নাগরিকত্ব প্রমাণে অযথা হয়রানি করা হবে না জানাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

Spread the love

নিউজ ডেস্ক:- গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে উত্তাল বিক্ষোভ। সিএএ বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার জানাল, ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে জন্ম তারিখ অথবা জন্মস্থান সংক্রান্ত নথি বা দুটোই। অর্থাৎ এই সংক্রান্ত নথিপত্র পেশ করেই কেউ প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি এদেশের নাগরিক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জনৈক মুখপাত্র শুক্রবার একথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুসারে নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ কী কী নথিপত্র গ্রাহ্য হবে, সেগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে। তাতে এমন বেশ কিছু সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয়, এমন নথির উল্লেখ করা হবে, যাতে এটা সুনিশ্চিত করা যায় যে, কোনও ভারতীয় নাগরিককেই অযথা হয়রানি, হেনস্থার মুখে পড়তে, অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।
মুখপাত্রটি আরও জানিয়েছেন, ভারতের নাগরিকদের বাবা-মা ও দাদু-ঠাকুমার ১৯৭১ সালের আগের পরিচয়পত্র, জন্মের শংসাপত্রের মতো নথি দেখিয়ে এদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের প্রমাণ হাজির করতে হবে না। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, যে নিরক্ষর নাগরিকদের কাছে কোনও নথিপত্রই নেই, তাঁদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে থেকে সাক্ষী হাজির করার অনুমতি দিতে পারে। একটি সুচারু ভাবে তৈরি পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্য একটা খবরে বলা হয়েছে, জন্ম সংক্রান্ত শংসাপত্রই নাগরকিত্বের প্রমাণ। নিরক্ষর যাঁরা, স্থানীয়দের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেও মিলবে নাগরিকত্ব। আর ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা, তাঁরা প্রত্যেকেই দেশের নাগরিক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা নাগরিকত্ব নিয়ম ২০০৯-এর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। যেখানে পাঁচ রকমের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। গোটা দেশে নাগরিক পঞ্জি চালু করলে সেই নিয়মই বহাল হবে। সেগুলি হল—
১) কেউ যদি ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ তারিখে বা তার পর এবং ১ জুলাই ১৯৮৭ সালের আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন তা হলে স্বাভাবিক নিয়মেই এদেশের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন।

২) কেউ যদি ১ জুলাই ১৯৮৭ তারিখে বা তার পর এবং ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ বা তার আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর জন্মের সময়ে বাবা বা মায়ের মধ্যে কোনও একজন ভারতীয় নাগরিক থাকেন তা হলে তিনিও এদেশের নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবেন।

৩) কেউ যদি ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে বা তার পর জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁরা বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় বা জন্মের সময়ে বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে একজন ভারতীয় হন এবং অন্যজন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী না হন তা হলে তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবেন।

৪) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, আইনে এ কথা স্পষ্ট বলা হয়েছে, কারও জন্ম যদি বিদেশে হয় তাহলেও তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। নিয়মানুযায়ী কেউ যদি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি বা তার পর এবং ১০ ডিসেম্বর ১৯৯২ বা তার আগে বিদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর বাবা যদি জন্মসূত্রে ভারতীয় হন, তা হলে তিনিও ভারতের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন।

৫) ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বা তার পর বিদেশে জন্মানো কোনও শিশু ভারতীয় বলে বিবেচিত হবেন না, যদিনা তাঁর বাবা-মা হলফনামা দিয়ে জানান যে তাঁদের সন্তানের বিদেশি পাসপোর্ট নেই। তা ছাড়া ওই শিশুটি বিদেশে জন্ম নেওয়ার এক বছরের মধ্যে স্থানীয় ভারতীয় কনসুলেটে তাঁর নাম নথিভুক্ত করতে হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির শর্তসমূহ কী কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে কেউ যদি উল্লেখিত এই পাঁচ শর্ত পূরণ করেন তবে তাঁদের কোনও ভয় নেই। তাঁরা প্রাকৃতিক নিয়মেই ভারতের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, স্থানীয় পুরসভা থেকে কারও জন্ম শংসাপত্র তথা বার্থ সার্টিফিকেট থাকলে নাগরিক পঞ্জিতে তার ভিত্তিতে এমনিতেই তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণিত হয়ে যাবে। তবে প্রকৃত পক্ষে নাগরিকত্বের সঠিক মাপ কাঠি কী? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদফতর থেকে লিখিত নির্দেশিকা এলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
এখন দেখার পালা কত সহজে ভারতের নাগরিক হওয়া যায়।

ছবি:-প্রতীকি
সৌজন্য:-টিডিএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.