রদীপ পট্টনায়েক কতটা ভোট নিজের দিকে টানতে পারে, তার উপরই নির্ভর করছে বিজেপির ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ আপেক্ষিক ভাবে বলা যায়, আসল লড়াই বিজেপি বনাম বিজেপির। এক বিজেপি নেতার কথায়, এক সলতেই জ্বলছে প্রদীপের দুটি শিখা। তাই লাভটা আসলে বিজেপির। তাই একথা যদি সত্যি বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে খড়গপুর সদরে এগিয়ে রয়েছে বিজেপির প্রেমচাঁদই।
অন্যদুটি আসন করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জ বাংলদেশের বর্ডার এলাকায় হওয়ায়, এখানে মানুষের মনে কিছুটা হলেও এনআরসির আতঙ্ক তৈরি করতে পেরেছে তৃণমূল। করিমপুরে এর প্রভাবটা খুব বেশি। পাশাপাশি এই দুটি আসনে সংখ্যালঘু ভোটারও বেশি। যা বিজেপির জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ আসনটি কংগ্রেসের দখলে ছিল, তবে ২০১৯ লোকসভার নিরিখে এখানে কংগ্রেস কিছুটা দুর্বল হয়েছে। ফলে এই আসনে কংগ্রেসের ত্রাতা হতে পারে বামেরা। অর্থাৎ এই আসনে বামেদের উপরই কংগ্রেসের ভবিষ্যত। কংগ্রেস জিততে না পারলে সেই জায়গা নিতে পারে বিজেপি। অন্যদিকে, করিমপুর আসনটি তৃণমূলের দখলে ছিল। তবে লোকসভা নির্বাচনে এখানকার বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূলকে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। এমনকি উপনির্বাচনের প্রচারে বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের জনপ্রিয়তাও এলাকায় নজর পড়েছে। ফলে এই আসনে এনআরসির প্রভাব যদি বিজেপি কাটিয়ে উঠতে পারে। তবে তারাই দখল নিতে পারে এই আসনটি।