ডেস্ক:- বাংলায় ওড়িষ্যায় আমফান ঝড় গোটা দেশে করোনা । চলছে লক ডাউন এমতাবস্থায় নতুন করে হানা দিল পঙ্গপাল । অর্থনীতি দিন দিন তলানিতে ঠেকেছে। এবার কি দুভিক্ষের দিকে এগুচ্ছে । চিন্তার ভাজ দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনা আর লকডাউনের জেরে এমনিতেই শিকেয় উঠছে চাষবাস। লোকবলের অভাবে অনেকেই এখনও ফসল ঘরে তুলতে পারনেনি। এমন অবস্থায় দেশের চাষিদের চিন্তা বাড়িয়েছে পঙ্গপালের আক্রমণ। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের পর রাজস্থানের ফসলও ছারখার করতে পঙ্গপাল বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে খবর। জয়পুর ও সংলগ্ন এলাকায় পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যার জেরে মাথায় হাত চাষীদের।
সোমবার জয়পুরের একাধিক এলাকায় পঙ্গপাল তাণ্ডব চালায়। পূর্ব ও পশ্চিম রাজস্থানের প্রায় পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে ইতিমধ্যে। জয়পুর এলাকায় যখন মরু পঙ্গপাল তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেই সময় বারমের, বীরনগর প্রভৃতি এলাকায় গোলাপী পঙ্গপাল হানা দিয়েছে। সবুজ ক্ষেত ও রবিশস্যের দফারফা করেছে তারা। সেই ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও পড়ে। মূলত গত বছর পাকিস্তানে তাণ্ডব চালিয়ছিল এই পঙ্গপালের দল। যার জেরে সে দেশের সিন্ধু প্রদেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে হয়। এবার সীমান্ত পেরিয়ে এসে তারাই এ দেশের একাধিক রাজ্যে ফসলের ক্ষতি করছে।
আগামী কয়েকদিন আরও রাজ্যের ফসলের দফারফা করতে পারে তারা, এই আশঙ্কায় দু চোখের পাতা এক করতে পারছেন না চাষিরা। বহু কৃষকই ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। লকডানের জেরে এমনিতেই বেহাল দশা। তার উপর পঙ্গপালের তাণ্ডবের ফলে ফসলের চূড়ান্ত ক্ষতি হতে পারে। ফলে সারা বছর তাঁদের চলবে কীভাবে, তা ভেবে কূল কিনারা করতে পারছেন না তাঁরা। পঙ্গপাল তাড়াতে রাজস্থানের কৃষি বিভাগ কোমর বেঁধে নেমেছে। পতঙ্গ মারার বিষ, রাসায়নিক স্প্রে করে এই ঝাঁককে তাড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আতঙ্কের নয়া নাম হতে পারে পঙ্গপাল (Locust)। জয়পুর, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে তাণ্ডব চালিয়ে এই পতঙ্গের দল হামলা চালাতে প্রবেশ করেছে মহারাষ্ট্রে। আর একবার প্রবেশ করলে ক্ষেতের পর ক্ষেতে অবলীলায় ধ্বংসের খেলা চালাবে এই ছোট্ট পতঙ্গের দল। সেই চিন্তাই এবার ভাবাচ্ছে মহারাষ্ট্র সরকারকে। চিন্তায় মাথায় হাত কৃষকদের।
একে করোনার দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার সঙ্গে দোসর হল নতুন সমস্যা, পঙ্গপাল। রাজস্থানের পর এই পঙ্গপালের দল হামলা চালিয়েছে উত্তরপ্রদেশ থেকে মধ্যপ্রদেশ। এবার পালা মহারাষ্ট্রের। এই রাজ্যের বিদর্ভ (Vidarbha) জেলা-সহ বাকি ৪টি জেলাতে হামলা চালাতে পারে পঙ্গপালের দল। এই পরিযায়ী পতঙ্গের দলকে নিয়ে তাই অশনি সংকেত দেখছে উদ্ধব ঠাকরের সরকার। রাজ্যের যুগ্ম কৃষি আধিকারিক রবীন্দ্র ভোঁসলে, “মহারাষ্ট্রে অমরাবতী জেলা থেকে এই রাজ্যে প্রবেশ করে। পরে পঙ্গপালের দল ওয়ারধা (Wardha) ও নাগপুরে প্রবেশ করে হামলা চালাবে। কেন্দ্রের তরফ থেকে কীটনাশকের একটি দল বারংবার আমাদের পতঙ্গের গাতিবিধি সম্পর্কে জানান দিচ্ছে। আমরা সেই তথ্য গ্রামের কৃষকদের কাছে পৌছে দিয়ে তাদের সতর্ক করার চেষ্টা করছি। শুধুমাত্র রবি শস্য নয় সবধরণের ফসলের জন্য এই পতঙ্ক অত্যন্ত ক্ষতিকারক।” পঙ্গপাল নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে জেলাগুলিতে। ক্ষেতে ও ফসলের মধ্যে রাসায়নিক স্প্রে করার জন্য একটি বিশেষ দলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক সময় ক্ষেতে দাতবল বাসনের শব্দ করে পতঙ্গের দলকে তাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আপাতত জেলা শাসকের তত্ত্বাবধানে জালালখেদায় রাস্তার ধারে রাসায়নিক স্প্রে করানো হচ্ছে। কারণ এই রাস্তার পাশেই নয়া আস্তানা তৈরি করেছে পঙ্গপাল। রাজ্যের যুগ্ম কৃষি আধিকারিক রবীন্দ্র ভোঁসলে আরও বলেন, “একটাই স্বস্তি যে, এই পতঙ্গের দল রাতে কথনও ক্ষেতে হামলা চালায় না। দিনের বেলাতেই এরা হাওয়ার গতিবেগের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়ে খেয়াল রাখছি।”
দেশের গোবলয়গুলিকে ছুঁয়ে পঙ্গপালের দল উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ হয়ে মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। ছোট্ট পাখায় ভর করে সুদূর দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেও ক্লান্ত নয় পঙ্গপালের দল। অনায়াসেই হামলা চালাতে পৌছে যাচ্ছে একের পর এক রাজ্যে। হাওয়ার অভিমুখে ক্ষতি করছে একের পর এক ফসলি জমি। ফলে ক্রমেই আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনাচ্ছে ।
গোটা বিশ্ব ক্রমশ এক ভয়ঙ্কর বাস্তবের সামনে এগিয়ে চলেছে।
সৌজন্য :- সংবাদ প্রতিদিন