অমিত শাহের মিথ্যা ভাষণ : সোমেন মিত্র, সভাপতি,পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস
ওয়েব ডেস্ক:- বাংলার মানুষের জন্য দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজ্যের জন্য কিছু ঘোষণা হবে ভেবেছিলাম, কিন্তু এত অসত্য ভাষণ আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শুনিনি।
যখন সারা দেশ করোনা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে তখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হঠাৎ দীর্ঘ অন্তর্ধান পর্ব থেকে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ২০২১ সালে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার, তাঁর স্বপ্নের কথা শুনিয়ে গেলেন।
যে দলের মিছিল মিটিংয়ে বাঙালি নেতা – কর্মীর সংখ্যা নেহাত নগণ্য তাঁরা বাংলার জয়ের অলীক স্বপ্ন দেখছে।
বাংলার সম্পর্কে তাঁর যে কোন ধারণাই নেই, সেটা প্রমাণ হল, ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব এবং স্বামী বিবেকানন্দের সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান শুনে। তিনি বললেন, ঠাকুর আর স্বামীজী নাকি হিন্দু ধর্ম পুনরুদ্ধার করেছেন! এই উভয় মহাপুরুষের শিক্ষার ভিত্তি যে সর্বধর্মের সমন্বয় সেই ন্যূনতম জ্ঞানটুকুও যাঁদের নেই, বাংলার মানুষ তাঁদের ভরসা করবেন কি করে?
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলার মানুষ যে আপনাদের মতো গিমিক সর্বস্ব মানুষকে কখনও পছন্দ করেন না সেটাই আপনি জানেন না। যেটুকু দল ভাঙিয়ে লাফালাফি করছেন সেটা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ‘রিটার্ন গিফটের’ জন্য। যেমন নারদ মামলায় টিএমসি সাংসদদের সিবিআই তদন্তের জন্য অনুমতি এখনও স্পিকার দেন নি, সারদা মামলায় প্রভাবশালীদের গ্রেফতারি আটকে রেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং আপনার সাথে দেখা করার পরেই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তদন্ত লাল ফিতেতে বাঁধা পড়েছে।
অমিত শাহ বললেন, বাংলার সরকার তাঁরা ভাঙবেন না কারণ বিজেপি নাকি কোনভাবেই পিছনের দরজা দিয়ে সরকার গড়ে না! জিতেই সরকার বানায়। কর্ণাটক, মেঘালয়, মনিপুর, গোয়া ,অরুণাচল প্রদেশ এবং অধুনা করোনা আবহে মধ্যপ্রদেশ– কোন রাজ্যে আপনাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা ছিল? এই অসত্য কথা শুধু প্রচার আর মিডিয়ার জোরে বাংলার মানুষকে খাইয়ে দেবেন, বাংলার মানুষ কে কি এতই বোকা ভাবেন?
জনধন খাতার প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করলেন কিন্তু এটা বললেন না, কংগ্রেস সরকারের প্রকল্প ‘ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন’-র নাম পাল্টে আপনারা জনধন করেছিলেন।
ব্যাঙ্কের খাতায় সরাসরি টাকা পাঠানোর কাজ কংগ্রেস সরকার শুরু করেছিল। রাহুল গান্ধী বলেছিলেন প্রতিটি জনধন খাতায় অবিলম্বে ১০০০০ টাকা দিতে এবং আগামী ৬ মাস ৭৫০০ টাকা পাঠানোর জন্য। সেই ঘোষণা কোথায়?
সব গরিবের ঘর তৈরির কথা বললেন কিন্তু আপনি ভুলে গেলেন আপনার এবং প্রধানমন্ত্রীর, আমেদাবাদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সময় সেই গরিবের ঘরের করুন দৃশ্য ঢাকতে ইটের প্রাচীর দিতে হয়েছিল!
আপনারা ভাষণ দেবেন পাকিস্তান আসবে না তাও কি হয়?
অমিত শাহজি আমাদের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে দু টুকরো করেছিল যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। পৃথিবীর সব চাইতে বড় সামরিক আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল পাকিস্তানকে, সিমলা চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। আমরা সবটারই কৃতিত্ব দিই দেশের সামরিক বাহিনীকে; নিজেদের ঢাক পেটাই না। আপনাদের সরকারের আমলে কত জওয়ান শহীদ হয়েছেন সেই সংখ্যাটা দিলেন না তো?
আপনার সাহস থাকলে বলতেন চিন ভারতের কতটা সীমান্তে দখল করেছে? চিনা আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে দেশের মানুষ সরকারের অবস্থান জানতে চায়।
চীনা আগ্রাসনে ডোকলামের পরে অধুনা লাদাখ সীমান্তে চিনের দাদাগিরি চলছে সেই সম্বন্ধেও কোন কথা বললেন না।
পরিযায়ী শ্রমিকরা রাস্তায় দুর্ঘটনা এবং অনাহারে মারা গেছেন। ঘরে ফিরে আসার পরে তাঁদের হাতে কোন কাজ নেই।
জনতা কারফিউ, মোমবাতি জ্বালানো, থালা বাজানো আপনাদের কাছে সাফল্য হতে পারে কিন্তু বাংলার মানুষ কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চান, সেটা আপনারা দিচ্ছেন না।
যখন সমীক্ষা বলছে দেশের ঘোষিত করোনা রোগীর সংখ্যার চাইতে সঠিক সংখ্যা কোথাও কোথাও ১০০ থেকে ২০০ শতাংশের বেশি, তখন আপনার এই নির্বাচনী ভাষণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেন। যখন আমফান ঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষগুলো ভাঙা ছাদের তলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর শুধু হেলিকপ্টার দেখলেন, তখন আপনার এই ভাষণ গরিবের কানে পৌঁছবে না। তাঁরা সম্মানের জীবন চান – সেটা দিন, বক্তৃতা পরে শুনব।