সংবাদ সংস্থা, লন্ডন: ভারতে গণতন্ত্র বিপন্ন। নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে ব্যাপক হারে। মূলত এই দুটি কারণের জন্য আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সারণি, বা ডেমোক্রেসি ইনডেক্স–এ ১০ ধাপ নেমে গিয়ে ৫১ নম্বরে পৌঁছল ভারত। লন্ডনের বিখ্যাত ইকনমিস্ট গ্রুপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে প্রতি বছর এই আন্তর্জাতিক তালিকা প্রকাশ করতে শুরু করেছে ২০০৬ থেকে। ভারত এত খারাপ অবস্থায় এর আগে কখনও পৌঁছয়নি। সৌজন্যে, অবশ্যই এনআরসি, ক্যা, সেই নিয়ে দেশজোড়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ, এবং ৩৭০ ধারা অবলোপের পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি।
প্রতি বছর ১৬৫টি স্বাধীন দেশ ও দু’টি অঞ্চলে গণতন্ত্রের হাল–হকিকৎ নিয়ে সমীক্ষা করে ইকনমিস্ট গ্রুপ–এর ইকনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তার তথ্য–পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি হয় ওই ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স। ২০১৯ সালে ভারতে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে যে দু’টি বিষয় নিয়ে, সেই ৩৭০ ধারা ও এনআরসি–র কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইনডেক্সে। বলা হয়েছে, ভারত সরকারের ওই দুটি পদক্ষেপের ফলে সে দেশে গণতন্ত্রের পরিসর সঙ্কুচিত হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ধারায় জম্মু–কাশ্মীরকে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছিল। সরকার কাশ্মীরের সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা ও ৩৫–এ ধারা লোপ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সংসদে জম্মু–কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন পাশ করানো হয়েছে। এর ফলে জম্মু–কাশ্মীর এখন আর রাজ্য নেই। তা দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে। ৩৭০ ধারা রদ করার আগে জম্মু–কাশ্মীরে বড় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে সরকার। স্থানীয় নেতাদের আটক করে। এমনকী যাঁরা বরাবর ভারতের পক্ষে কথা বলেছেন, তাঁদেরও ছাড়েনি। রাজ্য জুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এনআরসি–র প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, অসমে ১৯ লক্ষ মানুষকে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের এক বড় অংশ মুসলিম। শাসক বিজেপি–র দাবি, তাঁরা বাংলাদেশি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেকথা অস্বীকার করেছে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে দেশজোড়া সমালোচনার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, অনেকে বলছেন, নতুন আইনে মুসলিম জনতাকে টার্গেট করা হয়েছে। এইভাবে ধর্মের ভিত্তিতে জনসংখ্যায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা হচ্ছে। ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ২০ কোটি। ২০১৫ সালে ছিল ১৯ কোটি ৫৮ লক্ষ ১০ হাজার। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪.৯ শতাংশ মুসলিম। সারা বিশ্বে যত মুসলিম আছেন, তাঁদের ১০.৫ শতাংশ আছেন ভারতে। নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মুসলিম জনসংখ্যার এক বড় অংশ ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন শহরে বহু সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্সে সবার ওপরে আছে নরওয়ে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৯.৮৭। সব শেষে আছে উত্তর কোরিয়া। তার পাওয়া নম্বর ১.০৮। ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স তৈরির সময় যে বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়েছিল, তার মধ্যে আছে ভোট প্রক্রিয়া, বহুত্ববাদ, সরকারের কাজের পদ্ধতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক অধিকার। এর ওপরে ভিত্তি করে প্রতিটি দেশকে ০ থেকে ১০–এর মধ্যে একটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। ভারত ২০১৮ সালে পেয়েছিল
৭.২৩। ২০১৯ সালে পেয়েছে ৬.৯০। এশিয়া ও অস্ট্রেলীয় অঞ্চলে ভারত রয়েছে আট নম্বরে। তিমোর লেস্তে, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানের মতো দেশও আছে তার আগে। তালিকায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে অনেক উথালপাথাল হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে তাইল্যান্ডে। ২০১৮ সালে তার স্কোর ছিল ১.৬৯। ২০১৯ সালে হয়েছে ৬.৩২। গণতান্ত্রিক দেশগুলির তালিকায় সে উঠে এসেছে ৩৮ ধাপ।
সৌজন্য:- আজকাল নিউজ ডেস্ক