এমন কিছু সৎকর্ম আছে, যা করলে পূর্বকৃত সকল পাপ মাপ হয়ে যায়। যেমন-
১। অযু করা
নবী ﷺ বলেছেন, একদা উসমান বিন আফফান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] অযু করার পর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আমার এই অযুর মতো করতে দেখলাম। অতঃপর তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি এরূপ অযু করবে, তার পূর্বকৃত পাপরাশি মাফ করা হবে এবং তার সলাত ও মসজিদের দিকে চলার সাওয়াব অতিরিক্ত হবে”। [মুসলিম ৫৬৬]
যায়দ বিন খালেদ জুহানী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অযু করে, কোন ভুল না করে (একাগ্রচিত্তে) দুই রাকাআত সলাত পড়ে, সেই ব্যক্তির পূর্বেকার সমূদয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়”। [আবু দাঊদ ৯০৫; সহীহ তারগীব ২২১]
২। ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলা
আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, “ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ব্দ্বা-ল্লীন’, বলে তখন তোমরা ‘আমীন’ বলো। কারণ যার ‘আমীন’ বলা ফিরিশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে একীভূত হয়, তার পিছেকার সকল পাপরাশি মাফ হয়ে যায়”। [আহমাদ ৭১৮৭; মালেক ১৯৫; বুখারী ৭৮২; মুসলিম ৯৪৭; আবূ দাঊদ ৯৩৬; নাসাঈ ৯২৭]
অন্য এক বর্ণনা মতে, “ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কারণ, যার ‘আমীন’ বলা ফিরিশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে সাথে হয়, তখন তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ করে দেওয়া হয়”। আরো এক বর্ণনা মতে, “তোমাদের কেউ যখন সলাতে ‘আমীন’ বলে এবং ফিরিশতাগণ আকাশে ‘আমীন’ বলেন, আর পরস্পরের ‘আমীন’ বলা একই সাথে হয়, তখন তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ করে দেওয়া হয়”। [বুখারী ৭৮০-৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২; মুসলিম ৯৪২, ৯৪৪-৯৪৫; আবূ দাঊদ ৯৩২-৯৩৩, ৯৩৫-৯৩৬]
৩। কাওমার দু‘আ বলা
এ ব্যাপারে নবী ﷺ বলেছেন, “যখন ইমাম ‘সামিয়াল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ বলেদ, তখন তোমরা ‘আল্ল-হুম্ম রব্বানা লাকাল হামদ’ বলো। কেননা যার ঐ বলা ফিরিশতাগণের বলার সাথে একীভূত হয়, তার পিছেকার সকল পাপরাশি মাফ হয়ে যায়”। [মালেক ১৯৭; বুখারী ৭৯৬; মুসলিম ৪০৯; আবূ দাঊদ ৮৪৮; তিরমিযী ২৬৭; নাসাঈ ১০৬৩]
৪। রমযানের সিয়াম রাখা
নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে নেকীর আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে, তার অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়”। [বুখারী ৩৮; মুসলিম ১৮১৭]
৫। তারাবীহর সলাত পড়া
নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও নেকীর আশায় রমযান মাসে কিয়াম করবে (তারাবীহ পড়বে), তার পূর্বেকার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [বুখারী ৩৭; ২০০৮-২০০৯; মুসলিম ১৮১৫; আবূ দাঊদ; তিরমিযী; নাসাঈ]
৬। শবে ক্বদরের সলাত পড়া
নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে এবং সাওয়াবের আশা রেখে রমযানের সিয়াম রাখে, তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি শবে ক্বদরে (ভাগ্যরজনী অথবা মহিয়সী রজনীতে) ঈমানসহ নেকীর আশায় কিয়াম করে (সলাত পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [বুখারী ৩৫, ১৯০১, ২০১৪; মুসলিম ১৮১৭]
৭। খাবারের পর নির্দিষ্ট দু‘আ পড়া
নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দু‘আ পড়বে-
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي اَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ
‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা ক্বুউওয়াহ’। অর্থাৎ, সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এটা খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত পাপ মোচন করে দেওয়া হবে”। [তিরমিযী ৩৪৫৮; ইবনু মাজাহ ৩২৮৫]
৮। কাপড় পরার সময় নির্দিষ্ট দু‘আ পড়া
যে ব্যক্তি কাপড় পড়ার শেষে এই দু‘আ পড়বে-
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي، وَلَا قُوَّةٍ
‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসানী হা-যাছ্ছাওবা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা ক্বুউওয়াহ’। (অর্থাৎ, সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রসংসা যিনি আমাকে এটা পড়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত পাপ মোচন করে দেওয়া হবে”। [আবূ দাঊদ ৪০২৩]