মহারাষ্ট্রের পালঘরে সাধুহত্যায় ” ১০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে কেউই মুসলিম নয়”, বললেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী

Spread the love

নিউজ ডেস্ক:- গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের পালঘরে এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে যা দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠে দেশে মানুষ। দুই সাধু ও তাঁদের গাড়ির চালককে রীতিমতো পিটিয়ে মেরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। অনেকেই এই ঘটনাকে ধর্মীয় বিদ্বেষের রূপে দেখছিলেন। কথা উঠেছিল, সাধুদের পিটিয়ে মারার ঘটনার পিছনে থাকতে পারে মুসলমানদের হাত। কিন্তু বুধবার মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় তিন ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যে ১০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউই মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়। তিনি বলেন, এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া উচিত নয়। যাঁরা মারা গিয়েছেন ও যাঁরা আক্রমণ করেছে, তাঁরা সকলেই একই ধর্মালম্বী বলেও তিনি জানান। গোটা ঘটনাটির তদন্তে নেমেছে মহারাষ্ট্র সিআইডির অপরাধ দমন তদন্ত বিভাগ।

“এখনও পর্যন্ত ১০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আমি আপনাদের জানাই যে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের কেউই মুসলিম নয়। সুতরাং এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেবেন না” করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ফেসবুকের মাধ্যমে এই বিবৃতি দেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় দুই ধর্মগুরু এবং তাদের গাড়ি চালককে উন্মত্ত জনতার পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিতে বেপরােয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি নেতারা। করােনা সংক্রমণ মহারাষ্ট্রে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। পাশাপাশি লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় আটকে , তাঁদের খাবার জুটছে না। তা মােকাবিলায় কোনও দায়িত্ব না নিয়ে বিজেপি এই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা করতে নেমেছে বলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অভিযােগ , ধর্মগুরুদের হত্যার ঘটনায় ‘ মুসলিম যােগ’ খুঁজে না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে সিপিআই ( এম ) – কে আক্রমণ করা শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদীরা, যেহেতু পালঘর জেলায় সিপিআই ( এম ) শক্তিশালী। যদিও যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে সেখানের পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপি ’ র। এই ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে , তারাও অনেকেই বিজেপি কর্মী।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীও স্পষ্ট জানিয়েছেন , গুজব থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে । এরমধ্যে কোনও হিন্দু – মুসলিম বিষয় নেই। এই নিয়ে সাম্প্রদায়িক জিগির বন্ধ করার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকেও বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন , অমিত শাহও তাঁকে বলেছেন , এরমধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় নেই। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথকেও একই কথা জানিয়েছেন উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। সােমবার এক ভিডিও বার্তা দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে তিনি যা জানিয়েছেন তাতে স্পষ্ট , লকডাউন ভেঙে ওই ধর্মগুরুরা গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছিলেন গুজরাটের সুরাটে। পালঘর জেলা থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি হয়ে যেতে হয় গুজরাটে। রাতে তাঁদের দাদরা ও নগর হাভেলিতে আটকে দেয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশ।

মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন , “ ওদের উচিত ছিল মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলােচনা করে দিনের বেলা ফেরত পাঠানাের। ” সেটা না করে রাতেই এদের ফেরত পাঠায় দাদরা ও নগর হাভেলি। পালঘর থেকেও ১কিমি দূরে গাডচিঞ্চাল এলাকায় কিছুদিন ধরেই ছেলেধরার গুজব চলছিল। তারপর লকডাউনের মধ্যে সব যখন বন্ধ তখন গভীর রাতে গাড়িতে করে এদের আসতে দেখে সন্দেহ আরও তীব্র হয় মানুষের। উন্মত্ত জনতা তাদের ঘিরে ধরে , বাঁচাতে গেলে পুলিশও আক্রান্ত হয়। উন্মত্ত জনতার হামলার মুখে পুলিশ পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ধর্মগুরুরা সহ গাড়িচালকের মৃত্যু হয়।

এরপরেই বিজেপি মুখপাত্র ডাঃ সম্বিত পাত্র সােশ্যাল মিডিয়ায় সিপিআই ( এম ) – র নামে কুৎসা করেন। তিনি বলেন , ওই এলাকার বিধায়ক সিপিএমের এবং মার্কসবাদী গুন্ডারাই এই কাজ করেছে । সঙ্গে এনসিপি আছে বলেও ইঙ্গিত করেছেন টুইটে। এরপরেই আইটি সেলের উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে যায়। পাশাপাশি। সিপিআই ( এম ) ‘ র বিরুদ্ধে বল্গাহীন কুৎসা চলতে থাকে। সম্বিত পাত্রের টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই ( এম ) পলিট ব্যুরাে সদস্য মহম্মদ সেলিম টুইট করে লেখেন , দাহানুর যে সিপিআই ( এম ) বিধায়ক সম্পর্কে আপনি বলছেন তিনি বিধায়ক তহবিল থেকে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন । এরসঙ্গেই তিনি ডাঃ সম্বিত পাত্রকে তীব্র কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন , আর যদি উনি ডাক্তার হতেন তাহলে এই মহামারীর সময়ে হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করতেন। টুইটারে সাম্প্রদায়িক জিগির না ছড়িয়ে আরেকটি টুইটে সেলিম বলেছেন , পিটিয়ে হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে কঠোর আইন আনার জন্য সিপিআই ( এম ) ২ বছর ধরে সংসদে বলে যাচ্ছে। সেই সময় বিজেপি সাংসদরা রাজনৈতিক লাভের জন্য পিটিয়ে হত্যাকারীদের মদত দিয়েছে এবং মালা পরিয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ ৫জন মূল অভিযুক্ত সহ ১০১জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে ৯জন নাবালক।

ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপি ’ র চিত্রা চৌধুরি ছাড়াও বিজেপি ’ র বেশ কয়েকজন কর্মী । সারা ভারত কিষান সভার সর্বভারতীয় সভাপতি অশােক ধাওলে এই তথ্য উল্লেখ করে বলেছেন , বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র , সুনীল দেওধররা শুধু সাম্প্রদায়িক করছে না , এই হত্যার ঘটনা নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যাচারও করেছে । সিপিআই ( এম ) মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটি এই হত্যাকাণ্ডের কঠোর নিন্দা করে বলেছে , দশ বছর ধরে ওই পঞ্চায়েত বিজেপি জিতছে এবং চালাচ্ছে। ধৃতদের মধ্যে অনেকেই বিজেপি কর্মী। এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চেয়েছে সিপিআই ( এম ) রাজ্য কমিটি। রাজনৈতিক লাভের জন্যেই বিজেপি ঘটনার সাম্প্রদায়িকরণ করছে বলে অভিযােগ করেছেন কংগ্রেস নেতা শচীন সাওয়ন্ত।

উল্লেখ্য, মােদী জমানাতেই দেশে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়া হয়। সংখ্যালঘু এবং দলিতদের আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু করা হয় মূলত গােরুকে ঘিরে। পরে ছেলেধরা গুজবেও বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করা হয়। ঝাড়খণ্ডে ছেলেধরা গুজব রটিয়ে ৬জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। যাদের পিছনে হিন্দুত্ববাদীরাই ছিল। এরপরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেলেধরা গুজবে আক্রমণ ও হত্যা করা হয়েছে।

“কিছু মানুষ ‘মুঙ্গেরিলাল কে হাসিন সপনে’ দেখছেন। এখন রাজনীতি করার সময় নয়, বরং সম্মিলিতভাবে করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়”, একথাও বলেন তিনি।

গণপিটুনির ঘটনায় মারা যান ৭০ বছরের মহন্ত চিকনে মহারাজ ও ৩৫ বছরের সাধু সুশীলগিরি মহারাজ এবং তাঁদের গাড়ির চালক ৩০ বছরের নীলেশ তেলগাদে।

সৌজন্য :- এন ডি টিভি ও গণশক্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.