তিনি মতুয়া। তিনি সদ্য খুন হওয়া মতুয়া বিধায়কের স্ত্রী।

Spread the love

জয়নাল আবেদিন,অয়ন বাংলা:- নিজের মাঠ থেকেই ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন কৃষ্ণগঞ্জের নিহত তৃণমূল নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার নদিয়ার রানাঘাটে মতুয়া মহাসম্মেলনের মঞ্চে উঠে এই লোকসভা ভোটের তরুণতম তৃণমূল প্রার্থী রূপালী জানালেন, নেত্রী তাঁকে যা দায়িত্ব দিয়েছেন, তা তিনি পালন করবেন।

রানাঘাট ২ ব্লকে মাটিকুমড়ার মাঠে মঞ্চে সাজানো সত্যজিতের ছবি। সকাল থেকেই নানা জায়গা থেকে ডঙ্কা বাজিয়ে দলে-দলে এসেছিলেন মতুয়ারা। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। সভা শুরুর সময় হতে অন্য সকলের সঙ্গেই মঞ্চে উঠলেন রূপালী। কোলে তাঁর দেড় বছরের ছেলে সৌম্যজিৎ।

সরস্বতী পুজোর আগের রাতে হাঁসখালিতে নিজের বাড়ির কাছেই খুন হয়েছিলেন সত্যজিৎ। এই খুনের ঘটনায় মুকুল রায়-সহ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সকলেই বিজেপির। এর পরেই মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট কেন্দ্রে কখনও রাজনীতি না করা রূপালীকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেত্রী। লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে গেলে অন্তত পঁচিশ বছর বয়স হতে হয়। রূপালীর এখনও তা হয়নি। তবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে তা হয়ে যাবে।

মঞ্চে রূপালীর এক দিকে ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী রত্না ঘোষ, নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু, রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক সমীর পোদ্দারেরা। অন্য দিকে সত্যজিতের মৃত্যুতে ফাঁকা হওয়া কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো মতুয়া মহাসঙ্ঘের নদিয়া জেলা সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসু ও অন্য পদাধিকারীরা।

সদ্য ঘর ছেড়ে বেরনো রূপালী যে এখনও মঞ্চে তেমন সচ্ছন্দ নন, তা তাঁকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। কখনও মন দিয়ে বক্তাদের কথা শুনছিলেন, আবার কখনও উদাস হয়ে দূরের দিকে চেয়ে। কোন ভাবনায় যেন হারিয়ে গিয়েছেন। ছোট্ট সৌম্যজিৎ ঘুরছিল এর কোলে, তার কোলে। মা যখন সভায় ব্যস্ত, টলোমলো পায়ে মঞ্চের উপর দিয়ে খানিক হাঁটাহাঁটিও করে নিচ্ছিল সে।

মন্ত্রী রত্না ঘোষ বলেন, “সত্যজিৎ আজ আমাদের মধ্যে নেই। মতুয়াদের মাঝে কিন্তু সে আজও আছে। তার অপূর্ণ কাজ শেষ করতেই তার স্ত্রীকে প্রার্থী করেছে দল। ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে সে আপনাদের কাছে এসেছে।” এ কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি রূপালী। বারবার রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায় তাঁকে। জেলা সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু বলেন, “সত্যজিৎ কাজের ছেলে ছিল। সে মানুষের কথা বলত। প্রতিহিংসার কারণে তাকে খুন করা হয়েছে। আপনারা তার স্ত্রীকে কাজ করার সুযোগ দিন।” ছোট্ট সৌম্যজিৎ তখন বিধায়ক সমীর পোদ্দারের কোলে।

শেষে খুব অল্প সময়ের জন্য মাইক ধরে রূপালী বলেন, “ঠাকুর হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে প্রণাম জানাই। বড়মাকে শ্রদ্ধা জানাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করার জন্য আপনারা আমার পাশে থাকবেন।”তাঁর কথা শেষ হওয়া মাত্র মতুয়া রীতিতে হুলুধ্বনি করে ওঠেন সামনে বসে থাকা মহিলারা। সভা শেষ হয়। মঞ্চ থেকে নেমে ছেলে কোলে ফেরার গাড়িতে উঠে যান রূপালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.